সারা দেশের সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা সহকারী নিয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। জেলাওয়ারি নিয়োগের হিসাব ঘেঁটে দেখা যায়, কোনো কোনো জেলার সব শূন্যপদ পূরণ করা হয়েছে। আবার কোনো জেলায় খুব কম শূন্যপদ পূরণ করা হয়েছে।
গত মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৩২৪ জন চিকিৎসা সহকারী নিয়োগ দেয়। অধিদপ্তরের পরিচালকের (প্রশাসন) কার্যালয় থেকে পাওয়া কাগজপত্রে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ জেলার ২১টি শূন্যপদে ২১ জনকেই এবার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পুরো সিলেট বিভাগের চারটি জেলার ১৬৯টি শূন্যপদের বিপরীতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মাত্র ১০ জনকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে পাঁচ হাজার ২৫১টি চিকিৎসা সহকারীর পদ রয়েছে। এবারের নিয়োগের আগে ছয় বিভাগে এক হাজার ৯৬৯টি পদ শূন্য ছিল। সবচেয়ে বেশি ৮০টি করে পদ শূন্য ছিল কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ জেলায়। মেহেরপুর জেলায় সবচেয়ে কম, চারটি পদ শূন্য ছিল। এবার কুমিল্লা জেলায় ২০ জন ও ময়মনসিংহ জেলায় ২৩ জন নিয়োগ পেয়েছেন। অথচ মেহেরপুর জেলার চারটি শূন্য পদেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চার হাজার ১০০ টাকার বেতন স্কেলে চিকিৎসা সহকারীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জে ২১টি শূন্যপদ পূরণ করা হলেও পাশের জেলা পাবনায় শূন্যপদ ছিল ৩৩টি, সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ১৫ জনকে। নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণেই এ বৈষম্য হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক পরিচালক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন।
রাজশাহী বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি স্পষ্ট। দিনাজপুর জেলায় চিকিৎসা সহকারীর অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১১৯। শূন্য ছিল ৪৬টি পদ। কিন্তু এবার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মাত্র চারটি পদে। তিন পার্বত্য জেলায় (বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি) অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১৫২। খালি ছিল ৯৫টি। অথচ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পাঁচজনকে।
নিয়োগ কমিটির সভাপতি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ এ কে এম জাহাঙ্গীর চৌধুরী। তিনি এসব পদের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। চূড়ান্ত নির্বাচিত প্রার্থীর তালিকায় এবং বিভিন্ন জেলায় নিয়োগপত্রে তিনিই সই করেন। অনিয়ম প্রসঙ্গে ১৩ সেপ্টেম্বর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাগজপত্র দেখে ১৫ সেপ্টেম্বর জানাবেন। এদিন সকালে যোগাযোগ করা হলে তিনি এক ঘন্টা, দুই ঘন্টা, আধা ঘন্টা করে সময় নেন। রাতে টেলিফোনে জানান, সকালে (১৬ সেপ্টেম্বর) জানাবেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার তিনি তাঁর সহকর্মী উপপরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ রওশান আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। ডাঃ রওশান আক্তার চিকিৎসা সহকারী নিয়োগ কমিটির একজন সদস্য। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসা সহকারীরা তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী। সরকারি নিয়মনীতিতে আছে, নিজেদের বাড়ির কাছে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীরা যেন নিয়োগ পায়, সে বিষয়ে প্রাধান্য দিতে হবে। সে কারণে কোনো কোনো জেলায় সব শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’
একাধিক জেলার সিভিল সার্জন, একজন বিভাগীয় পরিচালক এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা সহকারী নিয়োগে সরকারের এ বিধি শুধু সিরাজগঞ্জ, মেহেরপুর ও পাবনা জেলায় মানা হয়েছে। দেশের বাকি ৬১টি জেলায় মানা হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, অঞ্চলবিশেষে অধিকসংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিতে হবে সরকারের এমন কোনো নীতি নেই। তিনি বলেন, সবধরনের স্বাস্থ্য সূচকে সিলেট বিভাগ পিছিয়ে আছে। এ বিভাগে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার বেশি। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমেও দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অঞ্চল এটি। এ বিভাগেই সরকারের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে নিয়োগের দিকটি প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
শিশির মোড়ল
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০০৮
Leave a Reply