ছোট্টমণি গেছে পোশাক কিনতে। কিনতে চায় নিজের পছন্দমতো। বাদ সাধলেন বাবা-মা। সন্তানের চেয়ে তাঁদের পছন্দকেই প্রাধান্য দিতে চান। কিন্তু শিশুটির চাই নিজের পছন্দের পোশাকটিই। শুধু কেনাকাটা নয়, অনেক ক্ষেত্রেই শিশু তার মতামত প্রকাশ করতে চায়। তবে অভিভাবকেরা তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন না। অনেক সময় তাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্ত সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেন। সে সময় শিশুটি হয়তো তা মেনেও নেয়। কিন্তু এতে শিশুটির ওপর এক ধরনের মানসিক চাপ পড়ে। বড়রা তা বুঝতে পারেন না। এতে করে শিশুর মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয়। বললেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মোহিত কামাল।
তিনি মনে করেন, শিশুরা যে সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়, তাও না। সে ক্ষেত্রে বকাঝকা, রাগারাগি না করে বুঝিয়ে বলতে হবে। সরাসরি ‘না’ বললে তার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। অনেক শিশুর মনে জেদ চেপে যায়। এতে তার মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন আসে। ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য সঠিকভাবে গড়ে ওঠে না। সে জন্য বড়দের কথা বলার ভঙ্গি শিশুর উপযোগী হতে হবে। শিশু যদি কোনো অন্যায় আবদার করে, তার মনকে স্পর্শ করেই তা বুঝিয়ে বলতে হবে। অবশ্যই অভিযোগের ভিত্তিতে নয়। সে যা করছে তা ঠিক নয় এটি যেন সে উপলব্ধি করতে পারে। শিশুকে শারীরিক বা মানসিক কোনো শাস্তি দেওয়াই ঠিক নয়। এতে শিশুর মনে বড়দের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পড়ে। ভবিষ্যতে বড়রা কোনো ভালো কথা বললেও সে শুনবে না। সে জন্য তাকে কিছু বলতে চাইলে কৌশলী হতে হবে। সব শিশুর মানসিক পরিপক্বতা এক রকম নয়। তাই তাদের মন বুঝে কৌশল অবলম্বন করতে হবে। অনেক সময় বিশেষ কোনো কিছুর প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয় এবং তা ধীরে ধীরে আপত্তির পর্যায়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে শিশুকে অন্যদিকে আকৃষ্ট করতে হবে, যেন অন্য কিছুতে সে ব্যস্ত থাকে। শিশুরা অনুকরণপ্রিয় ও সংবেদনশীল। সে জন্য তার আশপাশের মানুষকে সচেতন থাকতে হবে, যাতে তাদের কোনো নেতিবাচক আচরণ সে শিখে না ফেলে। বড়দের রূঢ় কোনো আচরণই তার সামনে যেন প্রকাশ না পায়। এতে সেও বড়দের কথা অমান্য করতে শিখবে, নিজের সিদ্ধান্তকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইবে। সে জন্য অভিভাবক ও সন্তানের মধ্যে সমঝোতা থাকতে হবে। আপনি তার ভালো চান, এটা যেন সে বিশ্বাস করে। এমন নির্ভরশীলতা ও বিশ্বস্ততার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সন্তান কী চাইছে, তা মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত। নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দিয়ে তাদের মত প্রকাশের সুযোগ করে দিন। তাকে দায়িত্বশীল হতে শেখান। এতে করে ভুল কিছু করার প্রবণতা কম থাকবে। খোলাখুলি কথা বলার ক্ষমতা গড়ে উঠবে। আপনার শিশুটিও যে আলাদা সত্তা তা ভুলে যাবেন না। সব সময় তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবেন না। তার মতামতকে শ্রদ্ধা করুন। দেখবেন সেও আপনাকে শ্রদ্ধা করবে। এমন নির্মল সম্পর্ক গড়ে তুলুন, যাতে আপনার সন্তানের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত তো হবেই না, বরং ভবিষ্যতের চলার পথ সুগম হবে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০০৯
Leave a Reply