ডা· আবু সাঈদ শিমুল
চিকিৎসা কর্মকর্তা
পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চট্টগ্রাম
শিশুদের জন্য বুকের দুধ যে উপকারী তা আমরা জানি, কিন্তু বুকের দুধ দিলে শুধু যে শিশুর লাভ হয় তা নয়, এটা মায়েদের জন্যও ভালো। জন্মের পরই শিশুকে বুকের দুধ দিলে মায়ের শরীর থেকে অক্সিটোসিন নিঃসৃত হয়।
এই অক্সিটোসিন জরায়ু এবং এর রক্তনালিকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে। ফলে সন্তান জন্ম নেওয়ার পর মায়েদের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় না। প্রায় সব নারীরই গর্ভধারণের সময় ওজন বাড়ে। এতে শরীরে বাড়তি মেদও জমে। যেসব মা সন্তানকে বুকের দুধ দেন, তাঁদের দৈনিক অতিরিক্ত ৫০০ ক্যালরি শক্তির প্রয়োজন হয়। বুকের দুধ খাওয়ালে এই বাড়তি ক্যালরির প্রয়োজন হয় বলে মায়েরা খুব দ্রুতই আগের শারীরিক গঠনে ফিরে যেতে পারেন। যেসব মা ইনসুলিনের ওপর নির্ভরশীল ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাঁদের ক্ষেত্রে বুকের দুধ খাওয়ালে আগের চেয়ে কম পরিমাণে ইনসুলিন দরকার হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে বুকের দুধ খাওয়ালে স্তন ক্যান্সারের আশঙ্কা ২৫ শতাংশ কমে, আর ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের আশঙ্কাও ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ কমে। এ ছাড়া জরায়ু ও অ্যান্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারের ঝুঁকিও কম থাকে। বুকের দুধ খাওয়ালে তা উৎকৃষ্ট জ্ননিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। এতে দুটি সন্তানের মধ্যে বয়সের ব্যবধান থাকে।
ফলে প্রতিটি সন্তানই সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে পারে। কিন্তু যারা ফর্মুলা বা কৃত্রিম দুধ খাওয়ান, তাঁদের এ সুবিধা তো থাকেই না, উপরন্তু শেষ বয়সে অস্টিওপোরেসিস (হাড়ের ক্ষয়রোগ) হয় এবং অল্প আঘাতে কোমর ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি চার গুণ বেশি থাকে। বুকের দুধ খাওয়ালে মায়েদের যে শুধু শরীর ভালো থাকে তা-ই নয়, তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্তন্যদায়ী মায়েরা সহজে উত্তেজিত হন না, উদ্বেগ ও হতাশায়ও তাড়াতাড়ি ভেঙে পড়েন না। কর্মজীবী মায়েরা যে ক’মাসই মাতৃত্বকালীন ছুটি পান না কেন, এ সময়ের পুরোটাই শিশুকে শুধু বুকের দুধ দেওয়া উচিত। এতে পরবর্তী সময়ে শিশুর ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য রোগ হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
ফলে শিশু যেমন সুস্থ থাকে, তেমনি শিশুর জন্য কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটি নিতে হয় না বলে মায়েরও সুবিধা হয়। তবে এসব বিষয়ের ঊর্ধ্বে মা ও সন্তানের মধ্যে থাকে এক অকৃত্রিম বন্ধন। শিশুকে বুকের দুধ দিলে এ বন্ধন আরও সুদৃঢ় হয়, আর মা তখন উপলব্ধি করেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ০৬, ২০০৮
Leave a Reply