ইদানিং বাংলাদেশে তো বটেই, বিদেশেও বাংলাদেশী ইমিগ্র্যান্ট পরিবারে, উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে নিজেকে মেরে ফেলার প্রবনতা; তথা সুইসাইড;
এই তো করোনার আগেই, কানাডার টরন্টো তে, ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ছেলেটা, প্রচন্ড বিষন্নতায় ভুগে নানী, মা, বাবা, বোনসহ তিন জেনারেশন খুন করলো; কি ই বা এমন বয়স ছিল ছেলেটার !!
কিছুদিন হল টেক্সাসে ও কানাডার মত, একই ঘটনা ঘটালো, এখানেও তিন জেনারেশন ভিকটিম, সহোদর দুই ভাই, পুরো পরিবার মেরে নিজেরাও মরলো;
কেন এ বিধ্বংসী এটিচ্যুড !!
ইমিগ্র্যান্ট ডাক্তার মা; টিনএজ বাচ্চাদের মা হিসেবে, ব্যাপারটা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে, খুব কাছ থেকে দেখা দেশে বিদেশে, বাংলাদেশি অল্প বয়সি বাচ্চাগুলোর, এমন ধ্বংসাত্বক প্রক্রিয়া, আমাকে সত্যিই ভাবিয়েছে, মর্মাহত, আর ভয়ার্ত করেছে।
প্রতিটা প্রজন্মের মানুষের কাছেই নিজেদের প্রজন্ম সেরা; ঊনআশি পেরুনো বৃদ্ধাকে ঝিজ্ঞেস করলে সেও বলবে, তার সময়কালই সেরা; আমাদের প্রজন্ম তো, নিজেদের সময়টাকেই স্বর্নালী সময় বলে দাবী করবে; ঠিক তেমনি করবে আমাদের সন্তানদের প্রজন্মও; আসলে কোন প্রজন্ম সেরা সেটা নিয়ে বিতর্কে যাওয়াটাই অমূলক; শুধু অমূলকই না, এমন কি গবেষক, ইতিহাসবিদ বা সমাজ বিজ্ঞানীদের কাছেও, এর নিরপেক্ষ পর্যালোচনা রীতিমত কঠিন। প্রজন্ম গুলোর নামকরন নিম্নরূপ:
প্রজন্মের নামকরন
লস্ট জেনারেশন : ১৮৮৩-১৯০০
গ্রেটেস্ট জেনারেশন: ১৯০১-১৯২৭, (মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক টম ব্রোকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূর্যসন্তান ও ভেটেরান্স দের সম্মানার্থে ‘গ্রেটেস্ট জেনারেশন’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। )
সাইলেন্ট জেনারেশন: ১৯২৮-১৯৪৫
বেবী বুমার্স :১৯৪৬-১৯৬৪
এক্স জেনারেশন/ অনিশ্চয়তার প্রজন্ম/ Forgotten middle child : ১৯৬৫-১৯৮০
ওয়াই জেনারেশন/ মিলেনিয়ার: ১৯৮১-১৯৯৬
জি জেনারেশন/ zoomers/ i জেনারেশন : ১৯৯৭-২০১২
জেনারেশন আলফা: ২০১৩- অনওয়ার্ড
জেনারেশনের প্রকারভেদ
দ্বীতিয় বিশ্বযুদ্ধের পর বেবি বুমার্স জেনারেশন ধীরস্হির হয়ে ঘর বাঁধা, কাল্টিভেশন, পশুপালন শুরু করে একটা স্হায়ি নিবাস গড়ার স্বপ্ন দেখে; পাশাপাশি তারা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যত, এজুকেশন, অর্থনীতি নিয়ে ও উদ্বিগ্ন থাকে; তাদেরই ডিসেন্ডড জেনারেশন, এক্স জেনারেশন; অর্থাৎ আমরা, এখনকার টিনএজ সন্তানদের মায়েরা, বাবারা।
এক্স জেনারেশনে (১৯৬৫-১৯৮০ )
আমরা এক্স জেনারেশনরা, অন্তর্বর্তীকালীন সামাজিক সমস্যাগুলি নিয়ে উদ্বিগ্ন থেকেছি; বৈশ্বিক স্নায়ু চাপ, নিউক্লিয়ার থ্রেড, পৃথিবীজুডে অস্হিরতা, উত্তেজনা, ইনসিকিউরিটি সবকিছুই, আমাদের চিন্তা চেতনা আর জীবনবোধ কে প্রভাবিত করেছে, ইতিহাসের সবচেয়ে কঠোর কিছু সামাজিক পরিবর্তন, কলুষিত সামাজিক বিভাজন আমাদের প্রজন্মেই ঘটেছে;
