অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আসছে। এই দিবস পালনের অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন এবং এর সদস্য সমিতিগুলো। বেশ কয়েকটি স্টেকহোল্ডারের অংশীদারের মাধ্যমে, অর্থাৎ ডায়াবেটিস সংস্থা বিশ্বজুড়ে এদের সদস্যদের সহযোগিতায় এ দিবসটি পালনের আয়োজন করে।
প্রতিটি অভিযানের কেন্দ্রে থাকে একটি ‘থিম’, যা আইডিএফ নির্বাহী বোর্ড স্থির করে থাকে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন করে থাকে।
এ বছর ২৪ মাসব্যাপী অভিযান শুরু হয়েছে, শিশু ও তরুণদের ডায়াবেটিস নিয়ে থিম বা প্রতিপাদ্য বিষয় বেছে নেওয়া হয়েছে। অভিযানের প্রধান ্লোগান হলো, সতর্কসংকেতগুলো জেনে নিন। আর মূল বাণী হলো, কোনো শিশুর ডায়াবেটিসে মারা যাওয়া উচিত নয়। ‘শিশুদের ডায়াবেটিস ভিন্ন’, ডায়াবেটিস সব বয়সের শিশুকেই আক্রমণ করে।
বিশ্বজুড়ে তরুণদের মধ্যে টাইপ ১ ডায়াবেটিস ও টাইপ ২ ডায়াবেটিস বেড়ে চলেছে। শিশুদের মধ্যে টাইপ ১ ডায়াবেটিস প্রতিবছর তিন শতাংশ হারে বাড়ছে। স্কুলপূর্ব-বয়সী শিশুদের মধ্যে বাড়ছে পাঁচ শতাংশ হারে। প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে ২০০টির বেশি শিশু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। এদের অনেকের জন্য, ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য ঘটনাক্রমে এবং যে আর্থসামাজিক পরিবেশে এদের জ্ন, সে জন্য এ রোগের প্রকোপ হচ্ছে।
বস্তুত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব বিষয়ই এদের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যও নির্ধারণ করছে। টাইপ ২ ডায়াবেটিস শিশু ও তরুণদের মধ্যে বাড়ছে। জীবনযাপনের রীতিনীতির সীমাবদ্ধতা এবং পুষ্টির অভাব থাকায় মনে হচ্ছে, তরুণদের বর্তমান প্রজন্ম এ অবস্থার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির মধ্যে বেড়ে উঠছে। তবু কোনো কোনো দেশে শিশু ও তরুণদের মধ্যে টাইপ ১ ডায়াবেটিসের চেয়ে টাইপ ২ ডায়াবেটিস বেশি রয়েছে।
কোনো শিশুই ডায়াবেটিসে মৃত্যুবরণ করা উচিত নয়
সব তরুণই শৈশব ও বয়ঃসন্ধি সময়ের অভিজ্ঞতা পরিপূর্ণভাবে উপভোগের অধিকার পাবেন, তা-ই তো হওয়া উচিত। তাঁদের ডায়াবেটিসের মতো ক্রনিক রোগ থাকুক বা না থাকুক, পৃথিবীর যেকোনো অঞ্চলে তারা থাকুক, এ অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত থাকা উচিত নয়।
উন্নয়নশীল বিশ্বের সর্বত্র ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অনেক শিশু ইনসুলিন ও অন্যান্য ওষুধ অর্থের অভাবে সংগ্রহ না করায় র্ভোগের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশে ইব্রাহিম মেমোরিয়াল ডায়াবেটিক সেন্টার, বারডেমে একমাত্র অনেক গরিব শিশু তরুণদের বিনামূল্যে ইনসুলিন দেওয়া হয় এবং প্রতিটি ডায়াবেটিক নিবন্ধিত রোগীকে ধনী-গরিব নির্বিশেষে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা এবং অনেক ল্যাবরেটরি টেস্ট বিনামূল্যে করে দেওয়া হয়। পৃথিবীতে এমন ধরনের সেবার দৃষ্টান্ত আর আছে বলে মনে হয় না। তবে রোগী ক্রমে বেড়ে যাওয়ার জন্য সম্পদ ও সহায়ে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, তাই বারডেমকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা সহায়তা-সমর্থন দিলে এ ধারা অব্যাহত থাকবে ভবিষ্যতেও। সরকার বারডেমকে যে অর্থ অনুদান দিচ্ছে, তা প্রয়োজনের প্রেক্ষাপটে বাড়ানো জরুরি।
এমন হচ্ছে যে অনেক শিশু রোগ নির্ণয়ের পরপরই মারা যাচ্ছে, অনেকে তরুণ বয়সে রোগের জটিলতার ভারে ভারাক্রান্ত হচ্ছে। এ বছর আইডিএফ ডায়াবেটিক সব শিশুর সর্বনি্ন স্বাস্থ্যসেবা লাভের অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। নি্ন আয় ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর টাইপ ১ ডায়াবেটিক শিশুদের শোচনীয় পরিণতির প্রতি সাড়া দিয়ে আইডিএফ, ডায়াবেটিস অস্ট্রেলিয়া ও হোপের সহায়তায় সাহায্য কর্মসূচি আয়োজন করছে।
২০০৮ সালের এই অভিযানের প্রধান লক্ষ্য হলোঃ
— ডায়াবেটিসের সতর্কসংকেত সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
— ডায়াবেটিসের একটি জটিলতা ‘ডায়াবেটিক এসিডোসিম’ হ্রাস করার উদ্যোগকে উৎসাহিত করা এবং এসব
উদ্যোগে সমর্থন দেওয়ার জন্য প্রচারপত্র বিতরণ করা।
— আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের লাইফ ফর চাইল্ড কর্মসূচির জন্য যথেষ্ট সম্পদ আকর্ষণ করা।
— স্বাস্থ্যকর জীবন যাপনকে উৎসাহিত করা, যাতে শিশুদের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ হয়।
— ডায়াবেটিস সম্পর্কিত সচেতনতা প্রচারপত্র ১ বিলিয়নের বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো।
গত দুই বছর শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিসের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য ও দিক সম্পর্কে সচেতনতার চেষ্টা চলেছে, এ বছর এর সমাপ্তি ঘটবে। এই দিবসের মূল কথা হলো যে শিশুটি চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসা উপকরণ ও ওষুধের আওতায় আসবে, যে শিশু তার পরিবার ও সমাজের অবলম্বন পাবে, সে শিশুটি বড় হয়ে সমাজের সর্বত্র, সর্বক্ষেত্রে পরিপূর্ণ অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হবে।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১০, ২০০৮
Leave a Reply