ওষুধ নিয়ে কথা
শামীম আলম খান
ফার্মাসিস্ট
শিশু, বয়োবৃদ্ধ, গর্ভবতী ও শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় ওষুধ ব্যবহারে মায়ের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। নইলে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। গর্ভাবস্থায় ওষুধ নিলে অধিকাংশ ওষুধ প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল ভেদ করে সহজে ফেটাল (ভ্রূণ) সার্কুলেশনে চলে আসে, ফলে হতে পারে মব্রায়োসাইডাল, টেরাটোজেনিক কিংবা ফেটোটক্সিক।
ওষুধের অ্যামব্রায়োসাইডাল ক্রিয়া হলো অ্যামব্রায়ো (ভ্রূণ) গঠনে ক্ষতির প্রভাব ফেলা। ফলে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিভিন্ন ওষুধ-যেমন হরমোন, অ্যান্টিডিপ্রেশেন্ট, এনজিওটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম ইনহিবিটর নিলেও এ সমস্যা হতে পারে। টেরাটোজেনিক প্রভাব হলো ভ্রূণের শারীরিক গঠনে প্রতিবন্ধতা, এমনকি বিবেক-বুদ্ধি অসামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হওয়া। আইসোট্রিটিনোইন, মুখে খাওয়ার অ্যান্টিহাইপারগ্লাইসেমিক ড্রাগ (ক্লোরোপ্রোপামাইড, টলবিউটামাইড), ওয়ারফেরিন, ইস্ট্রোজেন, জ্ননিয়ন্ত্রণ বড়ি প্রভৃতি টেরাটোজেনিক প্রভাব ফেলতে পারে।
ফেটোটক্সিক টেরাটোজেনিকের মতোই ভ্রূণ গঠনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, এমন মা ওষুধ ব্যবহার করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সামান্য পরিমাণে হলেও তা দুধের সঙ্গে বের হয়। ফলে তা শিশুর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। নারকোটিক, বারবিচুরেট ও বেনজোডায়াজিপাইন-যেমন ডায়াজিপাম ব্যবহার, বিশেষ করে তা অতিরিক্ত নিলে শিশুর হিপনোটিক প্রভাব ও ঘুম হতে পারে। তাই এ সময় ওষুধ ব্যবহারে, বুকের দুধ খাচ্ছে, এমন শিশুর কখনো কখনো ডায়রিয়া ও নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যা হতে পারে। গর্ভাবস্থায় যেকোনো ওষুধ নিতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আর বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, এমন মায়েদের ওষুধ যদি খেতেই হয়, সে ক্ষেত্রে শিশুকে দুধ খাওয়ানো বন্ধ রাখা ভালো।
শিশুদের ক্ষেত্রে, রোগীর বয়স-সম্পর্কিত ওষুধের শোষণ, বিস্তৃতি, বিপাক ও নির্গমনবৈশিষ্ট্য ওষুধের কার্যকারিতার ওপর প্রভাব ফেলে। নবজাতকের ক্ষেত্রে মুখে খাওয়ার ওষুধগুলো শোষণে তারতম্য দেখা যায়। আবার শিশুদের ত্বক পাতলা হওয়ার কারণে ত্বকে লাগানো ওষুধ দ্রুত শোষিত হয়। পানিতে দ্রবীভূত ওষুধ শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি বিস্তৃতি ঘটে। কিন্তু লিপিডে দ্রবীভূত ওষুধ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ক্ষেত্রে আস্তে আস্তে শরীরে বিস্তৃত হয়।
শিশুদের স্মায়ুতন্ত্র নারকোটিক, বারবিচুরেটস ও বমিরোধক ওষুধের প্রতি সংবেদনশীল। অনেক সময় কিছু ওষুধ গ্রহণের ফলে শিশুদের ক্ষেত্রে ত্বকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যেমন-অ্যালার্জিক বিক্রিয়া, আর্টিকারিয়া, ইডিমা, এনাফাইলেক্সিস প্রভৃতি। তেতো ওষুধ শিশুরা সাধারণত খেতে চায় না বা মুখ থেকে ফেলে দেয়। সে ক্ষেত্রে ওষুধের পুরোপুরি কার্যকারিতা পাওয়ার জন্য পরিমিত মাত্রা পুনরায় দেওয়া দরকার। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যেন মাত্রা বেশি হয়ে না যায়।
বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে বয়সগত শারীরিক পরিবর্তন এবং সেই সঙ্গে ওষুধের ফার্মাকোকাইনেটিক বৈশিষ্ট্যগুলোর পরিবর্তনের কারণে ওষুধের কার্যকারিতার কিছুটা অসামঞ্জস্য দেখা যায়। তাই ওষুধের সঠিক মাত্রা নির্ধারণ খুবই জরুরি। অনেক সময় বয়স্ক রোগীরা ভুল করে একই ওষুধ দুবার বা একটার বদলে অন্যটা খেয়ে ফেলে। সে জন্য ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র ভালোভাবে খেয়াল করা উচিত।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২৩, ২০০৮
Leave a Reply