চীনে ভেজাল দুধ খেয়ে গতকাল পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়া শিশুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার। আরও অনেক দেশ চীন থেকে গুঁড়ো দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি তারা বাজার থেকে চীনা দুধ প্রত্যাহার শুরু করেছে। এদিকে চীনে খাদ্যপণ্য উৎপাদন পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত প্রধান কর্মকর্তা গতকাল সোমবার পদত্যাগ করেছেন। খবর এএফপি, এপি ও বিবিসির।
চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, গুঁড়ো দুধ খাওয়ানো হয়েছে, এমন আরও অনেক শিশু অসুস্থ হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত মোট ৫২ হাজার ৮৫৭ জন শিশু হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসে। রাসায়নিক দ্রব্য মেলামাইন মিশ্রিত দুধ খেয়ে এসব শিশু অসুস্থ হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, চিকিৎসা নিতে আসা বেশির ভাগ শিশু প্রাথমিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠছে। তবে ১২ হাজার ৮৯২ জন শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে হাসপাতালে ভর্তি অসুস্থ শিশুর সংখ্যা ছিল ছয় হাজার ২৪৪ জন। ভেজাল দুধ খেয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে চারজন শিশু।
চীনে উৎপাদিত গুঁড়ো দুধ খেয়ে হংকংয়ের তিন বছর বয়সী যে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, তার কিডনিতে ছোট্ট একটা পাথর ধরা পড়েছে। চিকিৎসকেরা বলেন, শিশুটি ভালো আছে। এখনই তার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন নেই। হংকংয়ে প্রিন্সেস মার্গারেট হাসপাতালের একজন মুখপাত্র বলেন, আপাতত কিডনি রোগের কোনো লক্ষণ তার দেহে দেখা যাচ্ছে না বলে অস্ত্রোপচার বা ওষুধ প্রয়োগ ছাড়াই তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে চিকিৎসকেরা শিশুটিকে পর্যবেক্ষণে রাখবেন। কেননা কিডনি থেকে অনেক সময় পাথর এমনিতেই বেরিয়ে যায়।
হংকং সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, শিশুটি ১৫ মাস ধরে প্রতিদিন চীনের ইলি ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রুপ কোম্পানিতে উৎপাদিত দুধ খেয়ে আসছিল। ইলি গ্রুপ কোম্পানি বলেছে, তাদের দুধ খেয়েই শিশুটি অসুস্থ হওয়ার প্রমাণ মিললে তার চিকিৎসার সব খরচ কোম্পানি বহন করবে। হংকং সরকার বাজার থেকে চীনের দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য প্রত্যাহার করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে।
ফ্রান্সের কৃষিমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ার গতকাল বলেন, চীনের দুধে ভেজাল পাওয়ায় ইউরোপকে খাদ্য আমদানির ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষা আরও জোরদার করতে হবে। তিনি বলেন, ‘চীনের দুধ নিয়ে কী হচ্ছে, তা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এর আগে ইউক্রেনের ভেজাল দুধ নিয়ে কী ঘটেছিল, তাও আমরা জানি। সুতরাং দুধ আমদানির ক্ষেত্রে পরীক্ষা করে দেখাটা এখন সামাজিক দাবি।’
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্ক গতকাল বলেন, তাঁর দেশের দুগ্ধজাত প্রতিষ্ঠান ফনটেরা চীনের গুঁড়ো দুধ প্রতিষ্ঠান সানলু গ্রুপ কোম্পানির ৪৩ শতাংশের মালিক। চীনের দুধ নিয়ে যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, সে ব্যাপারে ফনটেরা কিছু বলতে অনেক দেরি করছে। তিনি অভিযোগ করেন, ফনটেরা এ সমস্যা সম্পর্কে অনেক দেরিতে মুখ খোলে।
সিঙ্গাপুরেও চীন থেকে আমদানি করা গুঁড়ো দুধে ভেজাল পাওয়া গেছে। সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের রসায়নাগারে চীনের হোয়াইট র্যাবিট ক্যান্ডিতে বিষাক্ত মেলামাইন পাওয়া গেছে। গত শুক্রবার সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ চীন থেকে দুধ আমদানি ও চীনা দুধ বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে।
সূত্রঃ প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০০৮
Leave a Reply