“এসিড রিফ্লাক্স” সমস্যার লক্ষণগুলো হলো বুকজ্বলা, হজমে গোলমাল, নাকে শ্লেষ্মা জমা, গিলতে অসুবিধা হওয়া, ঘন ঘন গলা খাকারি দেয়া, কাশি, হাঁপানি ইত্যাদি।
সাম্প্রতিককালে এসিড রিফ্লাক্সে আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে।
এসিড রিফ্লাক্স থেকে ইসোফেগাস বা খাদ্যনালীতে ক্যান্সারও হয়।
এসিড রিফ্লাক্সের প্রচলিত ওষুধগুলোতে ক্যান্সার প্রতিরোধের কোন ব্যবস্থা নেই।
উল্টো বরং দীর্ঘদিন এসব ওষুধ সেবনেও খাদ্যনালীর ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
তাছাড়া এসিড রিফ্লাক্সের প্রচলিত ওষুধ এককভাবে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
এসিড রিফ্লাক্সের জন্য দায়ী হলো আমাদের বাজে ত্রুটিপূর্ণ খাবার যেখানে চিনি, সফট ড্রিঙ্ক, চর্বি ও প্রসেসড খাদ্যের আধিক্য আছে।
তবে আরেক গুরুত্বপূর্ণ কারণও আছে যেটাকে তেমন আমলই দেয়া হয় না।
সেটা হলো আমাদের ডিনার টাইম, অর্থাৎ রাতের কোন সময়টায় আমরা আহার করছি, তা।
সময়মতো খেলে ও সঠিক খাবার খেলেই কিন্তু এসিড রিফ্লাক্স থেকে সেরে ওঠা যায়।
লক্ষ্য করা গেছে, ডিনারের সময়টা অনেকের ক্ষেত্রে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে।
কাজের সময়টা দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে কাজ শেষে খাবারের সময়টাও দেরীতে হচ্ছে।
শুধু যে কাজের সময় দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে ডিনারের দেরী হচ্ছে তা নয়।
কাজ শেষে কেনাকাটা, ব্যায়াম ইত্যাদি ব্যাপারও ডিনারকে পিছিয়ে দিচ্ছে।
এই সমস্যার একক ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হলো রাতে দেরী করে খাওয়া একেবারেই বন্ধ করা।
তাছাড়া, খাওয়ার পর সোজা হয়ে থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ মাধ্যাকর্ষণ খাদ্যকে পাকস্থলীতে রাখতে সাহায্য করে।
রিফ্লাক্স হলো পাকস্থলী থেকে এসিড উপচে বেরিয়ে আসার ফল।
ভরা পেটে শুয়ে থাকলে রিফ্লাক্সের আশঙ্কা বেশী থাকে।
ডিনারের পর শুতে যাওয়ার আগে যদি ডেজার্ট বা স্ন্যাক থাকে তাহলে তো কথাই নেই।
রিফ্লাক্স হবেই।
একজন সুস্থ স্বাভাবিক তরুণের মাঝারি পরিমাণ আহারের পর পাকস্থলী খালি হতে সাধারণত কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে।
বয়স্ক লোকদের কিংবা যাদের রিফ্লাক্স আছে তাদের ক্ষেত্রে সময়টা একটু বেশী লাগে।
উপরন্তু ডেজার্টগুলো সাধারণত অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট ও চর্বিযুক্ত থাকে।
এসব অতি-চর্বিযুক্ত বা অধিক ক্যালরির খাবার হজম প্রক্রিয়াকে মন্থর করে দিয়ে বা পাকস্থলীর ভাল্ব শিথিল করে রিফ্লাক্স সৃষ্টি করে।
বলাবাহুল্য পাকস্থলীর ভাল্ব সাধারণত রিফ্লাক্স প্রতিহত করে।
সুতরাং দেরী করে নয় বরং যথাশীঘ্র ৭টার মধ্যেই ডিনার সারতে হবে।
বাস্তবেও দেখা গেছে, এসিড রিফ্লাক্সের রোগীরা আগেভাগে ডিনার সেরে নেয়ার অভ্যাস করার পর তাদের এলার্জি, সাইনোসাইটিস, হাঁপানি ও ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো দূর হয়েছে বা অনেক কমে গেছে।
অনেকে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য গ্রহণের পরও এসিড রিফ্লাক্স সমস্যায় ভোগেন।
তাঁদের ক্ষেত্রে দেরী করে ডিনার করাটাই সমস্যার একমাত্র কারণ হিসেবে দেখা যায়।
সমস্যার সমাধান হিসেবে ডিনারের সময় বদলানোর যে প্রয়োজনীয়তা সেটা অনেক সময় তাদের কাছে এমন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয় যা মেটানো সম্ভব হয় না।
সুতরাং এসিড রিফ্লাক্স সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে ডিনার শেষ করতে হবে।
অনেকের জন্য সেটার অর্থ লাইফস্টাইলে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন।
সেই পরিবর্তনটাই ঘটাতে হবে এবং খেতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও পানীয়।
[সূত্রঃ নিউইয়র্ক টাইমস । মোহাম্মদ ইউসুফ হোসেন ]
Leave a Reply