ডা· আবু সাঈদ শিমুল
চিকিৎসা কর্মকর্তা
পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চট্টগ্রাম
ভাইরাসজনিত জ্বরে ভোগেননি এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে। ঋতু পরিবর্তনের সময় এ জ্বর হলেও খুব আর্দ্র আবহাওয়ায়ও এটি হতে পারে। ডেঙ্গু, জন্ডিসসহ যেকোনো ভাইরাসজনিত জ্বরকে ‘ভাইরাস জ্বর’ বলা হলেও সাধারণভাবে লোকজন ভাইরাস জ্বর বলতে ‘ফ্লু’কেই বোঝায়। এ জন্য প্রধানত দায়ী ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস।
ভাইরাস আক্রমণের দুই থেকে সাত দিন পর এ জ্বর হয়। এই জ্বর হলে শীত শীত ভাব, মাথাব্যথা, শরীরে ও গিরায় ব্যথা, খাওয়ায় অরুচি, ক্লান্তি, দুর্বলতা, নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, চুলকানি, কাশি, অস্থিরতা ও ঘুম কম হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে পেটের সমস্যা, বমি ও ডায়রিয়া হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে টাইপ ‘বি’ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণে পেটব্যথাও হতে পারে।
তিন প্রকার ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের অনেক উপজাতি আছে, যারা অনবরত চরিত্র বদলায়। তাই উল্লিখিত লক্ষণগুলোর প্রতিটি সব রোগীর যে থাকবে তা নয়, আবার একেক রোগীর ক্ষেত্রে এর তীব্রতাও একেক রকম হতে পারে।
কারও হয়তো তিন দিনেই জ্বর ভালো হয়ে গেল, কারও আবার ১০ থেকে ১৪ দিনও লাগতে পারে। ভাইরাস জ্বর বাতাসের মাধ্যমে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির কাশি থেকে হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে ঠান্ডা লেগে কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে এ রোগ হয়। তাই এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।
ভাইরাস জ্বর হলে খুব বেশি চিকিৎসার বা কোনো অ্যান্টিবায়োটিকেরও প্রয়োজন হয় না। লক্ষণ অনুযায়ী জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খেলেই হয়। তবে প্রচুর পানি খেতে হবে এবং সেই সঙ্গে নিতে হবে বিশ্রাম। রাতে ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। অনেকে মনে করে, ভাইরাস জ্বরে গোসল করা যাবে না। এটা সম্পূর্ণ ভুল। এ জ্বরে গোসল করতে বাধা নেই। শিশুদের ক্ষেত্রে শরীর মুছে দেওয়া ভালো। এ সময় দরজা, জানালা ও ফ্যান বন্ধ করে ঘরকে গুমট করে রাখা উচিত নয়। বরং জানালা খুলে হালকা ফ্যান ছেড়ে দেওয়া ভালো। সাধারণত কয়েক দিনেই ভাইরাস জ্বর ভালো হয়ে গেলেও এর ফলে শরীরে যে ক্লান্তি ও অবসাদ আসে, তা দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তাই এ রোগ ভালো হলেও কয়েক সপ্তাহ অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
ভাইরাস জ্বর একটি সাধারণ রোগ হলেও প্রাথমিক অবস্থায় অন্য অনেক জ্বরের লক্ষণ ভাইরাস জ্বরের মতোই। তাই জ্বর তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ ছাড়া অতি বৃদ্ধ ব্যক্তি, সন্তানসম্ভবা নারী কিংবা খুব ছোট শিশুদের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সূত্রঃ প্রথম আলো, আগস্ট ২৭, ২০০৮
Leave a Reply