দীর্ঘ ১১ বছর ধরে আমার ডায়াবেটিস। মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে থাকে, তবে মাঝেমধ্যে ১০ মিলিমোলের বেশি হয়। আমার সমস্যা রাতের বেলা পায়ের তলা জ্বলে ও ঝিঁঝিঁ করে। পা কামড়ায়। সমাধান কী?—শ্যামলী সাহা, মিরপুর, ঢাকা
এর নাম ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি। দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস থেকে হাত–পায়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে এমন ঘটে। এ থেকে রেহাই পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তিন মাসের গড় এইচবিএ১সি ৭-এর কম হলে বুঝবেন নিয়ন্ত্রণে আছে। এ ছাড়া পায়ের জ্বালা কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শে গাবাপেনটিন, প্রিগাবালিন, এমিট্রিপটাইলিন ইত্যাদি ওষুধ সেবন করতে পারেন। নিয়মিত পায়ের যত্ন নিতে হবে। পায়ের অনুভূতি কমে গেলে ব্যথা, সংক্রমণ, ফোসকা ইত্যাদি টের পাবেন না, তাই রোজ পা পরীক্ষা করুন। আরামদায়ক জুতা পরুন।
আমার মায়ের বয়স ৫৫ বছর। ডায়াবেটিসের রোগী। প্রায় তিনি পেটের সমস্যায় ভোগেন। যেমন পেট ফোলা, বদহজম, পেট কামড়, ডায়রিয়া ইত্যাদি সমস্যায় পড়েন। কী করা উচিত?—আনিসুর রহমান
দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিসের রোগীদের অটোনমিক নিউরোপ্যাথি বা স্নায়ুজনিত জটিলতার কারণে এমন হয়। অন্ত্রের স্বাভাবিক চলাচল ও সংকোচন–প্রসারণে বিঘ্ন ঘটে। ফলে সামান্য খেলেই পেট ফাঁপা, কখনো ডায়রিয়া কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য এমন হতে পারে। আবার ডায়াবেটিসের রোগীরা যেসব ওষুধ সেবন করেন, তার মধ্যে কিছু এমন পেট ফাঁপা ও বদহজম করতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে ভাগ করে খাওয়া, যেসব খাবার হজমে সমস্যা হয়, সেসব এড়িয়ে চলা, খেয়ে সঙ্গে সঙ্গে না শোয়া ইত্যাদি। উপসর্গ কমানোর জন্য কিছু ওষুধ খাওয়া যায়। আবার কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এমন হচ্ছে কি না, তা–ও জানা দরকার। আপনি আপনার ডায়াবেটিসের চিকিৎসককে সমস্যাগুলো বলুন।
আমি ডায়াবেটিসের রোগী। দুবেলা ইনসুলিন নিই। মাঝেমধ্যে দুপুরের দিকে সুগার নেমে যায়। তখন বুক ধড়ফড় করে, ঘাম হয়, মাথা হালকা হয়ে যায়। এ জন্য প্রায়ই চিনি খেতে হয়। তারপর আবার সুগার বেড়ে যায়। এ থেকে পরিত্রাণ কী?—আবদুল মতিন, পাবনা
সুগার কমে যাওয়া বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার কারণটি আগে দূর করুন। সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণে না খাওয়া এর অন্যতম কারণ। যাঁরা ইনসুলিন নেন, তাঁদের দিনে অন্তত ছয়বার খাবার গ্রহণ করা উচিত। সকালে নাশতার পর ১১টা থেকে ১২টায় ফল বা হালকা নাশতা খাবেন, তাহলে দুপুরে সুগার অতিরিক্ত কমে যাবে না। আবার বিকেলে ও শোবার সময় আরও দুবার নাশতা খাবেন। দুপুরের দিকে হাইপো হলে আপনার চিকিৎসককে বলে সকালের ইনসুলিনের মাত্রা একটু কমিয়ে নিতে পারেন। আবার কিছু আধুনিক ইনসুলিন আছে যাতে হাইপো কম হয়, সেগুলো নিতে পারেন। কিডনি ও যকৃতের সমস্যায় বারবার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়। এগুলো পরীক্ষা করে নিন। মনে রাখবেন বারবার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়া ভালো নয়। এতে মস্তিষ্কের নিউরনের ক্ষতি হয়, স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয় আর হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে। পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা হতে পারে। হাইপোগ্লাইসেমিয়া যাতে না হয়, সেদিকে নজর দিন।
