থ্যালাসিমিয়া রোগীদের নানাবিধ সমস্যা বিমোচনে বাংলাদেশ থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশন ‘আশা থ্যালাসিমিয়া সেন্টার’ নামে ঢাকায় একটি সমন্বিত চিকিৎসাকেন্দ্রের উদ্যোগ নিয়েছে।
থ্যালাসিমিয়া একটি বংশগত রক্তরোগ। এতে জেনেটিক বা বংশগত ত্রুটির কারণে অপূর্ণাঙ্গ হিমোগ্লোবিন তৈরি হয়, যার ফলে রোগীদের মধ্যে মারাত্মক রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
এ জন্য এর মূল চিকিৎসা হচ্ছে, নিয়মিত দুই-চার সপ্তাহ পরপর রক্তদান এবং রক্তদানের ফলে শরীরে জমা হওয়া অতিরিক্ত লৌহ নিষ্কাশনের জন্য ওষুধ গ্রহণ করা।
যদি এ চিকিৎসা যথাযথভাবে করা যায়, তবে থ্যালাসিমিয়া রোগীরাও অন্যদের মতো সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মক্ষম জীবন যাপন করতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা সম্ভব হয় না, যার পেছনে নানান কারণ থাকে। প্রথমত, রোগীদের মধ্যে চিকিৎসা-সংক্রান্ত জ্ঞানের অভাব। দ্বিতীয়ত, নিরাপদ ও ভালো রক্তের অভাব। অনেক সময়ই রোগীরা রক্তবাহিত রোগ দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে। তৃতীয়ত, অনেক রোগী লৌহনিষ্কাশক ওষুধ সঠিকভাবে নিচ্ছে না। সঠিকভাবে ওষুধ না নেওয়ার কারণ চিকিৎসকের সঠিক নির্দেশনার অভাব এবং ওষুধের দাম ও দুষ্প্রাপ্যতা।
সর্বোপরি শৈশব থেকেই এসব কারণে রোগী ও তাদের অভিভাবকেরা খুব হতাশ থাকে। অনেক রোগীই কী করবে, কোথায় যাবে বুঝতে পারে না। চিকিৎসার কলাকৌশল, যথাযথ ফলোআপ ও মনিটরিং থ্যালাসিমিয়া রোগীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; যা অনেক সময়ই মানা হয় না।
থ্যালাসিমিয়া রোগীদের এসব সমস্যার কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশন ‘আশা থ্যালাসিমিয়া সেন্টার’ নামে ঢাকায় একটি সমন্বিত চিকিৎসাকেন্দ্রের উদ্যোগ নিয়েছে।
বাংলাদেশ থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ডা· মো· আবদুর রহিম এ প্রতিবেদককে জানান, থ্যালাসিমিয়ার চিকিৎসাসংকট নিরসনের জন্য তাঁরা এ উদ্যোগ নিয়েছেন। এই সেন্টারে নিবন্ধিত রোগীদের একটি তথ্যবৃত্তান্ত বা ডেটাবেইস রয়েছে, যার মাধ্যমে রোগীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হয় এবং তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
ডা· রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশের রোগীরা রোগ সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন নয়। আমরা তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছি, যাতে তারা নিজেরাই এ রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।’
বাংলাদেশ থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশনের এই সেন্টারে রোগীদের রক্ত সংগ্রহ করতে হয় না। ফাউন্ডেশনের কর্মীরাই নিরাপদ রক্ত সংগ্রহ করে থাকে, যা থ্যালাসিমিয়া রোগীদের রক্ত সংগ্রহসংক্রান্ত ছোটাছুটি, দুশ্চিন্তা ও ভোগান্তি থেকে রেহাই দেয়।
এখানে মনোরম পরিবেশে রক্ত পরিসঞ্চালন করা হয় এবং প্রতিবার রক্ত দেওয়ার সময় সেন্টারের ডাক্তার শারীরিক পরীক্ষা করেন এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা রোগীদের চিকিৎসার অগ্রগতি মনিটরিং করেন। লৌহ নিষ্কাশনের সব ধরনের ওষুধ এখানে পাওয়া যায়। এ ছাড়া স্বল্পমূল্যে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়। সর্বোপরি সেন্টার থেকে রোগীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হয়। ডা· রহিম জানান, তাঁরা তাঁদের ওয়ান স্টপ সেন্টার থেকে থ্যালাসিমিয়া রোগীদের যাবতীয় প্রয়োজন মেটাতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ফাউন্ডেশন ডাক্তার ও রোগীদের মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত থ্যালাসিমিয়ার আদর্শ চিকিৎসা-নির্দেশিকা সরবরাহ করে থাকে।
থ্যালাসিমিয়া রোগের যথাযথ চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রত্যেক রোগীর স্বতন্ত্র অবস্থা মূল্যায়ন করে চিকিৎসা দেওয়া দরকার। থ্যালাসিমিয়া ফাউন্ডেশনের কর্মীরা আশা করেন, তাঁদের এই সেবার মাধ্যমে রোগীদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
আশা থ্যালাসিমিয়া সেন্টারের ঠিকানাঃ ৪৪/২, চামেলীবাগ, শান্তিনগর, ঢাকা ১২১৭। ফোনঃ ৮৩৩২৪৮১, ০১১৯০৮৪০১৯১।
সূত্রঃ প্রথম আলো, আগস্ট ২৭, ২০০৮
Leave a Reply