অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
অনেকের ধীরে বসে খাওয়ার সময় নেই। এত কাজ, এত ব্যস্ততা। সকালে সামান্য কিছু মুখে গুঁজে অফিসে বা কাজের জন্য দৌড়ানো। যাদের নিজেদের গাড়ি নেই, তাদের পদযুগল ভরসা। এরপর বাসে বাদুড়ঝোলা হয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো। এখন অনেকের জন্য লাঞ্চ মানে একটি বনরুটি ও কলা, আর এক গ্লাস পানি।
রাতে সবজিভাজা, ডাল-ভাত। তবু খেতে হবে তো, বাঁচতে হবে তো। যাদের অর্থবিত্ত আছে তারাও যে ধীরেসুস্থে বসে সব সময় খেতে পারে, তাও নয়। আবার অনেকের অভ্যাস হলো গোগ্রাসে গেলা, রাক্ষসের মতো আহার।
সংসার-সমাজ যা-ই হোক, দ্রব্যমূল্য যা-ই হোক, বেঁচে থাকতে হলে খেতে তো হয়। আর যা খাব একটু ধীরে চিবিয়ে খেলেই ভালো।
পুষ্টিবিদেরা বলেন, ধীরে বসে খেলে শরীরও থাকে ক্ষীণ। আর কম ক্যালরি গ্রহণও হয়। কিনসটোনে রোড আইল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা দেখেছেন, যারা ধীরে ধীরে আহার করে, তারা প্রতি বেলায় দ্রুত আহার গ্রহণকারীদের তুলনায় ৭০ শতাংশ কম ক্যালরি গ্রহণ করে।
প্লেট সামনে, প্লেটভর্তি ভাত দেখলে মন আনচান করে ওঠে। একটু সংযত হয়ে ধীরে ধীরে খেলে হয়। কথায় বলে, রসনা সংযত করলে ভালো। খাওয়া কম হবে, বাঁচবেন বেশি দিন। কম কথা বললে শত্রু কম হবে। একটি পরামর্শ আছে।
শ্বাসক্রিয়ার একটি কোমল কৌশল।
খেতে বসার আগে করতে পারেনঃ নাক দিয়ে গভীর শ্বাস নিন, এরপর ধীরে নাক দিয়ে ছাড়ুন। এ রকম করুন কয়েকবার। পরামর্শ দিয়েছেন মেক্সিকোর পুষ্টিবিশেষজ্ঞ ডোনে নিনস্ট্যাড। আর একটি কাজ করতে পারেন। এক গ্লাস স্বচ্ছ পানি নিন, রাতের খাবার খাওয়ার মাঝেমধ্যে চুমুক দিয়ে দিয়ে সামান্য করে পানি পান করতে থাকুন। পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আরও একটি কথা, খাওয়ার সময় চাপের মধ্যে থাকার একটি কারণ হলো, কী খাবেন সে ব্যাপারে অনুসন্ধান। কী খাব এ নিয়ে মনে তাড়না। স্বাস্থ্যকর খাবার, সহজলভ্য, সস্তা এমন খাবার খুঁজে নিন।
এ জন্য পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। রন্ধনকে যিনি শিল্পের পর্যায়ে এনেছেন, অধ্যাপিকা সিদ্দিকা কবীরের সাহায্য নিতে পারেন। একটা কথা ইতিমধ্যে জানিয়ে রাখি, রন্ধনকর্মটি কিন্তু কুশলী কাজ, তবে এ কাজটি স্বাস্থ্যহিতকরও বটে। এ দেশে পুরুষেরা রাঁধতে দ্বিধা বোধ করে। কিন্তু বিদেশে সবাই নিজে রান্না করে খেয়ে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তাই নারী-পুরুষ উভয়েই রান্নার কাজে লেগে যেতে পারে।
এত কথা বলার পেছনে যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যাও আছে আমার।
মনোবিজ্ঞানী মার্ক আর ভোগেল, যিনি নিউইয়র্ক সিটিতে রন্ধনবিদ্যার ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নও করেছেন। তাঁর বক্তব্য হলো, “দিনটি যদি খুব বাজে যায়, তাহলে রান্নাবান্না করলে মন বেশ প্রশান্ত হয়।” আলু চটকাচ্ছেন নয়তো বেগুনপোড়া মাখছেন, কাঁকরোলের পুর বানাচ্ছেন-যে কাজই হোক বারবার এ কর্মটি করে করে স্মায়ু হয় শান্ত।
করলা-ভাজি, কুচি কুচি মিষ্টি লাউয়ের সঙ্গে তেলে ভাজতে ভাজতে দেখবেন মগ্নতা এসে যাবে। মসুর ডালে ঘুঁটনি দিয়ে কাঁচামরিচ ও পাঁচফোড়নের সম্বরা দিয়ে দেখুন, কেমন মজা। পরীক্ষা করে দেখুন না!
সূত্রঃ প্রথম আলো, আগস্ট ২৭, ২০০৮
Leave a Reply