ডা· মো· শহীদুল্লাহ্
সহযোগী অধ্যাপক, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ
কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ
আমরা অনেকেই রাস্তার পাশের খাবারের দোকান থেকে প্রতিদিনই এ রকম খাবার খাই। আলুর চপ, ডালপুরি, শিঙ্গারা, সমুচা, পিঁয়াজু, চা, পান কত কী! রাস্তার পাশের বা ফুটপাতের খোলা খাবারের দোকানগুলোর এসব খাবার কতটা স্বাস্থ্যসম্মত বা নিরাপদ? এসব খাবার খেলে কী কী স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে, আমরা অনেকেই তা জানি না। তবে জানাটা প্রয়োজন।
আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এসব খাবার প্রায় সারাক্ষণই খোলা অবস্থায় রাখা হয়। এতে মাত্রাতিরিক্তভাবে দূষিত শহরের বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা এবং জীবাণু এসব খাবারের ওপর জমতে থাকে।
অসংখ্য মাছি খাবারের ওপর ভনভন করে, বসে, বমি করে, মল ত্যাগ করে ও জীবাণু ছড়ায়। এসব জীবাণু খালি চোখে দেখা যায় না। ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিস, কৃমি ইত্যাদি রোগের জীবাণুর আখড়া হয়ে উঠতে পারে রাস্তার পাশের খোলা খাবারের এসব পশরা।
এর সঙ্গে যোগ হয় পানি, থালা-বাসন, কাপ-প্লেট ইত্যাদির পরিচ্ছন্নতার প্রশ্ন এবং দোকানের লোকের স্বাস্থ্য জ্ঞান ইত্যাদি। পানিটা হয়তো টিউবওয়েল থেকেই আনা।
কিন্তু পানি রাখার পাত্রটা কতটা পরিষ্কার? কিংবা পাত্র থেকে যে মগ দিয়ে পানি তুলে দেওয়া হচ্ছে গ্লাসে, সেই মগ কতটা জীবাণুমুক্ত? মগে হয়তো পাঁচটা মাছি বসে ছিল। গ্লাসটাই বা কতটা পরিষ্কার করে ধোয়া হয়েছিল এবং কতটা পরিষ্কার রাখা হয়েছিল? থালা-বাসন, কাপ-প্লেট ইত্যাদি সাধারণত বোলে রাখা পানিতেই ধোয়া হয়।
সুতরাং খুব ভালোভাবে যে পরিষ্কার হয়, তা বলা যাবে না। ধোয়ার পরে রেখে দেওয়া স্থানে ধুলাবালি ও মাছির অবাধ প্রবেশ! কতটা পরিষ্কার থাকবে?
পানের দোকান থেকে কেনা খিলি পান। কতটা পরিষ্কার করে ধোয়া বা কতটা পরিষ্কার করে রাখা? খিলিটা বানিয়ে দেওয়ার সময়ই বা কতটা পরিচ্ছন্নতা মানা? পরিবেশকদের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জ্ঞান সীমিত।
হাতের নখ হয়তো বড়। হাত দিয়ে ঘাম মুছছে নিয়মমতো এবং সময়মতো হয়তো হাত ধোয়া হয়নি। একটা তোয়ালে বা গামছা দিয়ে খাবার টেবিল পরিষ্কার করছে। সেই অপরিষ্কার হাতেই একটা শিঙ্গারা তুলে দিল আপনার প্লেটে। খরিদ্দারের কাছ থেকে যে হাতে টাকা নিল, সেই হাত না ধুয়েই আপনাকে একটা পরোটা পরিবেশন করল। ব্যাপারগুলো মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়।
বাসি, পচা বা নি্নমানের খাবার বিক্রির কথাটিও মনে রাখতে হবে। অনেক সময় আগের রাতে তৈরি করে রাখা খাবারে তেলাপোকা বা অন্যান্য কীটপতঙ্গের পদচারণা হয়ে থাকতে পারে। হতে পারে জীবাণু সংক্রমণ।
এসবের মাধ্যমে আমাদের হতে পারে ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, জন্ডিস, কৃমি ইত্যাদির মতো নানান অসুখ। এসব খাবার সংরক্ষণ ও পরিবেশনার মান স্বাস্থ্যসম্মত করতে হবে। আর খাবার খাওয়ার ব্যাপারে আমাদেরকে হতে হবে আরো সাবধান।
সূত্রঃ প্রথম আলো, আগস্ট ২৭, ২০০৮
Leave a Reply