আমরা অনিশ্চয়তার প্রজন্ম ; সিকিউরিটির জন্য আমরা ডাক্তার ইনিজিনিয়ার, বড় অফিসার হয়েছি, সম্পত্তি গড়েছি, ব্যাংক ব্যালেন্স করেছি; কালচারাল প্রাকটিসের উন্নয়ন ঘটিয়েছি নিজেদের নিশ্চয়তার স্বার্থে;
সন্দেহজনক মনোভাব পোষন করা একটা জেনারেশন আমরা; যদিও অন্যান্য জেনারেশন থেকে উচ্চ শিক্ষিত, তথাপি বিশ্ব সমাজের ভাংগন আমাদের ক্রটিক্যালি ভাবতে শিখিয়েছে।
আমাদের সময়ে বিশ্বসমাজ নির্বিচারে বিভক্ত হয়েছে; মানবতা দূয়ারে মাথা ঠুকে মরেছে; পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, আমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কে, ক্ষনে ক্ষনে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দিয়েছে।
জি জেনারেশন (১৯৯৭-২০১২ )
পক্ষান্তরে, আমাদের বাচ্চাদের জেনারেশন, জি জেনারেশন, এই বিশ একুশে যাদের বয়স তেইশ থেকে আট হচ্ছে; তারা বেডে উঠেছে প্রযুক্তি, ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশনে সমৃদ্ধ হয়ে;
পূর্ববর্তী প্রজন্ম থেকে আরো সচেতন হয়ে; মাঝে মাঝে তাদের মাঝে প্রযুক্তি-আসক্তর পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক বা “সামাজিক ন্যায়বিচারের যোদ্ধা” ও জেগে উঠেছে।
এই প্রজন্ম হচ্ছে ইতিহাসে সবচেয়ে কনিষ্ঠ, সবচেয়ে নৃতাত্ত্বিক-বৈচিত্র্যময় এবং বৃহত্তম প্রজন্ম।
এই জি প্রজন্ম কোন কিছুতেই এক্স জেনারেশনের অর্থাৎ তাদের প্যারেন্টদের মত নয়; সমাজ সচেতনতা, চিন্তা চেতনা এমন কি এজুকেশন ভাবনা, কোন কিছুতেই না।
জি প্রজন্ম, কেনা কাটা থেকে শুরু করে, জীবন বোধ বা জীবন সাজাতে, ইন্টারনেটের ইনফ্লুয়েন্সের পরই ফ্রেন্ডসদের গুরুত্ব বেশী দেয়, যা word of mouth marketing নামে ও পরিচিত।
ছাত্রাবস্থায়ই এদের ক্রয় ক্ষমতা থাকে, তাদের চিন্তা থাকে নিজেদের মতো করে কিছু করা। প্রায় অর্ধেক জেনারেশন জি প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা, ব্যবসা করার সুযোগ পেলে, বা নিজের মতো কিছু করার সুযোগ পেলে, চাকরি ছেড়ে দেবে।
তাদের মন-মানসিকতা উদার, বিভিন্ন ধর্ম বা সামাজিক বিষয় নিয়ে, তারা বেশি মাথা ঘামায় না, তারা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের সাথে যুক্ত, তারা পরিবেশ সচেতন।
তারা ফেসবুক বা ই-মেইল নয়, ইন্স্ট্রাগ্রাম বা ইউ টিউবে অভ্যস্ত, অনলাইন শপিং বা ই-ব্যাংকিং এ বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
আমরা, অতি কনজারভেটিভ এক্স জেনারেশনই, আমাদের সন্তান, তথা জি জেনারেশনের দেখভাল করছি; তাই বলে কি করবো না? করবো অবশ্যই করবো; আমরাই তো করবো;
তার আগে আমাদের জানতে হবে, আমরা কতজন বাবা মা, ওদের ইমোশনাল হেল্থ কে মূল্যায়ন করি; ফিজিক্যাল হেল্থের মত মেন্টাল হেল্থ নিয়েও ভাবি; কতজন বাবা মা কাউন্সেলিং জিনিসটা বুঝি; কতজন বাবা-মা কোয়ালিটি টাইম সত্যিকারভাবে বুঝি??
