দীর্ঘমেয়াদি কোমরের ব্যথা, ক্ষয় ওঅন্যান্যউপসর্গ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শেষ পর্যায়ের আধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে সম্পূর্ণ কোমর প্রতিস্থাপন বা টোটালহিপ রিপ্লেসমেন্ট। উন্নত বিশ্বে অনেক আগেই এ ধরনের চিকিৎসা চালু হয়েছে।বাংলাদেশে বেশ কিছুদিন হলো সম্পূর্ণ কোমর প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচার চলছে।
বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেলবিশ্ববিদ্যালয় ও সিটি হাসপাতালে সম্প্রতি সাশ্রয়ী খরচে গুণগত মান বজায় রেখে সম্পূর্ণ কোমর প্রতিস্থাপনের মতো জটিল অস্ত্রোপচার সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন তরুণ অর্থোপেডিকস বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা· আবু জাফর চৌধুরী বিরু। এ নিয়ে আজকের ‘স্বাস্থ্যকুশল’-এর প্রধান আয়োজন ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসায় যখন কোমরের ব্যথা, ক্ষয় এবং অন্যান্য উপসর্গ থেকে মুক্ত হওয়া যায় না, সম্পূর্ণ কোমর প্রতিস্থাপন বা টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্টই হচ্ছে তখন মোটামুটি শেষ চিকিৎসা। টোটাল হিপ রিপ্লেসমেন্ট (যাকে অনেক সময় টোটাল হিপ আর্থোপ্লাস্টি বলা হয়) অস্থিসন্ধির ব্যথা থেকে মুক্তি দিয়ে স্বাভাবিক কাজের জন্য পরিপূর্ণ মাত্রায় এর সচলতা ফিরিয়ে আনতে পারে।
হিপ রিপ্লেসমেন্ট বা কোমর প্রতিস্থাপন কী কোমর প্রতিস্থাপন সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করে দেয়। হিপ জয়েন্ট বা ঊরুর সংযোগস্থলে দুটি হাড়ের সংযোগ। একটি হেড অব দ্য ফিমার আর অন্যটি অ্যাসিটাবুলাম। এ চিকিৎসাপদ্ধতিতে দুই হাড়ের সংযোগে দুটি অংশই প্রতিস্থাপন করা হয়। হেড অব দ্য ফিমার ও অ্যাসিটাবুলাম দুই-ই আর্টিফিশিয়াল প্রস্থেসিস এবং বোন সিমেন্টের (হাড় সিমেন্ট) মাধ্যমে প্রতিস্থাপনের পদ্ধতিই হলো কোমর প্রতিস্থাপন।
কেন প্রয়োজন, কাদের জন্য
যাদের এ জোড়ায় সমস্যা আছে। সমস্যা আবার নানান কারণে হতে পারে। যেমন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকেই বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে ভুলে গিয়ে মোটা বা চিকন হওয়ার নানা অবৈজ্ঞানিক কবিরাজি চিকিৎসাপত্র নিয়ে থাকে, যা একদম উচিত নয়। এ ধরনের ওষুধ সেবনের ফলে হেড অব দি ফিমার হাড়ের অগ্রভাগ শুকিয়ে যেতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে এক সময় কার্যকারিতা হারায়। অথবা কোনো আঘাতজনিত কারণে হাড় ভেঙে গেলে এবং সঠিক সময়ে তার চিকিৎসা না করা হলে দীর্ঘদিন পর আক্রান্ত স্থানে এ ধরনের বাত দেখা দেয়। এ ছাড়া বাতজনিত নানা সমস্যা যেমন রিউমাটয়েড আর্থোইটিস, অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পনডিলাইটিস ইত্যাদি সমস্যা যাদের দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে, তারাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
— যখন ব্যথার জন্য রাতে ঘুমাতেও অসুবিধা হয়
— ওষুধেও যখন ব্যথা কমে না, কিংবা ব্যথার উন্নতি খুব সামান্য
— সিঁড়ি দিয়ে উঠতে বা নামতে সমস্যা হলে
— বসা থেকে দাঁড়াতে সমস্যা হলে
— অতিরিক্ত ব্যথার কারণে আপনার নৈমিত্তিক অভ্যাস থেকে, যেমন হাঁটাচলা থেকেও বিরত থাকতে
হলে।
— মলমূত্র ত্যাগের জন্য বসার ভঙ্গির ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিলে।
— স্বাভাবিক হাঁটাচলা ব্যাহত হলে।
অস্ত্রোপচারের পরের অবস্থা
সাধারণত দু-তিন ঘণ্টার মধ্যেই এই অস্ত্রোপাচার করা হয়ে যায়। এরপর দু-তিন দিন হাসপাতালে অবস্থান করতে হয়। এক-দুই দিনের মধ্যেই উঠে বসা যায়, এমনকি হাঁটাচলা করার পরামর্শও দেওয়া হয়ে থাকে।বাসায় ফিরে যাওয়ার পর চিকিৎসকের দেওয়া কিছু পরামর্শ মেনে চলতে হয়। যেমন পায়খানার জন্য উঁচু কমোড ব্যবহার করাসহ কিছু সুনির্দিষ্ট ব্যায়াম। দেড় থেকে দুই মাস পর চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে উন্নতি যাচাই ও পরামর্শ নিতে হয়।
কোমর প্রতিস্থাপনের ফলাফল
৯০ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে কোমর প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচার সফল হয়ে থাকে। অস্ত্রোপচারের ফলে স্বাভাবিক সব কাজই করা যায়। তবে এ অবস্থায় ঝুঁকিসাধ্য কাজ, যেমন দৌড়ঝাঁপ করার চেষ্টা না করাই ভালো।
চিকিৎসাব্যবস্থা কোথায় কেমন
এ রোগের চিকিৎসা এখন অর্থোপেডিক রোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় অস্ত্রোপচার। তবে এর সফল অস্ত্রোপচার এখন বাংলাদেশে সম্ভব।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, সিটি হাসপাতাল, অ্যাপোলো হাসপাতাল প্রভৃতি স্থানে এ রোগের সফল অস্ত্রোপচার হচ্ছে। মনে রাখা জরুরি, এ অস্ত্রোপচারের পূর্বশর্ত হলো নিশ্চয়তায়সম্পন্ন ও উচ্চতর বৈজ্ঞানিক সুবিধাসমৃদ্ধ হাসপাতাল। বহুদিন ধরে এ অস্ত্রোপচার উন্নত বিশ্বে প্রচলিত হলেও আমাদের দেশে এর সফলতা সবে পথ চলতে শুরু করেছে। তবে এখন তা শতভাগ সফলতার সঙ্গেই সম্পন্ন হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও সিটি হাসপাতালে সম্প্রতি সাশ্রয়ী খরচে গুণগত মান বজায় রেখে সম্পূর্ণ কোমর প্রতিস্থাপনের মতো জটিল অপারেশন সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছেন তরুণ অর্থোপেডিকস বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা· আবু জাফর চৌধুরী বিরু।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ১৬, ২০০৮
Leave a Reply