সৌন্দর্যপিপাসু সুন্দরী ললনাদের ক্ষেত্রে মুখের দাগ তাদের হতাশার অন্যতম একটি কারণ। এ ক্ষেত্রে তারা অবিরাম ছুটে চলেন ডাক্তারের পর ডাক্তারের কাছে। খরচে থাকে না তাদের কোনো বাধা, শুধু চাওয়া এ অবস্খা থেকে মুক্তি। কিন্তু সব সময় তা সফল না হওয়ায় বাড়তে থাকে তাদের হতাশা। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের মুক্তি দেয়া বর্তমানে আর অসম্ভব নয়। তবে সেজন্য চাই আধুনিক চিকিৎসা ও তার উপকরণ।
যে দাগ নিয়ে অহরহ তারা সমস্যায় ভোগেন সেগুলো হলো শ্বেতী, মেছতা, ছুলি, সেবোরিক ডার্মাটাইটিস, পিটিরিয়াসিসএলবা, বেভাস, ফিন্সকেল ইত্যাদি। এর মধ্যে মেছতা একটি অন্যতম বিড়ম্বনার কারণ, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে।
মেছতা : এটি মূলত মহিলাদের মুখে কালো দাগের সৃষ্টি করে, তবে পুরুষের ক্ষেত্রেও হতে দেখা যায়। মেছতার বিভিন্ন প্রকার-ভেদ আছে। যেমন-
মেছতা জেনেটিকা, মেছতা ইডিওপ্যাথিকা, মেছতা একটিনিকা, মেছতা কন্ট্রাসেপটিকা, মেছতা কসমেটিকা, মেছতা মেনোপোজাল, মেছতা আয়ারট্রোজেনিকা, মেছতা গ্রেভিডেরাম, মেছতা এন্ড্রোক্রাইনোপ্যাথিকা, মেছতা আয়ারট্রোজেনিকা, মেছতা হেপাটিকা, মেছতা ইউমোনোলজিকাল।
মেছতার চিকিৎসা : MCD(মাইক্রোডার্মোঅ্যাব্রসন) এটি একটি যন্ত্র। ঘূর্ণায়মান ডায়মন্ড ফেন্সইজের মাধ্যমে এটি কাজ করে থাকে। এতে দাগযুক্ত স্খানের অনেকটাই ঘূর্ণায়মান ডায়মন্ডের সাহায্যে তুলে নেয়া যায়। তারপর মেছতার দাগ দূরীকরণে ব্যবহৃত ওষুধ সেখানে লাগাতে দেয়া হয়। সেই সাথে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি যাতে মুখে না লাগে তার জন্য সানস্ক্রিন ক্রিম লাগাতে দেয়া হয়। ফলাফল এক কথায় চমৎকার।
কেমিক্যাল পিলিং : এটি একটি কেমিক্যাল এজেন্ট, যা বিশেষ মাত্রায় প্রয়োগ করে মেছতা দূর করা হয়।
ক্রায়োথেরাপি : এতে এটি ক্রায়ো এজেন্ট যা অতি হিমাঙ্কে প্রয়োগ করা হয়। যাতে প্রথমে ফোস্কা পড়ে এবং কিছুদিন পর চল্টা ধরে শুকনো ফোস্কাযুক্ত ত্বক ঝরে পড়ে যায় এবং সেখানে ভেতর থেকে নতুন ত্বক গজাতে থাকে।
শ্বেতীরোগ : সাদা মানেই শ্বেতী নয়। অনেক কারণেই ত্বক সাদা হতে পারে। তাই সাদা দেখলেই চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যদিও অল্প বয়সী কন্যা বা যুবতীদের শ্বেতী হলে বাবা-মার চিন্তার কারণ হয়। মনে রাখতে হবে, এটি কোনো জীবাণু দিয়ে হয় না। তাই এটি ছোঁয়াচে বা সংক্রামকও নয়। এতে ত্বকের মেলানোসাইট নামক একটি কোষ ধ্বংস হওয়ার ফলে সেখানে রঞ্জক পদার্থ তৈরি হয় না। ফলে ওই স্খানগুলো সাদা হয়ে যায়। স্খায়িত্বের ওপর নির্ভর করে একে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমনঃ
অস্খিতিশীল বা unstable স্খিতিশীল বা stable
এ ক্ষেত্রে ল্যাব পরীক্ষা প্রয়োজন আছে। যার মধ্যে অন্যতম বায়োপসি (Punch Biopsy) ও উডস ল্যাম্ব পরীক্ষা। এর বাইরে V.D.R.L. ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্তের হরমোন পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
শ্বেতী রোগের চিকিৎসা : অস্খিতিশীল শ্বেতীর ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। তা না হলে ক্রমান্বয়ে তা শরীরের বিভিন্ন অংশে বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে একটি বা একাধিক ওষুধ প্রয়োগ করে এর বৃদ্ধি বা ছাড়ানোর প্রক্রিয়া রোধ করা সম্ভব। ফলে শ্বেতী আর বাড়তে পারবে না এবং এর এক পর্যায়ে স্খিতিশীল হলে একে তখন অন্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু করতে হয়। যে সব শ্বেতী স্খিতিশীল বা একই জায়গায় সীমাবদ্ধ তাকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বা ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে একটি বিশেষ পদ্ধতি হলো মিনি পানস্গ্রাফটিং। এটি একটি কসমেটিক চিকিৎসা পদ্ধতি। এতে অপারেশনের মাধ্যমে সুস্খ স্খান থেকে ত্বক এনে শ্বেতীযুক্ত স্খানে প্রতিস্খাপন করতে হয়। আর একটি কথা, শ্বেতীর রোগীকে মনে রাখতে হবে যে, কখনোই যেন Sunlight আক্রান্ত ত্বকে না পরতে পারে। তার জন্য একটি sunscreen লোশন বা ক্রিম সব সময় ব্যবহার করতে হবে।
ফিন্সকল-কালো তিল : অতীতে কেমিক্যাল পেলিং করা হতো। বর্তমানে লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে সাফল্যজনক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। ফিন্সকল বা মুখের কালো তিলযুক্ত রোগীদেরকে একটি পরামর্শ না দিলেই নয়। মনে রাখবেন যাদের মুখে তিল বা ফিন্সকল আছে তারা অবশ্যই সতর্ক থাকবেন যেন মুখে Sunlight না পড়তে পারে। সেজন্য sunscreen হলো একটি অতি উত্তম ও যুগোপযোগী ব্যবস্খা। তা পাওয়া সম্ভব না হলে একটি ছাতার ব্যবহারও আপনার মুখের ত্বককে ভালো রাখতে পারে।
উৎসঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২৫শে নভেম্বর ২০০৭
লেখকঃ ডা. দিদারুল আহসান
চর্ম, এলার্জি ও শারীরিক মিলন বিশেষজ্ঞ, আল-রাজী হাসপাতাল, ১২, ফার্মগেট, ঢাকা।
Tapas Roy
দারি ও গোঁফ গজানোর কোনো ঘরোয়া পদ্ধতির প্রতিবেদন চাই।