সমস্যাঃ আমার বয়স ২৬ বছর। ওজন ৫৮ কেজি। দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছি। বুক ধড়ফড় করা, শরীর ঘামা-এসব উপসর্গও আছে। বুকের বাঁ পাশে মাঝেমধ্যে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। মাঝেমধ্যে বুকের ডান পাশেও ব্যথা করে এবং বেশ কয়েক সেকেন্ড পর আর ব্যথা থাকে না। তখন খুব ভালো লাগে। দৌড়াদৌড়ি করলে বুকটা ধড়ফড় করে। অনেক চিকিৎসা করিয়েছি, কিন্তু তেমন কোনো সুফল পাইনি। একবার চিকিৎসকের পরামর্শমতো ইসিজি, এক্স-রে, রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করাই। ইসিজিতে ডব্লিউপিডব্লিউ সিনড্রম ধরা পড়ে। রক্ত ও প্রস্রাবে কোনো সমস্যা নেই। চিকিৎসক আমাকে একটা ওষুধ দেন। এটা সেবন করেও আমি সুস্থ বোধ করছি না। উল্লেখ্য, আমার খাওয়াদাওয়ায় তেমন অনিয়ম নেই, তবে মাঝেমধ্যে চর্বিযুক্ত খাবার বেশ খাওয়া হয়। আমাকে পরামর্শ দিলে খুবই উপকৃত হব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শঃ ডব্লিউপিডব্লিউ (ওল্ফ পারকিনসন হোয়াইট) সিনড্রম রোগীদের হার্টের ইলেকট্রিক্যাল ওয়্যারিং বা লাইনে একটা ‘শর্টকাট বাইপাস চ্যানেল’ থাকে। এটি হার্টের অলিন্দ ও নিলয়ের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে বিদ্যুৎ চলাচলে যে সময় লাগে, এর চেয়ে কম সময়ে ঝটপট ‘কারেন্ট পাস’ করে দেয়। ফলে হার্টের এ দুই কক্ষের মধ্যে স্বাভাবিক যে ‘ইলেকট্রিক্যাল ব্রেক সিস্টেম’ আছে এই বাইপাস চ্যানেল সেটিকে অগ্রাহ্য করতে পারে। ফলে এসব রোগীর মাঝেমধ্যেই হৃৎকম্পন বা বুক ধড়ফড় করার রোগ হতে পারে।
ভেরাপামিল-জাতীয় খাওয়ার ওষুধ এই হঠাৎ শুরু হওয়া বুক ধড়ফড় করা বা সুপরাভেনট্রিকুলার ট্যাকিকারডিয়াকে (এসভিটি) অনেকাংশে আটকাতে পারে। এ ছাড়া নাক-মুখ বন্ধ করে কোলাব্যাঙের মতো বুক ফুলিয়ে দম ফেলার চেষ্টা করলে, যাকে আমরা ‘ভালসালভা ম্যানুভার’ বলি, তাতেও এসভিটি থেকে যেতে পারে। আরেকটি সহজ কিন্তু বিদঘুটে পদ্ধতি হলো, গলায় আঙ্গুল দিয়ে বমি করা।
বমির উদ্রেকের সময় ভেগাস নার্ভ উত্তেজিত হয়ে এসভিটি থামিয়ে দিতে পারে। হাসপাতালে ইনজেকশন এডেনোসিন ভেরাপামিল ব্যবহার করা হয় জরুরি প্রয়োজনে। যাদের এসভিটি বারবার হচ্ছে, তারা ইচ্ছা করলে হার্টের ইলেকট্রিক্যাল লাইনের পরীক্ষা (ইলেকট্রোফিজিওলজিক্যাল স্টাডি বা ইপিএস) করে অ্যাবনরমাল বাইপাস চ্যানেলটি শনাক্ত করে সেটিকে স্থায়ীভাবে ব্লক করে দিতে পারেন রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশনের মাধ্যমে। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল (যাকে অনেকেই ভুল করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল বলে থাকে), সেখানে খুব অল্প খরচে এটি করা হয় নিয়মিত।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা· আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী
সহযোগী অধ্যাপক, কার্ডিওলজি
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০০৮
Leave a Reply