ডা· পারভীন শাহিদা আখতার
অধ্যাপক, মেডিকেল অনকোলজি বিভাগ
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা
লিম্ফিডিমা প্রতিরোধে যা করতে হবে
— যেপাশে অপারেশন হয়েছে, সেপাশের সংলগ্ন বাহু বা হাতে সব ধরনের ইনজেকশন, টিকা, রক্ত পরীক্ষার জন্য রক্ত নেওয়া, রক্তচাপ মাপা যাবে না।
— ভারী জিনিস বহন করা যাবে না।
— বগলের নিচ শেভ করার সময় সাবধান হতে হবে, যাতে কেটে না যায়।
— হাত কেটে গেলে বা ছিঁড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ওষুধ ব্যবহার করতে হবে এবং
স্টেরাইল ব্যান্ডেস দিয়ে কাটা স্থান ঢেকে রাখতে হবে।
— আঘাত পাওয়া স্থানে লাল বা ঘা হচ্ছে কি না, তা খেয়াল করতে হবে।
— ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে; বিশেষ করে পোশাকের হাতা যাতে টাইট না হয়।
— হাতের চুড়ি বা ব্রেসলেট যেন হাতে টাইট না হয়। এ ছাড়া অযথা রোদে ঘোরাঘুরি না করা এবং অপ্রয়োজনে রান্নাঘরে সময় না কাটানো। বাহু অথবা হাত লাল হয়ে গেলে, ফুলে গেলে ও গরম অনুভব হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
স্তনের পুনর্গঠন
আজকের দিনে প্রতিটি নারী, ক্যান্সারের কারণে যার স্তন কেটে ফেলা হয়েছে, সেটি তিনি আবার ফিরে পেতে পারেন। স্তন নতুনভাবে তৈরি করে বসানো যায়। একে বলে রিকনস্ট্রাকশন (স্তনের পুনর্গঠন)। স্তনের পুনর্গঠন মাসটেকটমির সঙ্গে সঙ্গেই করা যায় (ইমিডিয়েট রিকনস্ট্রাকশন)। আবার মাসটেকটমির পর আরও একটি তারিখ করেও এ অপারেশন করা হয় (ডিলেড রিকনস্ট্রাকশন)।
সিনথেটিক বা বিভিন্ন বস্তুর সংমিশ্রণে উৎপন্ন বস্তু দিয়ে স্তন পুনর্গঠনে একটি বিষয় উপলব্ধি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে পুনর্গঠিত স্তন স্বাভাবিক স্তনের মতো কার্যকর নয়। শুধু স্তনের আকার-আকৃতি বজায় রাখে, যাতে শরীরের গঠনের তেমন কোনো তারতম্য না থাকে। স্তন পুনর্গঠন একটি অতি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। রোগী যদি তার শরীরের গঠনের স্বাভাবিকতা বজায় রাখা ও ব্যক্তিগত অন্য কারণেও স্তন ফিরে পাওয়ার তাগিদ অনুভব করে এবং তা যদি সম্ভব হয়, তবে সে ইচ্ছার প্রতি সবারই সম্মান দেখানো উচিত।
এ কথা সত্য যে স্তন পুনর্গঠন সবার জন্য নয়। সবার ক্ষেত্রে অপারেশন সম্ভব নাও হতে পারে।
অনেকে আবার কোনো কিছু করতেই পছন্দ করে না অথবা ব্রার ভেতর নকল স্তন পরতে চায়। আপনি যদি স্তন পুনর্গঠনে মন স্থির করে থাকেন, তাহলে মাসটেকটমির আগেই প্লাস্টিক সার্জনের সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত পরামর্শ করে নিলে ভালো হয়। মাসটেকটমির জন্য নির্ধারিত সার্জন ও প্লাস্টিক সার্জন একই সঙ্গে কাজ করলে অপারেশন নির্বিঘ্ন হয় এবং চিকিৎসায় সফলতা আসে। বর্তমান যুগের প্রচলন হলো, যতটা সম্ভব স্তন টিস্যু রক্ষা করে অপারেশন করা। অনেক সার্জন স্তনের ওপর ছোট ছেদন করে স্তন টিস্যু বের করে আনতে শ্রেয় মনে করে। তাতে বেশির ভাগ ত্বক ভালো অবস্থায় থাকে। এটাকে স্কিন স্পেয়ারিন মাসটেকটমি বলে, অর্থাৎ ওপরে ত্বক রেখে ভেতরের পুরো স্তন ফেলে দেওয়া।
অপারেশন অপেক্ষাকৃত সহজ এবং এতে মোটামুটি স্তনের স্বাভাবিক আকার বজায় থাকে। এতে স্তনের আগের স্থানে আবার ক্যান্সার গজিয়ে ওঠার ঝুঁকি আছে, তবে তা খুবই কম ক্ষেত্রে ঘটে থাকে।
বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে স্তন পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত স্তনে নতুনভাবে রিওলা ও বৃন্ত তৈরি করা যায়। এবং এই স্তনের সঙ্গে সমঞ্জস রেখে অন্য স্তনেরও পরিবর্তন করা যায়। নতুন স্তন দেখতে অনেকটা আসল স্তনের মতো হলেও অনুভূতি স্বাভাবিক হয় না। বরং স্তনের ত্বকের অনুভূতি কিছুটা কমে যায় কিংবা হয়ে যায় একেবারেই অনুভূতিহীন। চিকিৎসার আশানুরূপ ফল নির্ভর করে সার্জনের পারদর্শিতা, যথাযথ পদ্ধতি বাছাই, ক্ষত শুকানোর ওপর।
বাহ্যিকভাবে শরীরে লাগানো স্তনাকৃতি ফর্মা (এক্সটারনাল ব্রেস্ট ফর্মা)
অনেকে মাসটেকটমির পর আর কোনো অপারেশন পছন্দ করেন না। তবে শরীরের স্বাভাবিক আকার-আকৃতি বজায় রাখার জন্য বাহ্যিকভাবে লাগানো স্তনাকৃতির ফর্মা বা শরীরে সংযোজিত কৃত্রিম স্তন পাওয়া যায়। কৃত্রিম স্তন বিভিন্ন প্রকার ও রঙের হয়ে থাকে। কিছু বিশেষভাবে তৈরি ব্রার ভেতর আটকানো থাকে। কোনোটা আবার বুকের ত্বকের সঙ্গে বিশেষ ধরনের আঠা দিয়ে আটকানো যায়।
(শেষ)
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১০, ২০০৮
Leave a Reply