সারা বিশ্ব জুড়ে কভিড ১৯ প্রজাতির বিশেষ কতগুলি নতুন রূপ দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার ফলে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, যতটা সম্ভব লোককে টিকা দিয়ে দ্রুত herd immunity, অর্থাৎ এই রোগের মোকাবিলায় সামগ্রিক ভাবে একটা প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা এখন অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। Herd immunity তখনই অর্জন করা যায় যখন কোনও জনসংখ্যার পর্যাপ্ত শতাংশ ভ্যাকসিন বা পূর্ববর্তী সংক্রমণের মাধ্যমে, ভাইরাসের বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে, এবং যারা ভ্যাকসিন নেন নি এরকম ব্যক্তিদের সংক্রমণের সম্ভাবনাও অনেক কমে যায়। এ বিষয়ে ভিওএর সংবাদদাতা মারিয়ামা ডায়ালো তার এই প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশে যে সমস্ত ভ্যাকসিনগুলি প্রয়োগ করা হচ্ছে সেগুলি নিয়েই আলোচনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে, তিনটি ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হচ্ছে: ফাইজার/বায়োনেটেক, মোদার্না এবং সাম্প্রতিক সংযোজন জনসন এবং জনসনের একটি ডোজের ভ্যাকসিন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, প্রত্যেকটি কঠোরভাবে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা হয়েছে। এই ভ্যাকসিনগুলি প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু পার্থক্য রয়েছে এবং কোনটি কতটা কার্যকরী তা সম্পর্কেও কিছু বিতর্ক রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য নীতি কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত সেন্টার ফর স্ত্রাটিজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সটাডিস কেন্দ্র থেকে জে স্টিফেন মরিসন বলেন, “এটি খুব বিভ্রান্তিকর হয়ে পড়ে কারণ জনসন এবং জনসনের একটি ডোজের ভ্যাকসিন ৬৬ শতাংশ কার্যকরী বলা হচ্ছে, যেখানে অপর দুটি ভ্যাকসিন অর্থাৎ ফাইজার এবং মোদারনা ৯৫ শতাংশ কার্যকরী। সুতরাং সব মানুষেরই প্রশ্ন হল, মোদর্না বা ফাইজারের টীকা কেন নেব না? এর ‘উত্তরটি হ’ল ভালভাবে ভেবে দেখলে দেখবেন যে, জনসন এবং জনসনের ফিল্ড ট্রায়ালগুলি যখন করা হয়েছিল, তখন করোনাভাইরাসের একটি ভিন্ন প্রজাতির রূপের সংক্রমণ শুরু হয়েছিল যেটি পূর্বের থেকেও ভয়ঙ্কর। সুতরাং যখন আপনার সবথেকে বড় লক্ষ্য হল গুরুতর রোগ এবং মৃত্যুকে প্রতিরোধ করা, তখন এই তিনটিই কিন্তু খুব ভালভাবে এই কাজ সম্পাদন করতে পারবে।”
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নিয়ে তৈরি ব্রিটিশ-সুইডিশ অ্যাস্ট্রাজেনিকা ভ্যাকসিনটি বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয়েছে। তবে সম্প্রতি কিছু ইউরোপীয় দেশ রক্তের জমাট বাঁধার সংক্রমণের আশঙ্কায় ভ্যাকসিনটি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিন সুরক্ষা প্যানেলের দ্বারা গত সপ্তাহে একটি পর্যালোচনা করার পরে, ভ্যাকসিনটি আবারও ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রিইসাস বলেন, “আমরা বিভিন্ন দেশগুলিকে এই গুরুত্বপূর্ণ ভ্যাকসিন ব্যবহার অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছি। অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি কোভ্যাক্স এর মাধ্যমে বিতরণ করা ভ্যাকসিনগুলির ৯0 শতাংশেরও বেশি।” কোভ্যাক্স হল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যাপী একটি উদ্যোগ, যা ভ্যাকসিনগুলির সুষম বিতরণ নিশ্চিত করতে সহায়তা করে, বিশেষতঃ নিম্ন-আয়ের দেশগুলিতে। সাধারণত, বিভিন্ন ধরণের ভ্যাকসিন রয়েছে, কিছু কিছু পুরানো প্রযুক্তিগুলি থেকে তৈরি করা, আবার অন্যগুলি যেমন মডার্না এবং ফাইজার ভ্যাকসিনগুলি মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ)এর মতো নতুন পদ্ধতির প্রয়োগে তৈরি।
জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথ থেকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম জে মোস বলেন,“মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ) এবং অ্যাডেনোভাইরাস ভ্যাকসিনগুলি কিছুটা আলাদাভাবে কাজ করে। পুরো ভাইরাসটির জন্য একটি প্রোটিন ইনজেকশন দেওয়ার পরিবর্তে মূলত আমরা জেনেটিক উপাদান শরীরের অভ্যন্তরে ইনজেকশনের সাহায্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছি, যাতে আমাদের নিজস্ব কোষগুলি স্পাইক প্রোটিন তৈরি করতে পারে এবং তারপরে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।” রাশিয়ার স্পুটনিক ভি এবং চীনের অন্যান্য বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন সহ বিশ্বজুড়ে আরও বেশ কয়েকটি ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে। মিঃ মোস বলেন, যদিও প্রত্যেকটি ভ্যাকসিনেরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তবে এটি খুবই জরুরী যে তারা যেন সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়াগুলি পালন করে।জনস হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথ থেকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম জে মোস আরও বলেন, “রাশিয়ার স্পুটনিক এবং চিনের কিছু কিছু ভ্যাকসিন এই দুইটি সম্পর্কে আমি একটা কথাই বলতে চাই যে, এগুলিকে নিয়ে আমরা যে সমস্যাগুলির মুখোমুখি হয়েছিলাম, তার মধ্যে একটি হ’ল এই যে এদের তথ্য নিয়ে তৃতীয় পর্বে ক্লিনিকাল ট্রায়াল হবার আগেই কিছু কিছু জনগোষ্ঠীতে এই ভ্যাকসিনগুলির প্রয়োগ শুরু হয়ে গিয়েছিল।”
তবে বেশ কয়েকটি দেশ রাশিয়ান এবং চীনা ভ্যাকসিন ব্যবহার করছে, এবং কিছু কিছু দেশের স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা তাদের দেশের মানুষদের আশ্বাস দেওয়ার জন্য নিজেরাই প্রথমে এই টিকাটি নিয়েছেন। সম্প্রতি চীনের ভ্যাকসিন সংস্থা ক্যানসিনোর মত রাশিয়ার স্পুটনিক ভিও অতিরিক্ত তথ্য সরবরাহ করেছে।এখনও অবধি, তাদের দেওয়া সমস্ত তথ্যগুলি অনুযায়ী তাদের টিকাগুলি যথেষ্ট কার্যকরী হিসেবেই ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে।
সেন্টার ফর স্ত্রাটিজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সটাডিস কেন্দ্র থেকে জে স্টিফেন মরিসন বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বড় বাধাগুলির মধ্যে একটি হ’ল উৎপাদন ক্ষমতা। তিনি আরও বলেন সারা পৃথিবী জুড়ে herd immunity আনতে হলে আমাদের ১ হাজার ৪০০ কোটি থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি ভ্যাকসিনের ডোজের প্রয়োজন এবং এটি নিঃসন্দেহে যথেষ্ট বড় একটি সংখ্যা। ”
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, বিশ্বব্যাপী মহামারীর এই সমস্যা মোকাবিলায়, ভ্যাকসিনের একটি বিস্তৃত পোর্টফোলিও রাখা অর্থাৎ নানা ধরণের ভ্যাকসিনের যোগাড় রাখা অবশ্যই একটা খুবই ভাল সিদ্ধান্ত।
স্বাস্থ্য – ভয়েস অব আমেরিকা
2021-04-06 10:00:03
Source link
Leave a Reply