মহামারীর সময়ে শরীরচর্চার ক্ষেত্রে সাবধান থাকা উচিত।
শরীর সুস্থ-সবল রাখা, ওজন কমানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করা ইত্যাদিসহ নিয়মিত শরীরচর্চায় আছে আরও অসংখ্য উপকারিতা। একজন স্বাস্থ্যবান মানুষেরও প্রতিদিন কমপক্ষে আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করা প্রয়োজন সেই সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে।
শরীরচর্চা বিভিন্ন ধরনের হয়। করোনাভাইরাসের প্রকোপে সংক্রমণ থেকে বাঁচতে শরীরচর্চার রুটিনে পরিবর্তন এসেছে অনেকেরই।
ব্যায়ামাগার বন্ধ, ঘরের বাইরে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ, ফলে শরীরচর্চা যতটা সম্ভব ঘরে করাটাই শ্রেয়।
বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করে পেশিবহুল শরীর গড়া নয় বরং এই মহামারীর সময়ে শারীরিক পরিশ্রমের মাঝে সুস্থ থাকাটাই জরুরি।
শরীরচর্চা-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের আলোকে জানানো হল এই করোনাভাইরাসের সময়ে ব্যায়াম করার গুরুত্ব এবং করণীয়-বর্জণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ব্যায়াম
ব্যায়াম শরীরের বিপাক ক্রিয়া ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কার্যকর রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও নিয়মিত ব্যায়াম করলে দেহ প্রদাহ থেকে সুরক্ষিত থাকে, বেরিয়ে যায় ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান, ব্যাক্টেরিয়া ও কিছু ভাইরাস। রোগের বিরুদ্ধে লড়াইকারী ‘অ্যান্টিবডি’ এবং শ্বেত লোহিত কণিকার মাত্রাও বাড়ে শরীরচর্চা করলে, যা রোগ থেকে আরও সুরক্ষিত রাখে।
ভারি ব্যায়াম ঝুঁকিপূর্ণ
আমেরিকান কলেজ অফ স্পোর্টস মেডিসিন’য়ের চিকিৎসকদের দাবি, ভারি ব্যায়াম একজন মানুষের কোভিড-১৯’য়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়াতে পারে। তাদের করা এক গবেষণা, যা প্রকাশিত হয় ‘কারেন্ট স্পোর্টস মেডিসিন’ নামক সাময়িকীতে, যেখানে বলা হয়, ভারি ব্যায়াম করার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর বাড়তি চাপ পড়তে পারে, এমনকি দুর্বলও হতে পারে।
ফলে রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। যাদের কোভিড-১৯’য়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলক বেশি তাদেরকে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম হয় এমন ব্যায়াম থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন বিশেষজ্ঞরা।
ঝুঁকি বেশি হওয়ার কারণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারি ব্যায়াম করলে শরীরের ওপর ধকল পড়ে বেশি। এই শরীরচর্চার সময় নিঃসৃত বিভিন্ন হরমোনের মধ্যে কয়েকটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সাময়িক নিষ্ক্রিয় করে কিংবা দমিয়ে রাখে। আর সেই সময়েই যদি কেউ করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে আসে তবে পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে।
অন্যান্য সব উপকারী অভ্যাসের মতো শরীরচর্চায় অতিরিক্ত অনুশীলন করলে তার ক্ষতিকর প্রভাবের শিকার হতে হবে।
করোনাভাইরাসের-কালে যে ব্যায়াম নিরাপদ
ভারি ব্যায়াম বাদ দিতে বলা হলেও পুরোপুরি শরীরচর্চা বাদ দেওয়ার কথা কেউই বলছে না, বরং শারীরিক পরিশ্রমের মাঝে থাকার উৎসাহ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
হাঁটা, দৌড়ানো, উঠবস, বুকডন, ‘স্ট্রেচিং’, দড়িলাফ, ‘প্লাঙ্ক’, সাইকেল চালানো ইত্যাদি মৃদু পরিশ্রমের ব্যায়ামগুলো প্রতিদিন করলেই শরীর যথেষ্ট ফুরফুরে থাকবে।
ব্যায়ামাগারগুলো খুলেছে, সদস্যরা যাচ্ছেনও ব্যায়াম করতে। আপনিও যদি তাদের মধ্যে একজন হন, তবে মনে রাখতে হবে, আপনার নিরাপত্তা সম্পূর্ণ আপনার হাতে। ব্যায়ামাগার কতৃপক্ষ হয়ত কিছু ব্যবস্থা নেবেন, তবে তা কখনই পর্যাপ্ত হবে না।
তাই চেষ্টা করতে হবে যতটা সম্ভব অন্যদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখার।
মাস্ক পরেই ব্যায়াম করা নিরাপদ হবে। সঙ্গে অবশ্যই হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। ব্যায়ামের সরঞ্জাম একাধিক মানুষ ব্যবহার করবে, তাই প্রত্যেকের উচিত হবে ব্যবহারের আগে ও পরে যতটুকু সম্ভব তা জীবাণুমুক্ত করা। ব্যায়ামের আগে ও পরে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
ঘাম মোছার তোয়ালে পুরো সময়টা নিজের হাতে কিংবা ঘাড়ে রাখতে হবে, কোনো সরঞ্জামের ওপর রাখা যাবে না। অসুস্থ হলে ব্যায়ামাগারে যাবেন না।
Leave a Reply