আখতারুন নাহার আলো
প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা, বারডেম
পবিত্র রমজান মাসে হিসাব করে চাহিদামতো ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে, অর্থাৎ অন্যান্য সময় যার যতটুকু খাওয়া প্রয়োজন। রমজান মাসে তিনটি আহার, যেমন ইফতার, সন্ধ্যা রাতে ও সেহরিতে সেই পরিমাণের খাবারই খেতে হবে। হয়তো বা খাবারে বৈচিত্র্য আসবে বা মেন্যু বদলে যাবে, কিন্তু ক্যালরি একই থাকবে। তা না হলে হঠাৎ করে মাত্রাতিরিক্ত খাবার আমাদের পাকস্থলীকে অসুস্থ করে দিতে পারে।
ইফতার
সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতার হতে হবে পুষ্টিকর, সহজপাচ্য, রুচিসম্মত ও সহজলভ্য। এ সময় কখনোই বাসি খাবার খাওয়া ঠিক নয়। এতে পেটের পীড়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শরবত ইফতারির প্রধান পানীয়। একেকটি পরিবার একেক ধরনের শরবত পছন্দ করে। এর পরও বৈচিত্র্য আনার জন্য একেক দিন একেক ধরনের শরবত পান করা যেতে পারে। যেমন কাগজি লেবু, ইসবগুল, তোকমা, চিঁড়া, তেঁতুল, পাকা আম, দুধ, বেল, ফল, স্কোয়াশ ইত্যাদি। তবে ডায়াবেটিস থাকলে চিনি বা গুড়ের বদলে বিকল্প চিনি দিয়ে শরবত করা যেতে পারে। এ ছাড়া ডাবের পানি দিয়েও ইফতার শুরু করা যায়। তবে ফলের রসই সবচেয়ে ভালো পানীয়। এতে খনিজ লবণ ও ভিটামিন রয়েছে। ইফতারের প্রধান উপাদান ছোলা। এটা যেমন শক্তিবর্ধক, তেমনি এতে রক্তে চর্বির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। তবে পরিমাণ হবে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী। ছোলা ছাড়াও খাওয়া যায় মটরশুঁটি বা কাবলি মটরের চটপটি, ঘুঘনি ইত্যাদি। রোজার একটি জনপ্রিয় আহার হালিম। চাল-ডাল, মাংস-তেল সহযোগে হালিম একটি ক্যালরি-বহুল পুষ্টিকর খাবার।
ইফতারিতে একটি ফল বা ফলের টুকরা যেমন স্বাস্থ্যসম্মত, তেমনি এতে শরীরের ভিটামিন ও লৌহের অভাব পূরণ হতে পারে। পাকা কলা, পাকা আম, পাকা পেঁপে, কমলা, আপেল ত্বক ও চুলের জন্য খুবই ভালো। হৃদরোগীদের জন্য কলা ও আপেল চমৎকার ফল। খেজুরে রয়েছে প্রচুর লৌহ। এ সময় দুটো খেজুর সে অভাব মেটাতে পারে। কাঁচা সবজির মধ্যে গাজর ও শসার ভূমিকা কম নয়। এতে ক্যারোটিন পাওয়া যাবে। কাঁচা ছোলাও বেশ পুষ্টিকর। রক্তের কোলেস্টেরল কমানোয় এর জুড়ি নেই। এতে মেশাতে হবে আদা, টমেটো, শসা, পুদিনাপাতা, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ কুচি ও লবণ।
মধ্যরাতের খাবার
সন্ধ্যা রাতের খাবার হালকা হওয়াই ভালো। এতে সেহরি খাওয়ার ইচ্ছাও বজায় থাকবে পুরোপুরি। ইফতারিতে ডালের সমারোহ বেশি থাকে বলে যথেষ্ট প্রোটিন পাওয়া যায়। এ জন্য সন্ধ্যা রাতের খাবারে ডাল বাদ দিলে ভালো হয়। মাংসের চেয়ে হালকা মসলা সহযোগে যেকোনো বড়-ছোট মাছ খেলে ভালো হয়। যেকোনো ধরনের ভর্তা খেলেও খাবারে রুচি আসবে।
সেহরির খাবার
অনেকে মনে করেন, যেহেতু সারা দিন উপবাস থাকতে হবে, সে জন্য সেহরিতে বেশি বেশি খাওয়া প্রয়োজন। আবার অন্যদিকে অনেকে আলসেমির জন্য খুবই কম খেয়ে থাকেন। দুটিই ক্ষতিকর। অতিভোজনে বদহজম হয়ে পেটে গ্যাস বা ডায়রিয়া হতে পারে। আবার না খেলে শরীর আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পড়বে। কারণ, সারা দিনের উপবাস আমাদের দেহের বিপাক ক্রিয়ায় বেশ পরিবর্তন আনে। এতে গ্লুকোজ ক্ষয় বেশি হওয়ায় শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
সেহরিতে ভাত ছাড়াও খাওয়া যেতে পারে রুটি-পরোটা, পাউরুটি, দুধ-সেমাই ইত্যাদি। কোনোটাই খারাপ নয়। এ সময় মাছের বদলে মাংস বা ডিম খাওয়া যেতে পারে। ‘ইফতারিতে খাবারে তেল সংযোজন বেশি হয় বলে সন্ধ্যা রাতে ও সেহরিতে তেল কম খাওয়া প্রয়োজন। সেহরিতে এক কাপ দুধ পান করাটা বেশি ভালো।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০০৮
Leave a Reply