মাসিকের সময় ব্যথা নারীদের একটি প্রচলিত সমস্যা। বিশেষত কিশোরীদের এ সময় কমবেশি ব্যথা হয়। সাধারণত মাসিক শুরু হওয়ার এক দিন আগে কিংবা শুরুর দিনে এ ব্যথা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসার দরকার নেই। তবে ব্যথা অস্বাভাবিক তীব্র হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কিন্তু আমাদের দেশে মাসিক নিয়ে কথা বলতে কিংবা চিকিৎসা গ্রহণ করতে অনেকেই সংকোচ বোধ করেন।
মাসিকের ব্যথা কী এবং কী কী কারণে এটি হতে পারে—এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ডা. শারমিন আব্বাসি বলেন, মাসিকের সময় সাধারণ একটি ব্যথা প্রায় সবারই হয়, যে ব্যথা কারও স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করে না। কিন্তু কারও যদি তীব্র ব্যথা হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কেননা ব্যথার ধরন থেকেই বোঝা যাবে ব্যথা কোন কারণে হচ্ছে। যেমন কেউ কেউ বলেন, তাদের ব্যথা শুরু হয় মাসিকের দুই থেকে তিন দিন আগে এবং ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে।
যখন মাসিক শেষ হয়ে যায় তখন ব্যথা আরও তীব্র হয়। এমন ব্যথা হলে বুঝতে হবে এটি এন্ডোমেট্রিওসিসের ব্যথা। অনেক সময় জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের অসুখের কারণে এমন তীব্র ব্যথা হয়ে থাকে। তখন আরও কিছু উপসর্গ যোগ হতে পারে। যেমন ব্যথার ধরনে পরিবর্তন, হঠাৎ কোনো মাসে তীব্র ব্যথা বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দিন ধরে ব্যথা, মাসিকের বেশ কিছুদিন আগে থেকে ব্যথা এবং মাসিকের প্রায় পুরো সময়, অনিয়মিত মাসিক, মাসিকের সময় ছাড়াও অন্য সময় তলপেটে ব্যথা ইত্যাদি।
ডা. শারমিন আব্বাসি এন্ডোমেট্রিওসিসের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, মাসিকের সময় অসহ্য ব্যথার অন্যতম কারণ এন্ডোমেট্রিওসিস। পৃথিবীজুড়ে প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে ১ জন এ সমস্যায় ভোগেন। বিশেষ দিনগুলোতে অসহ্য ব্যথা আর খারাপ লাগার এ সমস্যাকে অনেক নারীই লুকিয়ে রাখেন। কখনোই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না।
বিশ্বে প্রায় ২০ কোটি রোগী রয়েছে এন্ডোমেট্রিওসিসের। বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ রোগীর এ সমস্যা রয়েছে। এটি এমন এক সমস্যা, যার জন্য সবাই মিলে একটি সচেতনতার প্ল্যাটফর্মে কাজ করা উচিত। যদিও আমরা বেশ কয়েক বছর এটি নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি।
মাসিক শুরুর পর থেকে যেকোনো বয়সে একজন নারী এই সমস্যায় ভুগতে পারেন। স্কুলগামী কিশোরী, বিবাহিতা কিংবা মেনোপজের কাছাকাছি বয়সী—যেকোনো সময়ই এটি হতে পারে। এর কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা, মাসিকের সময় অত্যধিক রক্তক্ষরণ, সহবাসে ব্যথা, প্রস্রাব বা মলত্যাগে ব্যথা, পিরিয়ড চলাকালে স্কুল-কলেজ বা অফিসে অনুপস্থিতি, বন্ধ্যত্ব ইত্যাদি। এই রোগের বিষয়ে বেশ কিছু জিনিস জানতে হবে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা বিষয়টি চেপে রাখেন। এ কারণে রোগটি শনাক্ত হতে প্রায় সাত-আট বছর সময় লেগে যায়। মাসিকের সময় ও রকম একটু-আধটু ব্যথা হয়ই, এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই, এমন ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিবাহিতদের ক্ষেত্রে ৩৫ বছরের আগেই সন্তান নেওয়া ভালো। আজকাল মেয়েরা অনেক বেশি ক্যারিয়ার সচেতন হওয়ায় বিয়ে করতে দেরি করে ফেলেন। সেই সঙ্গে সন্তান গ্রহণেও দেরি হয়ে থাকে। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি, যাতে সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করা যায়। ক্যারিয়ার গড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনটাও যাতে সুন্দরভাবে গড়ে নেওয়া যায়।
এন্ডোমেট্রিওসিসের চিকিৎসা নিয়ে ডা. শারমিন আব্বাসি বলেন, এই রোগের চিকিৎসা শুরু করার আগে যথাযথ কাউন্সেলিং জরুরি। এন্ডোমেট্রিওসিসের চিকিৎসা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। অনেক সময় রোগীরা চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও হতাশ হয়ে পড়েন। সবচেয়ে জরুরি নিয়মিত চেকআপ। কারণ, চিকিৎসার ফলে একবার ভালো হলেও নতুন করে আবার হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রাথমিকভাবে রক্ত বেশি ভাঙলে ট্রানেক্সামিক অ্যাসিড জাতীয় ওষুধ উপকারী। জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল একটানা কয়েক মাস খেলেও অনেকে ভালো উপকার পায়। কখনো কখনো গোনাডোট্রোপিন রিলিজিং হরমোন অ্যানালগজাতীয় ইনজেকশন মাসে একবার করে দিতে হয়। ওষুধে কাজ না হলে অপারেশন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপি বেশি কার্যকর। একবার অপারেশন করলেও এটা আবার নতুন করে হতে পারে।
ওভারিতে এন্ডোমেট্রিওসিস হলে ডিম্বাণুর রিজার্ভ কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। একবার ভালো হয়ে গেলেও আবার এন্ডোমেট্রিওসিস হতে পারে। যত দিন মাসিক হবে, তত দিন পর্যন্ত হতে পারে, এটা রোগী ও তার পরিবারকে জানাতে হবে। ঠিকমতো চিকিৎসা ও নিয়মিত ফলোআপে এন্ডোমেট্রিওসিস থেকে ভালো থাকা যায়, তাই এর ফলোআপ জরুরি।
সূত্র – প্রথম আলো
md sojib
meyeder lojjasthaner nicher dik chulkanor karon ki?eta ki kono rog?
Bangla Health
পরিষ্কার রাখতে হবে। আর যেন চামড়া বেশি শুষ্ক না হয়ে যায়। ভালো লোসন বা তেল মাখতে হবে। এত না কমলে কোনও খাবারে এলার্জি আছে কি না, বা অন্য কোনও সমস্যা আছে কি না সেটা ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে।
রানা
আসসালামু আলাইকুম, আমার ওয়াইফের গত 6 মাস ধরে মাসিকের সময় টা যোনিপথে ব্যাথা করে এক সপ্তাহের মতো থাকে। এখন সে বুঝতে পারতেছেনা এটা কি রোগ নাকি শুধু মাসিকের জন্য এরকমটা হয় ডক্টর প্লিজ জানাবেন। সুস্বাস্থ্য কামনা করি ধন্যবাদ।