পরামর্শ দিয়েছেন—ডা. ইন্দ্রজিত প্রসাদ, সহযোগী অধ্যাপক, হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
আমার বয়স ১৬ বছর। ওজন ৭৬ কেজি। বেশ কয়েক বছর ধরে মাথার চুল পেকে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছি। সঙ্গে খুশকিও দেখা দেয় খুব। চুল পড়ে যাচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে? কোনো উপায়ে সুফল পেতে পারি?—জয়, ময়মনসিংহ
চুল পেকে যাওয়া সাধারণত বংশগত কারণেই হয়। খুশকি দূর করার জন্য অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করবেন। খুশকির জন্যই চুল পড়ে। অন্যের ব্যবহৃত তোয়ালে, বালিশ, চিরুনি ইত্যাদি ব্যবহার করবেন না।
পরামর্শ দিয়েছেন—অধ্যাপক ডা. মো. আসিফুজ্জামান, চর্ম বিভাগ, গ্রিন লাইফ হাসপাতাল, ঢাকা।
আমার বয়স ১৯ বছর। ২০১১ সাল থেকে চশমা ব্যবহার করি। প্রথমে পাওয়ার ছিল ২.৭৫, পরবর্তীকালে ২০১৪ সালে বেড়ে হয় ৪.০০। এত বছর চশমা ব্যবহার করার কারণে আমার মাথা, চোখ, কান প্রচুর ব্যথা করে। তাই আমি চশমা ব্যবহার করতে চাই না। আমি চোখে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করতে চাই। তাই লেন্স ব্যবহার করা উচিত হবে কি না? আর ভবিষ্যতে ল্যাসিক করা ঠিক হবে কি না?—সাদ চৌধুরী
২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আপনার পাওয়ার মাইনাস ৪ (-৪.০০)। তার মানে আপনার পাওয়ার একটা স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। এটি খুবই ভালো লক্ষণ। আপনার প্রথম সমস্যা চোখ, কান, মাথাব্যথা। চোখ, কান, মাথাব্যথা কেবলই চশমা পরার জন্য, তা কিন্তু সঠিক নয়। অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ মোবাইল বা কম্পিউটার পর্দায় কাজ করে অথবা রাত জেগে পড়াশোনা, টিভি দেখা, ফেসবুকিং ইত্যাদিতে ব্যস্ত থাকলে অথবা যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে, তাদের এই সমস্যাগুলো হয়। আপনাকে কয়েকটি জিনিস মেনে চলতে হবে। যেমন প্রয়োজন না হলে দীর্ঘক্ষণ একটানা ডিজিটাল স্ক্রিনে না থাকা; রাতে আগে আগে ঘুমানো; ঘন ঘন পানি খাওয়া এবং নিয়মিত খেলাধুলা বা কায়িক পরিশ্রম করা ইত্যাদি। মাইগ্রেন থাকলে মাথাব্যথা হলে প্যারাসিটামল–জাতীয় বড়ি সেবন করতে পারেন। অনেক সময় সাইনোসাইটিসের জন্যও এ রকম ব্যথা হয়। সে ক্ষেত্রে একজন নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
দ্বিতীয় বিষয়টি হলো কন্টাক্ট লেন্স। আপনি কন্টাক্ট লেন্স পরতে পারবেন, কিন্তু তার জন্য একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। তবে কন্টাক্ট লেন্স সার্বক্ষণিক পরা যায় না। এটি দিনের কোনো একটি অংশে বা সীমিত সময়ের জন্য ব্যবহার করা যায়। ফলে আপনাকে পাশাপাশি চশমাও পরতে হবে। আর কন্টাক্ট লেন্স পরলেই আপনার মাথাব্যথা, চোখব্যথা ইত্যাদির উপশম হবে, তা কিন্তু ঠিক নয়।
সর্বশেষ বিষয়টি হলো ল্যাসিক। আপনার যেহেতু বয়স ১৮ অতিক্রম করেছে এবং গত চার বছর যাবৎ আপনার চশমার পাওয়ার একই আছে, অতএব আপনি ল্যাসিক করাতে পারবেন। লাসিক চশমার বিকল্প হতে পারে।
পরামর্শ দিয়েছেন—ডা. মো. ছায়েদুল হক, চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন, আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, শ্যামলী, আদাবর, ঢাকা।
