ডাঃ শামস মোহাম্মদ নোমান
জুনিয়র কনসালট্যান্ট, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র, পাহাড়তলি, চট্টগ্রাম
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি কী
আমাদের চোখের পেছনে স্নায়ু দ্বারা তৈরি একটি পর্দা আছে, যাকে আমরা রেটিনা বলি। বস্তু থেকে আলোকরশ্মি চোখের ভেতর ঢুকে ওই বস্তুর প্রতিবিম্ব রেটিনায় ফেলে বলে বস্তুটি আমরা দেখতে পাই। রেটিনা হলো চোখের সবচেয়ে সংবেদনশীল পর্দা, যাতে অল্প একটু সমস্যা হলেই আমাদের দৃষ্টি কমে যায়। বহূদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রোগের কারণে রেটিনার সমস্যাকেই ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি বলা হয়।
কেন হয়
ডায়াবেটিস রোগের কারণে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছোট রক্তনালি সরু ও বন্ধ হয়ে যায়। তেমনি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিক রোগীদেরও চোখের রেটিনার রক্তনালি সরু ও বন্ধ হয়ে যায়। এতে রেটিনায় অক্সিজেনের অভাবে অপুষ্টিজনিত কারণে প্রদাহ তৈরি হয়, নতুন রক্তনালি তৈরি হয়, যা থেকে রক্তপাত হয়, রেটিনায় পানি জমে ফুলে যায়, ভিট্টিয়াসে রক্তপাত হয় এবং পরে রেটিনা আলাদা হয়ে সরে আসে এবং চোখের চাপ বেড়ে গ্লুকোমা রোগ সৃষ্টি করে; অবশেষে রোগী দৃষ্টিহীন হয়ে পড়ে।
লক্ষণ
এ রোগে আস্তে আস্তে (একসঙ্গে অথবা পর্যায়ক্রমে দুই চোখে) দৃষ্টি কমে যায়। রেটিনা সরে আসায় দৃষ্টিসীমানার যেকোনো পাশ কালো দেখা যেতে পারে।
ভিট্টিয়াসে রক্তপাতের কারণে হঠাৎ করে এক চোখ দৃষ্টিহীন হতে পারে।
রেটিনায় পানি জমে ফুলে ওঠায় দৃষ্টি ঝাপসা হতে পারে। চোখের চাপ বেড়ে গিয়ে ব্যথা-বেদনা হতে পারে।
রোগ-প্রতিরোধে কী করবেন
প্রথমত চিকিৎসকের পরামর্শমতো পরিমিত ব্যায়াম ও খাদ্যে অভ্যস্ত হতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনে ওষুধ সেবন করতে হবে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কি না তা দেখার জন্য নিয়মিত রক্তে শর্করার পরিমাণ দেখতে হবে।
প্রতিটি ডায়াবেটিক রোগীকে নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করাতে হবে। ডাক্তার সাধারণত রিফ্র্যাকশন করে চোখের পাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে কি না, স্লিটল্যাম্পের মাধ্যমে ছানিরোগ হলো কি না এবং অফথালমোসকোপের মাধ্যমে চোখের রেটিনা পরীক্ষা করে থাকেন।
যাদের অনেক দিন ধরে ডায়াবেটিস আছে, তাদের রেটিনোপ্যাথি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। যেসব রোগী অল্প বয়স থেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, অর্থাৎ যারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিননির্ভর, তাদের পরে রেটিনোপ্যাথি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এসব রোগীর প্রতি চার মাস অন্তর চোখ পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উত্তম।
প্রতিকার
অবশ্যই ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
যদি চোখ পরীক্ষা করে দেখা যায় রেটিনোপ্যাথি হয়েছে, তাহলে রেটিনার ছবি ও এনজিওগ্রাম করিয়ে নেওয়া ভালো। এতে পরে রেটিনার পরিবর্তন ও রেটিনোপ্যাথির অবস্থান নির্ণয়ে সুবিধা হয়। এনজিওগ্রামের মাধ্যমে রক্তপাত ও ভঙ্গুর রক্তনালির অবস্থান এবং রক্তহীন এলাকা পরিমাপ করা যায়।
রেটিনোপ্যাথির পরিমাণ যদি খুবই সামান্য থাকে তাহলে কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না।
যদি রেটিনায় পানি জমে ফুলে যায়, এনজিওগ্রামের মাধ্যমে সমস্যাযুক্ত রক্তনালি চিহ্নিত করে লেসার চিকিৎসার মাধ্যমে ওই রক্তনালির রক্তপাত বন্ধ করা যায়, অথবা ভিট্টিয়াসে ট্রাইম সিনোলোন এসিটোনাইড ইনজেকশন অথবা এভাসটিন ইনজেকশন প্রয়োগ করেও চিকিৎসা করা যেতে পারে।
যদি রেটিনায় রক্তহীন এলাকা বেশি থাকে অথবা ভঙ্গুর রক্তনালি বেশি তৈরি হয়, তাহলে পুরো রেটিনা (কেন্দ্রীয় রেটিনা ব্যতীত) লেসার রশ্মির সহায়তায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। একে প্যান রেটিনাল ফটোকোয়াগুলেশন বলা হয়।
সূত্রঃ প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০০৮
Leave a Reply