ষাটের ঊর্ধ্বে দুজনের বয়স। এখনো তাঁদের দুজনের ভালোবাসায় তরুণেরাও চমকে উঠবে। একদিন বুড়ো পেয়ে গেল শোকের তীব্র আঘাত। তাঁর প্রিয়জন মারা গেল হার্ট অ্যাটাকে। এক সপ্তাহ পার হতে না হতেই তিনিও চলে গেলেন। এ গল্প নয়, সত্যি। সঙ্গীর মৃত্যু যেন তাঁর বুকে শেলের আঘাতের চেয়েও বেশি।
এখন বিজ্ঞানীদের ধারণায় পরিবর্তন ঘটেছে। দুঃখ-বেদনা-শোক কিংবা দুঃসংবাদও দায়ী হৃদরোগের জন্য, তা জানা গেছে। প্রিয়জনের বিয়োগ, মানসিক চাপ ও বিষণ্নতায় কিংবা কোনো বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মানুষের যেকোনো সময় হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এ নিয়ে মনোরোগবিজ্ঞানীরা স্বাস্থ্য ও রোগের সঙ্গে মনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নিজ সন্তানের লাশ কাঁধে বহন করা কিংবা প্রিয়জনের মৃতদেহ সমাহিত করার মতো শোক আর কী আছে। এ ছাড়া মানুষের নানা দুঃখ চাপ ফেলে মনের ওপর প্রচণ্ডভাবে। ফলে হার্ট অ্যাটাক-তারপর হয়তো বা মৃত্যু।
কেন এমন হয়? বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মারাত্মক শোক-দুঃখ অনেকের শরীরে কিছু হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে অ্যাড্রিনালিন হরমোন ও করটিসল স্ট্রেস হরমোন দ্রুত বেড়ে যায় রক্তে। সঙ্গে সঙ্গে হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়। রক্তচাপ প্রচণ্ড বাড়ে। পেশিগুলো টানটান হয়। প্রতিরোধক কোষগুলোও উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। চারদিকের রক্ত চলে আসে মাংসপেশিতে। ফলে রক্তের ঘনত্ব বাড়ে। হঠাৎ জমাট বেঁধে যায়। এ ছাড়া যদি বিভিন্ন ঝুঁকি উপাদানের কারণে হৃদ্যন্ত্র এবং এর রক্তনালিতে ক্ষয় হতে থাকে। সঙ্গে চর্বিও জমতে থাকে ধমনির দেয়ালে। এতে রক্ত চলাচলের পথ হয় সরু। ধমনি শক্ত হয়ে গঠন করে বিপজ্জনক ‘এথারোসক্লেরোসিস’, আর তাতেই অঘটন। এই চর্বি জমা, সরু রক্তনালি আর জমাট রক্ত মিলেই হয় হার্ট অ্যাটাক। তাতেও বেঁচে গেলে, তার পরও যদি বেড়ে যায় শোক-বেদনা-বিয়োগ, বছর বছরই লেগে থাকে বেদনার চিহ্ন-বেড়ে যাবে আরও স্ট্রেস হরমোন। হৃদ্যন্ত্রে ঘটবে বড় বিপত্তি। হরমোনের প্রভাবে
রক্তনালি আরও সংকুচিত হয়। ঘটে হার্ট অ্যাটাক। কারণ, শোক-দুশ্চিন্তা-হতাশা প্রভৃতি নেতিবাচক অনুভূতিই হৃৎপিণ্ডের পেশিতে রক্ত চলাচল কমিয়ে প্রথমে ‘অ্যানজাইনা’, পরে হার্ট অ্যাটাক ঘটায়। তাই শোক-দুঃখ-বিষণ্নতাকে ঠেলতে হবে আড়ালে। মনের চাপ কমাতে হবে হৃদয়ের কোঠায়। ঝেড়ে ফেলতে হবে বিষণ্নতা। মানিয়ে নিতে হবে অতি সহজে, বাস্তবতায়। তাতেই হৃদয় নাচবে তালে তালে।
ডা· এস কে অপু
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
ময়মনসিংহ চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০০৮
Leave a Reply