হাইলাইটস
- সৌম্যর ব্রেক আপের কারণটা আবার আলাদা।
- মিঠাই তাকে বড্ড সন্দেহ করে।
- ওর ভয়ে সবসময় তটস্থ হয়ে থাকতে হত সৌম্যকে।
- রিক আবার বিন্দাস গোছের ছেলে
সখী, ভালোবাসা কারে কয়! সে কি কেবলই যাতনাময়’।
গানটা ভালোই হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎই বিরক্ত হয়ে গান বন্ধ করে করে দিল পাপড়ি। বড্ড বেশি প্যান প্যান লাগছে। আসলে সদ্য সদ্য ওর ব্রেক আপ হয়েছে। কারণটাও খুব তুচ্ছ। সামান্য মনোমালিন্য। তার জন্য সম্পর্কে ইতি হয়ে গেল।
পাপড়ির মতোই সদ্য ব্রেক আপ হয়েছে রিহানার। হোয়াটস অ্যাপে উত্তর দিতে দেরি হয়েছে তাই ব্রেক আপ।
সৌম্যর ব্রেক আপের কারণটা আবার আলাদা। মিঠাই তাকে বড্ড সন্দেহ করে। ওর ভয়ে সবসময় তটস্থ হয়ে থাকতে হত সৌম্যকে।
রিক আবার বিন্দাস গোছের ছেলে। একসঙ্গে বেশিদিন কারও সঙ্গে সম্পর্কের কথা সে ভাবতেই পারে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্লার্ট করে ডেটিং-এর পর আবার নতুন সম্পর্কে বিশ্বাসী সে।
আসলে আজকের প্রজন্ম ভালোবাসতেই জানে না। তাদের হাতে সময়ই নেই। ধৈর্য্য তো দূরের কথা। এখনকার ছেলেমেয়েরা কথায় কথায় ব্রেক আপ করে, ডিভোর্স করে। অথচ ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র দিন আদিখ্যেতার শেষ নেই। দামী উপহার, ফুলের ছড়াছড়ি। ভোরবেলায় পার্কে হাঁটাহাঁটি করার পর এলাকার প্রৌঢ়দের যে আড্ডাটা বসে সেখানেই এসব আলোচনা হচ্ছিল। এঁদের প্রায় সকলের মধ্যেই একটা কমন সম্পর্ক আছে। এঁরা নিজেরা যেমন একে অপরের বন্ধু, তেমনই এঁদের নাতিনাতনিরাও সবাই সবার বন্ধু।
দাদু ঠাকুরমাদের মধ্যে প্রায় প্রত্যেকেই নিজের নাতি বা নাতকিকে ব্রেক আপ চ্যাম্পিয়ন বলে দাবি করে। পিছনে এসব নিয়ে হাসাহাসিরও কমতি নেই। কিন্তু সামনে তাঁরা নাতি নাতনির বেস্টফ্রেন্ড। নীল ষষ্ঠীতে উপোস করার পর শিবলিঙ্গে জল দিতে গিয়েও এরকমই এক ঠাকুরমার মাথায় একটা দারুণ আইডিয়া এল। ঠিক করলে বাড়ি ফিরে নাতনির সঙ্গে একটু প্রেমালাপ করবেন। মানে প্রেম নিয়ে জ্ঞান দেবেন। স্বয়ং মহাদেবই নাকি তাঁকে এই পথ দেখিয়েছেন।
যেমন ভাবা তেমনি কাজ। নাতনি, মানে পাপড়ি যে এখুনি বিরক্ত হয়ে গান বন্ধ করেছিল তাকে ঠাকুরমার প্রশ্ন, আচ্ছা এই ভালোবাসার কোনও চ্যাম্পিয়ন আছে? মানে কোনও নামজাদা প্রেমিক-প্রেমিকাকে চিনিস যাঁদের কোনোদিন ব্রেক আপ হয়নি?
চিনব না কেন, রোমিও-জুলিয়েট, হীর-রানঝা, ল্যায়লা-মজনু, রাধা-কৃষ্ণ অনেকে আছে। ওদের কারও নাকি কোনোদিন ব্রেক আপ হয়নি।
নাতনির থুতনি ধরে ঠাকুমার আদুরে প্রশ্ন ও এইটুকু লিস্ট, তাহলে আসল প্রেমিক প্রেমিকাদের নামটা এখনও জানিস না?
আসল প্রেমিক প্রেমিকা? কারা তারা?
