শিশুদের খাওয়ানো নিয়ে মা-বাবারা সব সময় উদ্বিগ্ন। শিশু যথেষ্ট খায় না, শিশু অপুষ্টির শিকার হয়ে যাচ্ছে বা শিশু যথেষ্ট স্বাস্থ্যবান নয়—এসব ভেবে অভিভাবকেরা বারবার জোর করে শিশুকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এতে পরে শিশু স্থূলকায় হয়ে পড়তে পারে, আবার খাবারের প্রতি অনীহাও বাড়তে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের খিদে লাগলেই কেবল তাদের খাওয়ানো উচিত; এতে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা নেই। আর বৃদ্ধিও ভালো হয়। একে বলা হয় রেসপনসিভ ফিডিং বা খাওয়ানোর বিষয়ে অভিভাবকের দায়িত্বশীল আচরণ। এই অভ্যাস শুরু করতে হবে দুই বছর বয়সের আগেই।
অনেকে বলতে পারেন, এত ছোট বয়সে শিশু খিদের কথা কীভাবে বোঝাবে? আসলে সরাসরি মুখে না বললেও কিছু ইঙ্গিতের মাধ্যমে বাচ্চারা খাবারের প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করে। ইঙ্গিতগুলো হলো বাচ্চা মুখের ভেতরে বা এর চারপাশে হাত দিতে থাকবে, খাবার চোষার মতো শব্দ করবে, পেটে হাত রাখবে, অস্থিরতা করে হাত-পা ছুড়বে। এসবেও কাজ না হলে সবশেষে কাঁদবে। কান্না কিন্তু সব শেষ লক্ষণ, তাই এর আগেই বাচ্চাকে খাওয়ানো উচিত।
আবার বাচ্চা ক্ষুধার্ত বলে অনেক খাবার নিয়ে যত খুশি তত জোর করে খাইয়ে দেওয়া উচিত নয়। বাচ্চার পেট ভরেছে বুঝতে পারলেই খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। জোর করা চলবে না। কিছু লক্ষণ দেখে বাচ্চার খিদে মিটেছে কি না, তা-ও বোঝা যায়। যেমন বাচ্চা খুব দ্রুত খাওয়া শুরু করেই বন্ধ করে দিচ্ছে, বুকের দুধ কিংবা অন্য খাবার আর মুখে দিচ্ছে না, থুতু দিচ্ছে বা বমি করে ফেলছে, বুকের দুধ ছেড়ে দিচ্ছে, মায়ের স্তন বা অন্য খাবার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, আগের চেয়েও ধীরে খাচ্ছে কিংবা ঘুমিয়ে পড়ছে।
যদি এমন হয় যে আপনি ইঙ্গিতে বুঝলেন বাচ্চার খিদে মিটেছে, কিন্তু মনে হচ্ছে সে অন্যদিনের তুলনায় কম খেয়েছে, তবু জোর করে আর খাওয়ানো উচিত নয়। শিশুর ভাষা ও ইশারা বোঝার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনাতিরিক্ত খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না।
ডা. আবু সাঈদ
শিশু বিশেষজ্ঞ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সোর্স – প্রথম আলো
Leave a Reply