ডা· এস কে অপু
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
ময়মনসিংহ চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়
বন্ধুর কথা, ‘আমার হার্ট অ্যাটাক হবে কি না তা কী করে বুঝব? তার চেয়ে অ্যাটাক হলে পরেই চিকিৎসা করাব।’ বন্ধুটি আরও বলল, ‘তিন বেলা ভাত না খেলে চলে না। প্রতিদিন কয়েক টুকরো মাংস তো চাই-ই।’ কিন্তু এক মাস যেতে না যেতেই তাঁর হার্ট অ্যাটাক! ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে। একেবারে শ্বাসকষ্ট- হার্ট ফেইলিওর।
হার্ট অ্যাটাক যেন না হয় সে জন্য অবশ্যই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের পথ বাতলে দেন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু পরীক্ষা আছে যা রক্ত বা রক্তরস নিয়ে দেখা হলে এর মধ্যে এমন কিছু পাওয়া যায়, যাতে ধরা যেতে পারে একটি লোকের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এমনটা হলে দেরি না করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে তা এড়ানো যায়। যেমন-রক্তে এপো-লাইপোপ্রোটিন-বি (এপো-বি) কতটুকু আছে, তা জেনে বলে দেওয়া যায়, মন্দ চর্বি এলডিএল রক্তে কতটুকু। এই মন্দ চর্বি বেশি থাকা মানেই হার্ট অ্যাটাক হওয়ার বেশি আশঙ্কা।
তেমনি রক্তে এপো-লাইপোপ্রোটিন-ই ৪ (এপো-ই ৪)-এর পরিমাণ জেনে এর মাধ্যমে খাদ্যের ধরন কতটা পরিবর্তন করতে হবে, আর কতটা খাপ খাওয়াতে হবে, তা জানতে পারবেন। লাইপোপ্রোটিন-এ (এলপি-এ)-এর কথা জানেন। অন্য সূচকগুলো স্বাভাবিক থাকলেও এই প্রোটিনের বৃদ্ধি বিপজ্জনক। এই প্রোটিনের এক ভাগ বৃদ্ধি পেলেই হার্ট অ্যাটাকের ৩০০ ভাগ আশঙ্কা বেড়ে যায়। এ ছাড়া ‘্নল এলডিএল’ রক্তে বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা চলছে।
অনেকেই আজকাল ‘হোমোসিস্টিন’-এর কথা জানেন। এটি প্রাকৃতিক অ্যামাইনো এসিড। শরীরে তৈরি হয়ে আবার বের হয়েও যায় নানা প্রক্রিয়ায়। কিন্তু অ্যামাইনো এসিডের মাত্রা রক্তে বেড়ে গেলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। উচ্চ ঘনত্বের কোলেস্টেরল ‘এইচডিএল’-টুবি হার্ট ও হার্টের রক্তনালিকে বাঁচিয়ে রাখে, সুরক্ষা নিশ্চিত করে। কিন্তু এই ভালো চর্বি কমে গেলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
একটি ব্যাকটেরিয়ার কথা হয়তো আমরা অনেকেই জানি। নাম ‘ক্লেমাইডিয়া নিউমোনি’। এটি রক্তে পাওয়া গেলে বিপজ্জনক। হার্টের ভীষণ ক্ষতি করে-হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়। একটি পরীক্ষার নাম ‘সিআরপি’ অর্থাৎ সি-রিয়েকটিভ প্রোটিন। রক্তে এটি বেড়ে গেলে ধরা যায় ধমনিতে প্রদাহ চলছে। বেশি হলে প্রদাহ আরও বাড়বে। একসময় হার্টের ক্ষতি করবে। ‘রক্তের ফিব্রিজান’ পরীক্ষা করে যদি দেখা যায় অনেক বেশি, তাহলে তা হার্টের জন্য ক্ষতিকর বটে। এ পদার্থ রক্তকে দ্রুত জমাট বাঁধতে ভূমিকা রাখে। ফলে হার্ট অ্যাটাক হয়।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তে ইনসুলিন ক্রমশ বাড়তে থাকলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও বেড়ে যায়, যদিও এই হরমোন ডায়াবেটিসের সঙ্গে সম্পর্কিত। এসব পরীক্ষার পর মাত্রা দেখে অন্তত ধরে নেওয়া যায়, কোন লোকের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কতটুকু আশঙ্কা আছে। এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে সহজেই জীবন বাঁচানো সম্ভব।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৬, ২০০৮
কাজল চন্দ্র দাস
অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখা দেওয়ার জন্য এস কে অপু স্যারকে আন্তরিক ধন্যবাদ। তিনি আমার মা’র চিকিৎসা করছেন। আমার মা এখন ভাল।
কাজল
ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ।