ওষুধ নিয়ে কথা
শামীম আলম খান
ফার্মাসিস্ট
বাজারে অনেক ওষুধ আছে, যেগুলো নির্দিষ্ট কোনো রোগের জন্য চিকিৎসক খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আবার পরীক্ষায় প্রমাণিত যে একই ওষুধের নির্দিষ্ট রোগ ছাড়া অন্য ক্ষেত্রেও ভূমিকা রয়েছে। যেমন অ্যাসপিরিন সাধারণত মাথাব্যথায় ব্যবহৃত হয়। তবে এ ছাড়া হার্ট অ্যাটাক, অ্যাকিউট করোনারি সিনড্রোম, অ্যাকিউট এমআইতেও ব্যবহৃত হয় এবং কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে।
অনেক সময় একটি রোগের চিকিৎসায় কোনো ওষুধ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে কিন্তু পরে অন্য ক্ষেত্রে এর উপকারিতা পরিলক্ষিত হয়। যেমন সিলডিনাফিল ফালমোনারি আর্টেরিয়াল হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপে নির্দেশিত হলেও এটি সাধারণত ইরেকটাইল ডিসফাংশন (যৌন রোগ) বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিটা-ব্লকারসগুলো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এগুলো শুধু উচ্চ রক্তচাপই কমায় না, এ ছাড়া অ্যানজাইনা বা বুকে ব্যথা কমায়, হার্ট রেট কমায় ও হার্টের রিদম-বিভ্রান্তি প্রতিহত করে। এ ছাড়া মাইগ্রেন প্রতিরোধ করে। অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ড্রাগ, যেমন এসসিটালোপ্রাম ডিপ্রেসিভ
ডিসঅর্ডার বা বিষণ্নতা চিকিৎসায় চমৎকার উপকার পাওয়া যায়। আবার দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, প্যানিক ডিসঅর্ডার বা ভীতি-সংক্রান্ত রোগ এবং অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডারে ভালো কাজ করে। গাবাপেনটিন নিউরোপেথিক ব্যথায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে আবার বয়স্ক নারীদের হট ফ্লাশ চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে।
আবার কম্বিনেশন ড্রাগ, যেমন লেভোডোপা ও কারবিডোপা পারকিনসনস রোগে (একটি স্মায়বিক গোলযোগ; এর মধ্যে
কাঁপুনি ও পেশির দৃঢ়তার লক্ষণ থাকে) ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আবার পরীক্ষায় প্রমাণিত যে স্ট্রোক-পরবর্তী বাহু অথবা পা প্যারালাইসিস রোগের ফিজিওথেরাপি এবং অন্যান্য ওষুধের পাশাপাশি এই কম্বিনেশন ওষুধ গ্রহণ করলে দ্রুত ভালো হয়।
টোপিরামেট মৃগী রোগ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আবার প্রাপ্তবয়স্কদের মাইগ্রেন প্রতিরোধ করে। স্টেটিন গ্রুপ যেমন অ্যাটোরভাসটেটিন রক্তের কোলেস্টেরল, যেমন এলডিএল, ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়, আবার এইচডিএল বাড়ায়। এটোরভাসটেটিনের এই কার্যকারিতা ও বিভিন্ন গবেষণার ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এটাকে পাঁচটি নতুন নির্দেশনায় অনুমোদন দিয়েছে। যেমন হৃদরোগ, মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ, হৃদ্যন্ত্রের বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের কারণে হাসপাতালে ভর্তি ও বুকের ব্যথার ঝুঁকি কমায়।
মনে রাখতে হবে, একই ওষুধের অনেক গুণাগুণ বা কার্যকারিতা থাকলেও ওষুধগুলো নির্দিষ্ট কোনো রোগের জন্যই চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। কাজেই সুনির্দিষ্ট পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করা উচিত হবে না।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১০, ২০০৮
Leave a Reply