আমার কোনো দিন পিরিয়ড হয়নি, যা কিশোরী বয়সে হয়ে থাকে। শুধু এই অস্বাভাবিক বিষয় ছাড়া আমার আর কোনো শারীরিক সমস্যা নেই। ছোটবেলায় আমার পরিবার আমাকে একবার এই সমস্যার কারণে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গিয়েছিল, চিকিৎসক কী বলেছিলেন, জানি না। তবে তারপর আর কোনো দিন আমাকে কোনো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়নি। বড় হয়ে আমি অনেকবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে চেয়েছি, কিন্তু লজ্জা, অস্বস্তির কারণে যেতে পারিনি। এই শারীরিক সমস্যার নাম কী? এর কোনো প্রতিকার আছে কি?—নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
আপনার বয়স এখন কত, তা উল্লেখ করেননি। তবে ১৬ বছর বয়সের পরও যদি পিরিয়ড শুরু না হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। জরায়ু ডিম্বাশয় ঠিক আছে কি না এবং হরমোনজনিত কোনো সমস্যা আছে কি না, দেখার পাশাপাশি, এমনকি ক্রোমোজমাল অ্যানালাইসিস পর্যন্ত করতে হতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ প্রায় সব সরকারি মেডিকেল কলেজে এন্ডোক্রাইনোলজি বা হরমোন বিভাগ আছে। আপনি দ্রুত নিকটস্থ এ ধরনের কোনো চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করুন।
—পরামর্শ দিয়েছেন ডা. ইন্দ্রজিত প্রসাদ, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
আমার বয়স ১৬। চার বছর ধরে আমার দুই পায়ের আঙুল ফেটে যায়। মাঝেমধ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপালে যেমনটি হয়, এমনভাবে ফেটে যায়। কখনো আঙুলের ওপর বিচি হয় আর চুলকায়, চুলকানোর পর ফেটে পানি বের হয়। ফাটা স্থানে প্রচুর ব্যথা করে। প্রথম ডান পায়ের একটা আঙুলে ছিল, পরে পায়ের সব আঙুলে ছড়িয়ে গেছে। আমার করণীয় কী?—শোয়েব তাসিন
সম্ভবত আপনার একজিমা হয়েছে। তবে এটা সোরিয়াসিসও হতে পারে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে স্টেরয়েড মলম, প্রয়োজনে মুখে খাবার ওষুধ খেতে হবে। চুলকানির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন বড়ি খেতে পারেন। তবে অনুমানের ওপর নির্ভর না করে আপনার একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
—পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক ডা. মো. আসিফুজ্জামান, বিভাগীয় প্রধান, চর্ম বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ।
আমার বয়স পঁচিশ। আমার মূলত দাঁত ও মাড়িতে সমস্যা। দুই-এক বছর আগে থেকেই ঠান্ডা পানি মুখে নিতে পারি না। শিরশির করে। মাস ছয়েক হলো শক্ত কিছু চিবাতে পারি না। শিরশির অনুভূত হয় এবং এটা বেশ কিছুক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। শক্ত ও শুকনা কোনো খাবার, যেমন টোস্ট, পেটিস ইত্যাদি খেলে মাড়ি ও তালুর চামড়া উঠে যায়। আগে দীর্ঘ সময় ধরে দাঁত ব্রাশ করলেও এখন এক থেকে দুই মিনিটে ব্রাশ শেষ করি। করণীয় কী?—নজরুল ইসলাম, দেবীগঞ্জ, পঞ্চগড়।
মনে হচ্ছে, আপনি দীর্ঘমেয়াদি পেরিওডোন্টাইটিস (দাঁতের ধারক কলার প্রদাহ) রোগে ভুগছেন। এখান থেকে দাঁত ও হাড়ের বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে কামড়ের সময় ব্যথা অনুভব হয়। অন্যদিকে মাড়ি সরে গিয়ে দাঁতের শিকড় উন্মুক্ত হয়ে যাওয়াতে শিরশির করে।
এ অবস্থায় দেরি না করে দ্রুত একজন দন্ত্য চিকিৎসকের পরামর্শে স্কেলিং ও মাড়ি রোগের চিকিৎসা করিয়ে নিন। খুব সাধারণ এ চিকিৎসার সঙ্গে প্রয়োজনবোধে ওষুধ ও মুখ পরিচর্যার সঠিক নিয়ম মেনে চললে সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে দাঁতের আবরণ বেশি ক্ষয় হয়ে গেলে ফিলিংয়ের প্রয়োজন হতে পারে।
—পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ, প্রতিষ্ঠাতা, রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা।
সূত্র – প্রথম আলো
Leave a Reply