এটা আমাদের অজ্ঞতা, কোন অঘটন ঘটলেই আমরা পরিবারের দোষ দিয়ে দেই; বলি পরিবার খেয়াল করতো না; পরিবারে হারমোনি ছিল না; পরিবারে সমস্যা ছিল; এটা আমাদের পুরনো রোগ; পৃথিবী এখন আর পুরনো জায়গায় থেমে নেই।
কোন পরিবারই বাচ্চাদের ব্যাপারে উদাসিন হয় না; অবহেলা করে না; যতটুকু সম্ভব তাদের সেরাটা দিয়েই সন্তানকে মানুষ করার চেষ্টা করে;
বাবার পাশাপাশি, মায়েরা এখন অনেক ইফোর্ট দেয়, সন্তানদের মানুষ করার জন্যে;
তবে কি সুইসাইড, সমাজিক অজ্ঞতা বা অতিরিক্ত কেয়ারিং মনোভাব, বা কনজারভেটিভনেসের ফল?
ওরা ডিজিটালাইড, ওদের হাতে এখন অনলাইনে বিশ্ব , তথ্য, বন্ধু, লেখাপড়া, চাকরি, ভবিষ্যত সব দিয়ে কি করে ওদের মনিটর করবো?
ওদের বাইরে যেতে হবে না, ঘরে বসেই ওরা বিশাল আড্ডা মারতে পারে বন্ধুদের সাথে, চ্যাট করতে পারবে নিশব্দে;
আমি অতি সাবধানি হয়েও জানতে পারবো না, ওরা কার সাথে মিশছে, কি কথা বলছে? বলবে, পড়াশোনার গ্রুপ স্টাডি করছে; যেমন বলেছিল কলাবাগানে দিহানের আনুস্কা; কতবার চেক দেবো? বেশী চেক দিলে সুইসাইড করবে;
চেক না দিলে উচ্ছন্নে যাবে, কোথাও রেপ্ড হবে বা রেপ করবে; নেশা করে মরবে; ইন্টারনেটের নেশাও মরন নেশা; নীরবে ভয়াবহ রুপে গ্রাস করে ফেলছে আমাদের, উঠতি বয়সি বাচ্চাদের, আমরা বুঝে উঠার আগেই।
সন্তানের খবর নিলে বন্ধুরা তার সাথে মিশবে না, বলবে তোর প্যারেন্ট নাক গলায়, দাদাগিরি করে, বাচ্চাকে তার বন্ধুরা একঘরে করে দিবে; এডিয়ে চলবে, সন্তান হীনমন্যতা আর ডিপ্রেশনে ভুগবে;
বন্ধুরা বলবে তোর পেরেন্ট তোকে সন্দেহ করে; সন্তানের চোখে হয়ে যেতে হবে ডিকটেটর; সন্তান হয়ে উঠবে বেয়াদব বেপরোয়া;
ডিটেক্টিভ হলে সন্তান করবে না পডালেখা, শুনবে না উপদেশ, করবে অভিমান, রাগ, তারপর ভয়াবহ পরিনতি, হয়তো সুইসাইড। চারিদিকে চলছে একটা আনস্ট্যাবিলিটি; একটা অস্হির সময়;