আরও পড়ুন: বিয়ের দিনের একগুচ্ছ ঝামেলা যেভাবে এড়িয়ে যাবেন…
হ্যাঁ, এক্কেবারে আসল? ওই যাঁর কাছে জল ঢেলে এলাম তিনি আর তাঁর স্ত্রী। মানে শিব-পার্বতী। আর তাঁদের প্রেম কাহিনি শুনলে অনেককিছু শিখতে পারবি। কথায় কথায় আর ব্রেক করবি না।
পাপড়ির হাঁ করা মুখ বন্ধ করে ঠাকুরমা শুরু করলেন গল্প।
সত্যিকারের প্রেম
সত্যিকারের ভালোবাসা যদি থেকে থাকে তবে তা শিব পার্বতীর মধ্যেই ছিল। পার্বতী মহাদেবকে এক তরফা ভালোবাসতেন। দেবাদিদেব প্রথমে বিশেষ পাত্তা দেননি। কিন্তু পার্বতীর সরল অনাবিল ভালোবাসা এবং ধৈর্য্যের কাছে পরাস্ত হতে হয় তাঁকে। স্বর্গ থেকে নেমে আসতে বাধ্য হন তিনি। বাবা-ভাইয়ের ঘোর আপত্তি সত্ত্বেও শিবকে বিয়ে করার জেদ থেকে পার্বতী এক পা-ও নড়েননি।
মেড ফর ইচ আদার
শিব ঠাকুরও কম যান না। তাঁর পণ ছিল প্রথম স্ত্রী সতী ছাড়াও কোনোদিন কোনও নারীর প্রতি তিনি আসক্ত হবেন না। সেই জেদ তিনি বজায় রেখেন। স্ত্রী রূপে যাঁদেরই তিনি গ্রহণ করেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই সতীর এক এক রূপ। পার্বতীও ছিলেন স্ত্রীর এক অবতার। মহাদেবের এই মোনোগামি মনোভাব আজকের প্রজন্মের কাছেও শিক্ষণীয়। মা দুর্গার কাছে আজীবন বিশ্বস্ত ছিলেন তিনি।
অনন্ত ভালোবাসা
মহাদেবের মতোই মোনোগামি ছিলেন স্বয়ং মা দুর্গাও। ভিখিরি নেশাখোর কর্মহীন স্বামীকে ছেড়ে বারবার তাঁকে হাতিছানি দিয়েছেন বহু সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। দুর্গা তাঁদের পাত্তাও দেননি। বরং তিরস্কার করেছেন প্রতিবার। একবার স্ত্রীকে পরীক্ষা করার জন্য স্বয়ং শিব এক সুপুরুষের ছদ্মবেশে তাঁকে প্রেম নিবেদন করে। পার্বতীর তিরস্কারের জ্বালায় শেষ পর্যন্ত হার শিকার করতে বাধ্য হন। ফিরে আসেন নিজের আসল রূপে।
মায়ার বাঁধন
পার্বতীই যে তাঁর প্রকৃত শক্তি তা বুঝেছিলেন দেবাদিদেব মহাদেব স্বয়ং। তাই স্ত্রীকে শ্রদ্ধা এবং ভক্তি করতেন তিনি। শিবের পাশে সবসময় দাঁড়িয়েছেন পার্বতীও। একে অপরের পরিপূরক তাঁরা। অর্ধনারীশ্বরের মূর্তি তারই উদাহরণ।
সবসময় পাশেপাশে
পুরাণে আছে যে ভাঙ তৈরি হোক কিংবা লেপ বোনা শিব-পার্বতী একে অপরের কাজে সবসময় সাহায্য করতেন। আবার সাধারণ দম্পতিদের মতো নিজেদের মধ্যে ঝগড়াও করতেন নানা বিষয়ে। কিন্তু একে অপরকে ছেড়ে যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারতেন না। স্বামীর নিন্দা শুনতে না পেরে প্রাণত্যাগ করেছিলেন সতী। আর সতীর মৃত্যুর পর শিবের তাণ্ডবে স্বর্গ-মর্ত-পাতাল কেঁপে উঠেছিল। তাই তাঁদের আলাদা করার কথা কেউ স্বপ্নেও ভাবেন না।
সঙ্গী যদি হতে চাও শিব-পার্বতীর মতো হও। না হলে জীবনে শান্তি পাবে না কোনোদিন। গল্পের শেষে টিপ্পনি কাটলেন পাপড়ির ঠাকুরমা।
টাটকা ভিডিয়ো খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন এই সময় ডিজিটালের YouTube পেজে। সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-04-15 21:46:46
Source link
Leave a Reply