অধিকাংশ দম্পতি বিয়ের পর একটা নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে সন্তানের আশা করে থাকেন। কিন্তু নানা কারণে গর্ভধারণ বাধাগ্রস্ত বা দেরি হতে পারে। অনেক সময় একটি সন্তান জন্মের পর আরেকটি সন্তানের জন্য চেষ্টা করে বিফল হন অনেক দম্পতি। গর্ভধারণের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই বেশ কিছু শারীরিক ও মানসিক বিষয় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।
নারীর ক্ষেত্রে ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু তৈরি বা পরিপক্ব হতে সমস্যা, ডিম্বাশয় থেকে জরায়ুতে পৌঁছতে সমস্যা, নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুতে যুক্ত না হওয়া কিংবা জরায়ুতে সঠিক পরিবেশে বাড়তে না পারার ফলে গর্ভধারণজনিত সমস্যা হতে পারে। প্রজনন অঙ্গের জন্মগত ত্রুটি, প্রজনন অঙ্গের অন্য কিছু সমস্যা (যেমন টিউমার, সিস্ট বা পলিপ), জীবাণুর সংক্রমণ, ডায়াবেটিস, পুষ্টিহীনতা, অতিরিক্ত ওজন, থাইরয়েড কিংবা অন্য কোনো হরমোনের তারতম্য, বেশি বয়স, রক্তরোগ এবং কিছু ওষুধের কারণে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে।
পুরুষের ক্ষেত্রেও এ রকম কিছু কারণ রয়েছে। যেমন শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়া, প্রজনন অঙ্গের কোনো প্রতিবন্ধকতা যা শুক্রাণুকে বাধাগ্রস্ত করে কিংবা ত্রুটিপূর্ণ শুক্রাণু। এ ছাড়া জন্মগত ত্রুটি, যৌনরোগ, প্রজনন অঙ্গে জীবাণুর সংক্রমণ, অতিরিক্ত ওজন, বেশি বয়স, ধূমপান, মদ্যপান, ক্যানসার, কিছু ওষুধ, তেজস্ক্রিয়তা, অতিরিক্ত গরমে কাজ করা ইত্যাদি কারণে সমস্যা হতে পারে।
একজন নারীর বয়স ৩৫ পেরিয়ে যাওয়ার পর তাঁর গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমতে থাকে এবং গর্ভপাতের আশঙ্কা বাড়ে। তবে বড় ধরনের ত্রুটি না থাকলে সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যেই প্রায় ৮০ শতাংশ রোগীর অবস্থার উন্নতি হয়। তবে এসব চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি, সময় লাগতে পারে ৩৬ মাস থেকে ৪৮ মাস পর্যন্ত। গর্ভধারণে সমস্যা হলে স্ত্রী ও স্বামী উভয়েরই সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো করিয়ে নেওয়া উচিত।
কোনো কোনো নারীর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে। পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রাশয়ের বায়োপসি পরীক্ষাও লাগতে পারে। কোনো দম্পতির ক্ষেত্রে টেস্টটিউব বেবির মতো জটিল পদ্ধতিরও প্রয়োজন হতে পারে।
ডা. ফাহমিদা তুলি
স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
সোর্স – প্রথম আলো।
Leave a Reply