একটি শিশু জন্মের ২৮ দিন পর্যন্ত সময়কালকে নবজাতক হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১ লাখ ৫০ হাজার শিশু নবজাতক হিসেবে মৃত্যুবরণ করে। পাশাপাশি মায়ের গর্ভাবস্থার শেষে মায়ের পেটেই মারা যায় আরো লক্ষাধিক শিশু। জীবিত নবজাতকের মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ৪২ জন। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও নবজাতকের মৃত্যুর হার কমানোর জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি এবং সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।
নবজাতকের মৃত্যুর প্রধান কারণঃ
স্বল্প ওজনের শিশু জন্মগ্রহণের ফলে জটিলতা
জন্মের সময় শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে না পারা
সংক্রমণ যেমন সেপসিস, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, ধনুষ্টঙ্কার
প্রসবজনিত জটিলতা
অপরিণত সময়ে প্রসব হওয়ার জটিলতা
সামান্য সচেতনতাই যথেষ্ট আমাদের নবজাতকদের জীবন রক্ষা করতে। প্রয়োজন নেই এর জন্য কোনো উচ্চ মানব প্রযুক্তি। নেই কোনো ব্যাপক খরচের ঝামেলা। সহজসাধ্য যত্ন ও কিছু পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েই আমরা আয়োজন করতে পারি নবজাতকদের নিশ্চিত জীবন।
নবজাতকের জীবন রক্ষায় প্রয়োজনীয় সহজসাধ্য করণী-
প্রসব-পূর্ব যত্নঃ
নিয়মিত বিরতি দিয়ে সন্তান গ্রহণ
সময়মতো টিটি টিকা নিশ্চিত করা
প্রয়োজনীয় পুষ্টি, বিশ্রাম ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা
প্রসবের সময় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া
গর্ভজনিত সময়ে বিপদচিহ্নের সচেতনতা এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ
বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য সচেতনতা এবং পরামর্শ প্রদান
প্রসবকালীন যত্নঃ ষ হাসপাতালে প্রসবের জন্য মা ও পারিবারের সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা
দক্ষ/ প্রশিক্ষিত কর্মী দ্বারা প্রসব করানো নিশ্চিত করা
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন প্রসব নিশ্চিত করা
গর্ভজনিত বিপদ চিহ্নের সচেতনতা এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করা
নবজাতকের তাৎক্ষণিক যত্ন
নবজাতকের নাক-মুখ পরিষ্কার করে দেয়া
শুষ্ক ও উদ্দীপ্ত রাখা
জন্মানোর পরপরই শাল দুধ এবং বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করা
গরম রাখার জন্য নবজাতককে মায়ের কাছাকাছি রাখা
প্রসব পরবর্তী নবজাতক ও মায়ের যত্ন
শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করা
নাভী শুষ্ক ও খোলা রাখা। কোনো কিছু না লাগানো নিশ্চিত করা
নবজাতকের শরীরের তাপমাত্রা খেয়াল রাখা
প্রসব-পরবর্তী মাকে আবার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে চেকআপের ব্যবস্থা করা
গর্ভজনিত বিপদচিহ্নের সচেতনতা এবং ব্যবস্থা গ্রহণ
মায়ের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও বিশ্রাম নিশ্চিত করা
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে নবজাতকদের স্বাস্থ্য রক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ২০১৫ সালের মধ্যে শিশু মৃত্যুর হার অর্ধেকে কমিয়ে আনতে সঙ্কল্পবদ্ধ। পাঁচ বছর বয়সের নিচের শিশুদের মধ্যে অর্ধেকেরই বেশি নবজাতক (প্রথম ২৮ দিন) অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। তাই নবজাতক মৃত্যুর হার কমাতে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া আশু প্রয়োজন।
সূত্রঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত, ০৬ জানুয়ারী ২০০৮
লেখকঃ ডা. ইমনুল ইসলাম
এফসিপিএস, এমডি (শিশু স্বাস্থ্য), শিশু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, কনসালটেন্ট, চাইল্ড এইড, মিরপুর, ঢাকা
Leave a Reply