হাইলাইটস
- এটা ছোঁবে না, ওটা ছোঁবে না, আমিষ-নিরামিশ, অত্যাধিক পরিচ্ছন্নতা,
- সবসময় সবকিছুকে অতিরিক্ত ঠিকঠাক গুছিয়ে রাখার ভয়ানক অসুখ।
- এই অসুখের জেরে যে কত সংসারে অশান্তি লেগেছে তার ইয়ত্তা নেই
একসময় গল্প-উপন্যাসে নায়িকা বা কোনও মহিলা চরিত্রের মুখে এই কথাগুলো বসানো ছিল লেখক-সাহিত্যিকদের একটা অভ্যাস। অবশ্য সেই অভ্যাস এমনি এমনি তৈরি হয়নি। নিজেদের আশপাশের মানুষদের রোজকার অভ্যাস, কথাবার্তা, কিংবা ঘটনাগুলিকে খাতার পাতায় তুলে ধরতেন তাঁরা। এখনও হয়। তবে সেটা অন্য স্টাইলে।
বাসি কাপড়ে ছুঁয়ে দিলে যেন মহাভারত অশুদ্ধ হযে যাবে। অশুদ্ধই বটে, আসলে যাঁরা এতকিছুর বাছবিচার করেন তাঁরা চারদিকে শুধু অশুদ্ধই দেখে বেড়ান। আর সেই সব অশুদ্ধতা যেন নিজের শরীরে না লাগে সেটাই হয়ে ওঠে তাঁদের লক্ষ্য। সাদা বাংলায় যাতে বলে শুচিবাইগ্রস্ত। বিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম অবসেসিভ কমপালসিভ পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার।
এটি একটি মানসিক রোগ। এটা ছোঁবে না, ওটা ছোঁবে না, আমিষ-নিরামিশ, অত্যাধিক পরিচ্ছন্নতা, সবসময় সবকিছুকে অতিরিক্ত ঠিকঠাক গুছিয়ে রাখার ভয়ানক অসুখ। এই অসুখের জেরে যে কত সংসারে অশান্তি লেগেছে তার ইয়ত্তা নেই।
আমিষে ঠেকে গেলে সবকিছু অশুচি হয়ে যাবে, সিঁড়ির কোণায় সামান্য ধুলো পড়ে থাকলেও নাকি বাড়ি জুড়ে অসুখের বন্যা বইবে কিংবা গামছাটি ভাঁজ করার সময় কোণায় কোণায় না মিললে দুনিয়াটাই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। শুচিবাইগ্রস্ত বা অবসেসিভ কমপালসিভ পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের (OCPD) রোগীরা এরকমই নানা অদ্ভুদ বিশ্বাসে বিশ্বাসী।
আপনার প্রিয়জনেরও এই রোগ আছে কিনা কী করে বুঝবেন?
সারাক্ষণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার বাতিক, নিজের মনের ভাব সহজে প্রকাশ করতে না পারা, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকা, অত্যাধিক জেদ, সামাজিকভাবে না মেশা, সবসময় উদ্বেগ এবং অবসাদে ভোগা, সবকাজে পারফেকশনের বাতিক, মনের মতো কাজ না হলেই কথায় কথায় রেগে যাওয়ার অভ্যাস থাকলে সাবধান। তিনি হয়তো OCPD-তে ভুগছেন। এই সব রোগীদের বিশ্বাস বিশ্বের সকলে সবসময় ভুল কাজ করে বেড়াচ্ছেন। আর তিনি যেটা করছেন সেটাই শুধু ঠিক।
কী কারণে হয় OCPD?
