আর্থ্রাইটিস মানে গিরার প্রদাহ। কিন্তু আদতে সব ধরনের আর্থ্রাইটিসে এই প্রদাহ থাকে না। যদিও অনেকেই গিরার যেকোনো ব্যথা-বেদনাকে বাতরোগ বলে বিবেচনা করেন।
আর্থ্রাইটিস প্রদাহজনিত বা প্রদাহবিহীন—দুই রকমের হতে পারে। বেশির ভাগ ব্যথার কারণ প্রদাহবিহীন; যা কিনা আমাদের অঙ্গভঙ্গি ও জীবনযাপনের ভুল অভ্যাস থেকে সৃষ্ট।
প্রদাহজনিত ব্যথার কারণ সাধারণত বাতরোগ। এতে প্রদাহের উপসর্গ, যেমন ব্যথার সঙ্গে সন্ধি ফুলে যাওয়া, রং পরিবর্তন হওয়া, জড়তা ও ধীরে ধীরে গিরা বিনষ্ট হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। নানা ধরনের বাতরোগ আছে। যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অ্যাংকাইলোজিং স্পনডাইলাইটিস, রিঅ্যাকটিভ আর্থ্রাইটিস, সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি। শিশুদেরও বাতরোগ হতে পারে। জুভেনাইল আর্থ্রাইটিস বা রিউমাটিক ফিভার মূলত শিশু-কিশোরদেরই হয়। কিছু রোগে সন্ধি ছাড়াও দেহের আরও নানা অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়; যেমন লুপাস বা সিস্টেমিক স্কে¬রোসিস। আবার সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসে বাতের সঙ্গে ত্বকে সমস্যা থাকে। বাতরোগের ব্যথা বিশ্রাম নিলে কমে না, বরং সকালবেলা ঘুম ভেঙেই বেশি থাকে, তার সঙ্গে থাকে জড়তা। চিকিৎসা না করলে সন্ধি ধীরে ধীরে বিকলাঙ্গ হয়ে যায়, পঙ্গুত্ব দেখা দেয়।
* ব্যথানাশক, স্টেরয়েড ওষুধ খেলে বা ইনজেকশন নিলে সব ধরনের ব্যথার উপশম হয় বটে, কিন্তু এটি বাতরোগের মূল চিকিৎসা নয়। ব্যথা কমলেও এতে সন্ধি নষ্ট হওয়া প্রতিহত করা যায় না, বরং ওষুধ বন্ধ করলেই ব্যথা দ্বিগুণ আকারে দেখা দেয়। তার ওপর দীর্ঘমেয়াদি ব্যথানাশক ও স্টেরয়েড সেবনের নানা ঝুঁকিও আছে।
* বাতরোগের নানা ধরনের আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। কিন্তু মনে রাখবেন, এই রোগ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাবে না। রোগ নিয়ন্ত্রক ওষুধ খেয়ে রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে এবং বিকলাঙ্গতা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
* কিছু কিছু বাতরোগ সন্ধি ছাড়াও কিডনি, রক্তনালি, মস্তিষ্ক, ত্বক ইত্যাদি নানা অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কেবল ব্যথানাশক খেয়ে এই জটিলতা এড়ানো যাবে না। তার জন্য চাই সঠিক সময়ে সঠিক মাত্রায় রোগ নিয়ন্ত্রক ওষুধের ব্যবহার। তবে এসব ওষুধেরও নানা ধরনের জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। তাই কেবল ওষুধ খেলেই হবে না, সার্বক্ষণিক ফলোআপেরও প্রয়োজন আছে।
এবার বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবসের স্লোগান হচ্ছে, নিজের এই ব্যথা ও বাত নিয়ন্ত্রণে প্রথম পদক্ষেপ আপনার। এগিয়ে আসতে হবে আপনাকেই। সঠিক বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসার শরণাপন্ন হোন।
ডা. রওশন আরা : মেডিসিন ও বাতরোগ বিশেষজ্ঞ,
গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
সোর্স – প্রথম আলো।
Leave a Reply