ডা· সেলিনা ডেইজী
শিশু, শিশু নিউরোলজি ও ক্লিনিক্যাল নিউরোফিজিওলজি বিশেষজ্ঞ, সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ নীলের (কাল্পনিক নাম) বয়স সাড়ে আট বছর। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে-ই বড়। জ্নের সময় বিশেষ কোনো অসুবিধা হয়নি। জ্নের পরপরই কেঁদেছে। কিন্তু বসা শিখেছে এক বছর বয়সে এবং হাঁটা শুরু করেছে তিন বছরে। কথাও একটু দেরিতে বলেছে। কিন্তু কথা তাঁর অস্পষ্ট। এই সাড়ে আট বছর বয়সেও কথা স্পষ্ট হয়নি। মা-বাবা ও নিকটাত্মীয় ছাড়া কেউ বিশেষ কিছু বুঝতে পারে না। আবার তার রাগটাও বেশি। বিদ্যালয়ে দেড় বছর আগে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু সেখানে তার কোনো বন্ধু নেই। সহপাঠীরাও তার সঙ্গে মেশে না, সবাইকে সে মারে, শিক্ষকের কথাও শোনে না। মা-বাবা তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়েছেন কিন্তু সবাই আশ্বাস দিয়েছেন যে বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে। এভাবে কেটে গেছে আরও কিছু বছর। নীলের ছোট ভাইয়ের বয়স তিন। সে ঠিক সময়ে বসেছে, হেঁটেছে এবং কথাও বলেছে। তিন বছর বয়সে সে টরটর করে কথা বলে।
বিদ্যালয়ে নীলের কোনো উন্নতি হচ্ছে না, বরং সেখান থেকে কেবল নালিশ আসছে। শেষে মা-বাবা একজন শিশু নিউরোলজিস্টের কাছে নিলেন।
নীলকে পরীক্ষা করে দেখা গেল যে তার সবকিছুই স্বাভাবিক, কেবল কথাটা অস্পষ্ট ও ড্রিপ টেনডল রিফ্লেক্সটা একটু বেশি। ব্রেনের একটা পরীক্ষা। ইইজি করে পাওয়া গেল যে তার বাঁ পাশের ব্রেন, যেখান থেকে কথার উৎপত্তি, সেখানে অস্বাভাবিক সংকেত দিচ্ছে। অর্থাৎ কথা বলার জায়গায় খিঁচুনি হচ্ছে। এই খিঁচুনি এত হালকা যে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে খিঁচুনি হচ্ছে না। কিন্তু ব্রেনে হয়েই যাচ্ছে, যাকে বলে অদৃশ্য খিঁচুনি বা সাব-ক্লিনিক্যাল সিজার। এ জন্য সে কথা স্পষ্ট বলতে পারে না। আর যেহেতু সে তার চাহিদা অন্যকে বোঝাতে পারে না, সে জন্য সে অল্পতেই রেগে যায়। নীলের রোগটার নাম মাইন্ড সেরিব্রাল পালসি। গর্ভাবস্থায় অথবা জ্নের সময় বা পরে কোনো এক সময় তার ব্রেনের খুব ছোট্ট একটা স্থানে একটু অসুবিধা হয়েছে। সেটা এত ছোট যে বড় কোনো উপসর্গ দেখা দেয়নি।
বুঝবেন কীভাবে
এটা বোঝা যায়, যখন কোনো বাচ্চা যে সময় বসা, হাঁটা, কথা বলা উচিত, ঠিক সেই সময় যদি না বলে তাহলে বুঝতে হবে তাঁর ব্রেনে একটু সমস্যা আছে। এ ছাড়া একটা ছোট নরম হাতুড়ি দিয়ে তার বিশেষ কিছু স্থানে বাড়ি দিলে সেটা যদি একটু বেশি লাফ দেয়, তাহলে বুঝতে হবে তার ব্রেন পুরোপুরি স্বাভাবিক নয়। অনেক সময় এদের বড় আকারে খিঁচুনি হয়, আবার অনেক সময় অদৃশ্য খিঁচুনি হয়। অর্থাৎ মাথার মধ্যে হালকাজাতীয় খিঁচুনি হয়েই যাচ্ছে কিন্তু বাইরে প্রকাশ পাচ্ছে না। ব্রেনের একটা পরীক্ষাতে (ইইজি) এটা ধরা পড়ে। যত দ্রুত এদের চিকিৎসা করা যায়, তত বেশি উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুতরাং আর দেরি না করে নীলের চিকিৎসা শুরু করা হলো খিঁচুনি বন্ধের ওষুধ ও সঙ্গে স্পিচ থেরাপি দিয়ে। অর্থাৎ মুখে এমন কিছু করা, যাতে ঠোঁট, জিহ্বা, আলা জিহ্বা ও কণ্ঠনালির ব্যায়াম হয়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা সাধারণত বেলুন, বাঁশি, মাউথ অর্গান বাজাতে বলেন। এ ছাড়া পাইপ অথবা স্ট্র দিয়ে পানি বা অন্যান্য পানীয় খাওয়া যেতে পারে। আমাদের বাংলা ভাষায় ব্যঞ্জনবর্ণগুলো মুখের বিভিন্ন স্থান থেকে উচ্চারিত হয় এবং উচ্চারণ অনুযায়ী এগুলোর নামকরণ হয়েছে। যেমন-ক খ গ ঘ ঙ কণ্ঠ বা জিহ্বামূলীয় ধ্বনি, চ ছ জ ঝ ঞ তালব্য ধ্বনি, ট ঠ ড ঢ ণ মূর্ধণ্য ধ্বনি, ত থ দ ধ ন দন্ত্য ধ্বনি, প ফ ব ভ ম ওষ্ঠ্য ধ্বনি। এ ২৫টি বর্ণ উচ্চারণ করতে হবে এবং সঠিক উচ্চারণ করতে হবে। এগুলো উচ্চারণের মাধ্যমে মুখের বিভিন্ন স্থানের ব্যায়াম করানো যাবে। এগুলোর মাধ্যমে এ ধরনের শিশুকে স্পিচ থেরাপি অভিভাবকেরা দিতে পারেন।
সূত্রঃ প্রথম আলো, আগস্ট ২০, ২০০৮
zubaida monsour
she is my daughter he is 4 years now. she can speak few works like..baba, ammu, dada, dadu, nana,nanu,dudh,bhath, jutha, agun those words clearly. we tried our best to train more word but in vain. can you pls kindly suggest us what we have to do…for your information, we are living at riyadh in saudi arabia.
tks and rgs
monsour
Bangla Health
আপনার মেয়ে যে শব্দগুলো বলতে পারে সেগুলো কি স্পষ্ট বলে? তাহলে চিন্তার কিছু নাই। আবার অনেকে আছে কথা কম বলে। এই বয়সে বেশী দুশ্চিন্তা না করাই ভালো। বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
আপনার মেয়ের জন্য শুভকামনা রইলো।