মানবদেহে রক্তে যখন হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায় তখন এ অবস্হাকে এনিমিয়া বা রক্তশুন্যতা বলে। রক্তশুন্যতার কারণে মুখের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
(১) জিহ্বায় ঘাঃ রক্তশুন্যতার কারণে জিহ্বায় ঘা হতে পারে। প্রাথমিক রক্তশুন্যতায়ও জিহ্বার স্বাভাবিক রংয়ের পরিবর্তন হতে পারে। রক্তশুন্যতা বেশি হলে জিহ্বায় এট্রফিক প্রদাহ হতে পারে। জিহ্বার রং লাল হয়ে থাকে এবং জিহ্বায় ঘা দেখা দেয়। যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করলে জিহ্বার এ ঘা সহজেই ভালো হয়ে যায়।
(২) মোয়েলারস গ্লসাইটিসঃ প্রাথমিকভাবে ভিটামিন বি ১২-এর অভাবে জিহ্বায় ঘা দেখা যায় এবং জিহ্বায় লাল লাল দাগ দেখা যেতে পারে। এটি সাধারণত জিহ্বার অগ্রভাগে দেখা যায়। কিন্তু এ লক্ষণ খুব কম রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লাল দাগ জিহ্বার উপরিভাগে দেখা যায়। কোনো কোনো সময় লাল ক্ষতের মতো দাগও হতে পারে।
(৩) প্যাটারসন কেলি সিনড্রোমঃ আয়রনের অভাবজনিত কারণে এনিমিয়া বা রক্তশুন্যতায় প্যাটারসন কেলি সিনড্রোম লক্ষ্য করা যায়, তখন জিহ্বায় প্রদাহ বা জ্বালাপোড়া অনুভব হতে পারে।
(৪) ক্যান্ডিডসিসঃ রক্তশুন্যতার কারণে মুখের ক্যান্ডিডসিস রোগ আরো সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। আয়রনের অভাবজনিত রক্তশুন্যতার ক্ষেত্রে ক্যান্ডিডসিসের চিকিৎসায় এন্টিফাঙ্গাল ওষুধের সঙ্গে আয়রন প্রদান করলে দ্রুত রোগ নিরাময় হয়।
(৫) ঠোঁটের প্রদাহ বা চিলাইটিসঃ ঠোঁটের প্রদাহ বা ঠোঁটের কোণায় ঘা রক্তশুন্যতার একটি লক্ষণ, বিশেষ করে আয়রনের অভাবজনিত রক্তশুন্যতার ক্ষেত্রে। কিন্তু অল্পসংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে এরকম হয়ে থাকে। বর্তমানে ঠোঁটের প্রদাহ বা চিলাইটিস হয়ে থাকে সাধারণত সংক্রমণের দ্বারা অথবা ক্যানডিডা অ্যালবিকানস দ্বারা। এ অবস্হায় রক্তশুন্যতা থাকলে রোগটি আরো ছড়িয়ে পড়তে পারে।
(৬) অ্যাপথাস ষ্টোমাটাইটিসঃ রক্তশুন্যতায় মাঝে মাঝে অ্যাপথাস ষ্টোমাটাইটিস বা প্রদাহ হতে পারে। বিশেষ করে ফলেটের অভাবে এমনটি হতে পারে। মধ্যবয়সী বা আরো বেশি বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে ফলেটের অভাব হতে পারে।
সাধারণত আমাদের দেশে আপামর জনসাধারণের মাঝে রক্তশুন্যতার ব্যাপারে একটি ভুল ধারণা রয়েছে। সেটি হলো অনেকেই মনে করেন, রক্তশুন্যতা মানে শরীরে রক্ত কমে যাওয়া। আসলে ব্যাপারটি মোটেও সেরকম নয়। রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলেই ডাক্তারি ভাষায় একে রক্তশুন্যতা বলা হয়। আবার রক্তশুন্যতা থাকলে যে কোনো রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। রক্তশুন্যতায় কখনো ওষুধের দোকানে গিয়ে স্যালাইনের ভেতর রঙিন ভিটামিন ইনজেকশন শরীরে গ্রহণ করলে সঙ্গে সঙ্গে আপনার রক্তশুন্যতা চলে যাবে, এমন ধারণা মন থেকে মুছে ফেলুন। স্যালাইন ইনজেকশন আকারে কেবল তখনই দেওয়া হয়, যখন রোগী মুখে খেতে পারে না বা খেলে সমস্যা দেখা দেয়। অতএব অহেতুক দুর্বলতা বা রক্তশুন্যতায় স্যালাইন ইনজেকশন গ্রহণ না করে সেই টাকায় মুখে খাবার ওষুধ সেবন করুন এবং শাক-সবজি ও ফলমুল খান। তাই আপনাকে মুখের যে কোনো সমস্যায় অবশ্যই সচেতন হতে হবে এবং রোগের সঠিক কারণ নির্ণয় করে ওষুধ সেবন করতে হবে। তবেই অহেতুক দুশ্চিন্তা এবং হয়রানি থেকে আপনি রেহাই পেতে পারেন। এসব সমস্যায় কখনই বিদেশে গিয়ে চিকিৎসার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ আমাদের দেশেই উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্হা বিদ্যমান।
সূত্রঃ দৈনিক আমারদেশ পত্রিকায় ১৭ নভেম্বর ২০০৭
লেখকঃ ডা. মোঃ ফারুক হোসেন
ওরাল অ্যান্ড ডেন্টাল সার্জন
হজরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ.) মিরপুর মাজার শরীফ জেনারেল হাসপাতাল, মিরপুর-১, ঢাকা-১২১৬।
Leave a Reply