ভূমিকম্পের আফটার ইফেক্টের পর, যেমন স্তরে স্তরে আরো কয়েকটা ঝাঁকুনির পর, ভুমি স্হির হয়; এগুলো অস্হির সমাজের ঝাকুনি; আরো কত কত জীবন যে লস হবে, এ অস্হির সমাজের ঝাকুনিতে কে জানে;
দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ানরা বা ব্রাউন প্যারেন্ট রা, আমাদের সন্তানদেরকে আমাদের ভাবাদর্শে মানুষ করতে চাই, আমরা ভুলে যাই ওরা জী প্রজন্ম, ওদের ধমক দিয়ে বা কঠোর হয়ে শাসন করতে গেলে, হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভবনাই প্রবল থাকে;
জি জেনারেশন মোর কনফিডেন্ট দেন এক্স; আমাদের উচিত ওদের মানসিকতা বুঝে ওদের বিশ্বাসের মূল্য দেয়া, ওদের জেনারেশনের ভাবনাগুলোকে সম্মান করা; ওদের গুডউইলের জন্য ওদের উপর বিশ্বাস রাখা, ওদের ইমোশনাল হেল্থ তথা মানসিক হেল্থের পাত্তা দেয়া।
কিভাবে? কমিউনিকেশন গ্যাপ সিল্ড করে, কাউন্সেলিং, কনভার্সেশন আর কোয়ালিটি টাইম দিয়ে; ওদের চ্যালেন্জগুলো কে নিজের চ্যালেন্জ মনে করে;
এক্ষেত্রে কমিউনিকেশন গ্যাপ বিশাল অংশে দায়ি; আমরা ভাবি, আমাদের বাচ্চার সাথে আমাদের কোন গ্যাপ নেই;
আছে, চব্বিশ ঘন্টার মাঝে কত ঘন্টা আমরা, আমাদের বাচ্চার সাথে এক টানা কথা বলতে পারি? যদি না পারি, তবে এটাই কমিউনিকেশন গ্যাপ।
আমরা ইউজুয়ালি কি কথা বলি; যেমন, ভাল আছো? কেমন আছো? তোমার দিন কেমন গেল? কি খেলে? কোথায় গিয়েছিলে? কি খাবে? নাস্তা করেছো? পড়াশোনা কেমন হচ্ছে ? সবকিছু ঠি ক আছে? স্কুলে গিয়েছিলা? কোচিং এ গিয়েছো? বাসভাডা আছে? লান্চের পয়সা? এররমক হাজারো সব পারপাসিং বা লেকচারিং টাইপ কথা;
সন্তান তো আমার কাছে, পারপাসিং বা লেকচারিং শুনতে চায় না; সন্তান চায় কোয়ালিটি টাইম।
আমরা কয়জন বুঝি কোয়ালিটি টাইম কি?