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই অসুখের প্রকৃত কারণ এখনও অজানা। বিভিন্ন কারণে এই রোগ হতে পারে। ছোটোবেলার কোনও ঘটনার প্রভাব, জিন ঘটিত বা যৌনতা সংক্রান্ত কারণ, একাকীত্ব, অবসাদ সহ বহু কারণ থাকতে পারে। সাধারণত অল্পবয়স থেকেই এই রোগ শুরু হয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগও বাড়ে। আবার ছোটোবেলা থেকে কঠোর নিয়মে বড় হওয়ার কারণেও অনেকে OCPD-র শিকার হন।
যাঁদের রোগের ঝুঁকি বেশি
সদ্য প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সময়ই সাধারণত এই রোগ ধরে। পরিবারেOCPD-র ইতিহাস থাকলেও এই রোগ হয়। ইন্টারন্যাশন ওসিডি ফাউন্ডেশন বা OCDF-এর দাবি সাধারণও মহিলাদের থেকে পুরুষরাই এই রোগের শিকার হন বেশি। মানে আপাত দৃষ্টিতে মহিলাদের মধ্যে ছোঁয়াছুঁয়ির বাতিক চোখে পড়লেও চুপিসাড়ে এই বাতিকে পুরুষরাই বেশি আক্রান্ত। এমনকি বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিশ্বজুড়ে মহিলাদের তুলনায় OCPD-তে আক্রান্ত পুরুষের সংখ্যা দ্বিগুণ। কিন্তু ওই যে বললাম, লোকে এই রোগে কেন আক্রান্ত হন তার সঠিক কারণ আজও জানা যায়নি।
রোগের লক্ষণ
পারফেকশের প্রতি ভয়ানক আকর্ষণ, সবসময় কঠোর নিয়মনীতিতে বিশ্বাস, অত্যাধিক জেদ, অত্যাধিক কিপটেমি, প্রচণ্ড সময়জ্ঞান, প্রতি মক্ষেত্রে অসম্ভব মনোযোগী হওয়া, পরিবার, আত্মীয়স্বজনকে ভুলে, তাঁদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যকে এড়িয়ে গিয়ে শুধুমাত্র নিজের কাজেই ব্যস্ত থাকা, পুরোনো জিনিসপত্র অযথা জমিয়ে রাখা, না পারার আংশঙ্কায় অন্যের দেওয়া কাজ এড়িয়ে যাওয়া, নিজের বিশ্বাস এবং কাজকেই চূড়ান্ত মানা, অন্যের কাজের প্রতি অবিশ্বাস, নিজে অপরিষ্কার থেকেও নিজের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখার অত্যাধিক প্রচেষ্টা, ইত্যাদি এরকম অনেক কিছুকেই OCPD-র লক্ষণ হিসেবে ধরে থাকেন মনোবিদরা।
রোগের চিকিৎসা
*OCPD বা শুচিবাইগ্রস্ততার জন্য বহু পরিবার অশান্তিতে জর্জরিত হয়েছে। সংসার থেকে সুখ পালিয়ে গেছে। পরিবারের সদস্য এই রোগের শিকার হলে বাকিদের আজীবন ভয়ে ভয়ে কাটাতে হয়। তাই এই রোগ সারানোর জন্য প্রয়োজন সঠিক চিকিৎসা।
*এই ভয়ানক রোগ সারানো সবচেয়ে সহজ কোনও মনোবিদের পরামর্শ। সঠিক থেরাপি চললে এবং নিজের মধ্যে সেরে ওঠার মানসিকতা থাকলে বেশ কয়েকটি সেশনের থেরাপি অত্যন্ত প্রয়োজন।
*রোগ ভয়ানক অবস্থায় গেলে ওয়ুধের প্রয়োজন হয়। তখন আর শুধু থেরাপিতে কাজ দেয় না। এক্ষেত্রে কোনও ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
*রিল্যাক্সেশন প্রশিক্ষণও এই রোগ কমাতে সাহায্য়ে করে। এক্ষেত্রেও সঠিক প্রশিক্ষকের খোঁজ করা দরকার।
*প্রয়োজন সচেতনতারও। নিজের বা প্রিয়জনের মধ্যে OCPD-র কোনও লক্ষণ দেখা দিলে নিজের চেষ্টাতেই তা সারানো ভালো। রোগ প্রতিরোধ করলেই রোগের হাত থেকে মুক্তি মেলে।
*আর এর ফলে রোগ পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত পৌঁছোতে পারে না। ভালো এবং সুস্থ হওয়ার কামনাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রোগ শরীর এবং মনে বাসা বাঁধবেই। কিন্তু সচেতন থাকলে সেই রোগ খুব তাড়াতাড়িই শরীর-মন ছেড়ে পালাবে। এই বিশ্বাসটাই রাখতে হবে।
টাটকা ভিডিয়ো খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন এই সময় ডিজিটালের YouTube পেজে। সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন।
Lifestyle News in Bengali, লাইফস্টাইল খবর, Health Tips, Fashion Trends and Tips in Bangla
2021-04-16 16:50:16
Source link
Leave a Reply