ডা· মো· শহীদুল্লাহ
সহযোগী অধ্যাপক, কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ
কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ
ঘটনা
১· অনীক চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। মনোযোগ দিয়ে খাতায় অঙ্ক কষছে। একটি অঙ্কের পরের ধাপ তার মনে আসছে না। কলমের ক্যাপ লাগানো দিকটি মুখের ভেতরে দিয়ে হালকা করে চিবোচ্ছে আর অঙ্কের ধাপটি মনে করার চেষ্টা করছে। কলমে লেগে থাকা ময়লা বা জীবাণু তার মুখে চলে যাচ্ছে। আবার তার মুখে থাকা অসংখ্য জীবাণুও কলমের গোড়ায় বা ক্যাপে লেগে যাচ্ছে। পরে এই কলম তারই কোনো বন্ধু নিয়ে মুখে দিতে পারে এবং জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে।
২· সুজন দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। পাঠাগারে বই পড়ছে। বইয়ের পাতা ওল্টানোর সময় প্রতিবারই সে জিভে আঙ্গুল স্পর্শ করে নিচ্ছে। এতে বইয়ের ময়লা বা জীবাণু তার মুখে লেগে যাচ্ছে। পাশাপাশি তার মুখের জীবাণুও বইয়ের পাতায় লেগে যাচ্ছে, যা পরে অন্য কোনো পাঠকের মুখে একইভাবে ঢুকে যেতে পারে।
৩· ট্যাক্সি ভাড়া দেওয়ার জন্য আপনি পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করলেন। টাকা বের করার চেষ্টা করছেন। টাকা একটার সঙ্গে আরেকটা লেগে আছে। সহজে আলাদা হচ্ছে না। আপনি আঙ্গুল জিভে লাগিয়ে নিলেন এবং টাকা বের করলেন। ব্যস, টাকায় লেগে থাকা হাজারো জীবাণু মুখে চলে এল।
৪· আপনি হয়তো হোটেলে নাশতা করতে গেছেন। হোটেল বয় প্লেটটিকে গামছা দিয়ে ঘষে ঝকমকে করে তাতে খাবার এনে দিল। ওই গামছা থেকে জীবাণু প্লেটে লেগে থাকতে পারে। ওই প্লেটে নাশতা করাটাও ঝুঁকিপূর্ণ।
ওপরের উদাহরণগুলোর কলম, বই, টাকা, গামছা ও প্লেট-সবই হচ্ছে ফোমাইট। ফোমাইট শব্দটির সঙ্গে আমরা তেমন পরিচিত নই। নাম শুনে মনে হতে পারে, ফোমাইট কোনো রাসায়নিক পদার্থ।
আসলে তা নয়। ফোমাইট হলো এমন সব জড় পদার্থ (পানি ও খাবার ছাড়া) যেগুলোয় রোগজীবাণু সাময়িকভাবে লেগে থাকতে পারে এবং সময়সুযোগমতো সেখান থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
আমাদের চারপাশে অসংখ্য ফোমাইট রয়েছে। বই, খাতা, কলম, পেনসিল, থালা-বাসন, গ্লাস, কাপ-প্লেট, চামচ, টাকা, কাপড়চোপড়, পানির ট্যাপ, দরজার ছিটকিনি, ঘটি-বাটি, পানের বাটা, চুনের কৌটা, টিভির রিমোট-কত কী-ই না আছে। এসব ফোমাইটে রোগজীবাণু কয়েক মিনিট থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
যেসব রোগ হাঁচি-কাশি, মল বা সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়, সেসব রোগ ফোমাইটের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, চোখ ওঠা, ডায়রিয়া, সুতাকৃমি, আমাশয়, হেপাটাইটিস-এ, ডিপথেরিয়া, টাইফয়েড প্রভৃতি রোগ এসব ফোমাইটের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। আমাদের চারপাশে অসংখ্য ফোমাইটের ব্যাপক উপস্থিতি দেখে আমরা ফোমাইট-বাহিত রোগের সমস্যার পরিধিটা আন্দাজ করতে পারি।
এসব রোগ প্রতিরোধযোগ্য। যেসব ফোমাইট ধুয়েমুছে পরিষ্কার রাখা যায়, সেগুলো ধুয়েমুছে পরিষ্কার রাখা এবং ফোমাইটগুলো স্পর্শ করার পর হাত ধুয়ে পরিষ্কার করা-এ দুটি উপায়ে আমরা তা করতে পারি। সচরাচর হয়ে থাকে, এমন সব সংক্রামক রোগ প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোয়া খুব সহজ ও সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ০৬, ২০০৮
Leave a Reply