যখন বাচ্চা আর প্যারেন্ট, সকলেই ঐ সময়টা এনজয় করবে, এবং তেমনি আরেকটা এপিসোড অব টাইমের, জন্য সন্তান এগারলি, অপেক্ষা করবে, সেটাই হবে কোয়ালিটি টাইম;
চব্বিশ ঘন্টায় দশ মিনিট ও আমরা সন্তানের সাথে সেভাবে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করি না, বা করার টপিক পাই না, পারপাসিভ টক ছাড়া।
বন্ধুর সাথে তো, সময় গডিয়ে ঘন্টার হিসেবই থাকে না; দুজনেই এনজয় করি মূহুর্তটা। এটাই কোয়ালিটি টাইম;
বাচ্চারা ভাবে বাবা মা ওল্ড ভার্সন, তাদের ব্যাপারটা বাবা-মা বুঝবে না, বা সহজ ভাবে নিবে না, বা তারা শুনে কষ্ট পাবে,
আরো সহজ করে ব্যাপারটা বলি; বাচ্চার হয়তো কোথাও লাইকিং আছে, অথবা, বাচ্চা ইন্জিনিয়ারিং বা মেডিকেল পড়তে চাচ্ছে না, চান্স পেয়েছে কোয়ালিফাইড হয়েছে তারপরেও বাচ্চা শান্তির জীবন চায় বা এক বছর ইয়ার অফ চায়; নিজের মত নিজের ঝামেলাহীন এডুকেশন চায়, শান্তি চায়।
আমরা মা-বাবারা তখন, ওদের মানসিক ব্যাপারটা পাত্তা না দিয়ে, সোসাইটি তে মুখ দেখানো নিয়ে ভাবি, ওদের ইচ্ছাকে জলান্জলি দিয়ে, নিজেদের ইচ্ছেটাকে ওদের উপর চাপিয়ে দেই;
অথবা, বাচ্চা কোর্স আউট হয়েছে, ওপেন হতে পারছে না; বিষন্নতায় ভুগছে, মেন্টাল হেল্থ নিয়ে স্ট্রাগল করছে, পাত্তা দেই না; বলি সময়ে ঠি ক হয়ে যাবে;
যেটা ঘটেছিল কানাডায়, জামানের তিন জেনারেশন হত্যা করার বেলায়; টেক্সাসে সাথে অবশ্য যুক্ত ছিল সহজলভ্য উইপনও।
টিনএজ সন্তান নিয়ে ইমিগ্র্যান্ট হলে, অনেক বৈরি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়; ইমিগ্রেশন একটা বিশাল ব্যাপার, শিকড় উপড়ে ফেলে নতুন শিকড়ের সার্চ;
বয়সন্ধিকালে বাচ্চাদের হরমোন সার্জ হতে থাকে,
ব্যাক্তিত্বের ফুটি ফুটি করে অনেকটাই বিকাশ হয়ে যায়; তৈরি হয় নিজস্ব ভুবন, আইডেনটিটি;
ঐ বয়সটায়, ওদের মাত্র শিকড গেডে ছডিয়ে বসা, চেনা চারপাশটা থেকে, ওদের কে উপড়ে ফেলে, নতুন পরিবেশ নতুন জায়গায় অভিযোজন করতে বলা, ওদের জন্য বেশ কষ্ট হয়;
নতুন পরিবেশে ওদের চারপাশটা তখন শূন্য হয়ে যায়, প্রবল ভাবে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস আর কালচারাল শকে ভুগে, নিজেকে নীরবে চারপাশ থেকে গুটিয়ে নেয়;
অনেকেই বিষন্নতায় ভোগে, আর তা প্রকাশ ঘটায় বাবা-মা র উপর রাগ, অভিমান বা ননকোঅপারেশনের মাধ্যমে, অনেকের মাঝে সুইসাইডাল টেনডেনসিও প্রবল থাকে।
আমার টিনএজ মেয়েকে নিয়ে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে, আমারও অনেক বেগ পেতে হয়েছে;
ওকে কোয়ালিটি টাইম দিয়ে, ওর ইচ্ছের মূল্যায়ন করতে গিয়ে, ধীরে ধীরে আমাকে হতে হয়েছে অসামাজিক, আমার মেয়ে হয়েছে একটু একটু করে সামাজিক;
ভাগ্যিস ড্রাইভিং টা পারতাম, ও গ্যাদারিং পছন্দ করতো না; দূরে কোথাও লং ড্রাইভে, যেতে যেতে লাউড় ভলিউমে গান শুনতে পছন্দ করতো ও,
লেকের পাডে ঘুরতে চাইতো, পরিবারের সাথে সিনেমা এনজয় করতো, গুগল করে, নতুন নতুন খাবার তৈরি করা শিখতে চাইতো, সারাক্ষন কোয়ালিটি টাইম দিয়ে, বন্ধুর মত ছায়া হয়ে থেকেছি; হয়তো উপরঅলা প্রসন্ন ছিল;
ইমিগ্র্যান্ট প্যারেন্টরা ভাবে, বাচ্চার সাথে ল্যাংগুয়েজ ব্যারিয়ার, বিরাট ইমপেক্ট রাখে কমিউনিকেশন গ্যাপে, যা একেবারেই সত্যি নয়; এটা প্যারেন্টস দের একটা ভুল ধারনা।
কমিউনিকেশন গ্যাপ প্রবলেম আছে, কিন্তু সেটা ভাষায় না কনটেন্টে। তারা কনটেন্টের ব্যাপারে ক্লিয়ার না; লুকোচুরি থাকে তাদের, প্রাচ্য আর পাশ্চাত্তের কনটেন্টের কনসেপ্টে।
মনে রাখতে হবে, content of the communication is main barrier not the language. Content of the communication gap is the huge gap.
বিদেশে জন্ম নেয়া বা বেড়ে ওঠা, ইমিগ্র্যান্ট সন্তাানদের, ঘরে বাইরে প্রতিনিয়ত, বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়;
অনেক চ্যালেন্জিং ইস্যুর মধ্য দিয়ে, তাদের এগুতে হয়;
আছে কালচার, রিলিজন, ল্যাংগুয়েজ আর বিলিভের ঘরে বাইরে অসামন্জস্যের চ্যালেঞ্জ; আছে আইডেন্টিটি ক্রাইসিস আর প্রতি পদক্ষেপে কালচারাল শকের চ্যালেন্জ:
বাচ্চাদের সে সব দেশের নাগরিক হয়েও, বাংলাদেশের কালচার ফলো করতে হয়; এটা যেন জলেই ডুবে আছে, কিন্তু ভিজবে না টাইপের হাস্যকর কিছু; যা ওদের মনোজগতে প্রবল ভাবে ছাপ ফেলে; তারা তো ঐ দেশের ই নাগরিক, এ কথাটা আমরা প্রায়শই ভুলে যাই।
এই চ্যালেঞ্জ টাও সচেতন ভাবে ওভারকাম করা যায় কোয়ালিটি টাইম দিয়েই।
মনে রাখতে হবে মেন্টাল হেল্থ একটা হিলিং প্রসিজুর; ট্রমা শুধু ওষুধেই সারে না। কাউন্সেলিং, কনভার্সেশন, কোয়ালিটি টাইম ও লাগে, খুবই লাগে; এওয়ারনেস এন্ড এজুকেশন অব মেন্টাল হেল্থের, আসলেও কোন বিকল্প নেই;
এ সমস্যা পারিবারিক না; এ সমস্যা সামগ্রিক; এ সমস্যা সামাজিক; সমাজের অস্হিরতার ছাপ পরিবারে এসে পড়ে; ভিকটিম হয় কোমলমতি সন্তানেরা; কোন কোন সময় আমরা ও হারাই নিজেদেরকে, নাড়ী ছেঁড়া কলজের করাল থাবায়;
এখনই সময়, সচেতন হয়ে সমাজ, তথা পরিবার তথা সন্তান দের কে রক্ষা করি সুইসাইডের করাল গ্রাস থেকে; সাথে আমাদেকেও হোমিসাইডের অভিশাপ থেকে, নইলে, নগর পুডলে দেবালয় কি বাঁচেবে !!
লেখক: ডা. ডালিয়া; এম- ২৭
( প্রফেসর এনাটমি; পাবলিক হেল্থ বিশেষজ্ঞ, মেন্টাল হেল্থ এক্সপার্ট ও রিসার্চার, জেরোন্টোলোজিস্ট)
টরন্টো, কানাডা।
এন এ/ ১১ এপ্রিল
স্বাস্থ্য | DesheBideshe
2021-04-11 16:59:26
Source link
Leave a Reply