বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের মধ্যে স্থূলতার সমস্যা এখন অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
বুধবার ‘ওয়ার্ল্ড ওবিসিটি ডে’ সামনে রেখে আগের দিন মঙ্গলবার ওই গবেষণা নিয়ে যুক্তরাজ্যের মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজ যৌথভাবে ওই গবেষণা কার্যক্রম চালায়।
অপুষ্টির কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের শিশুর সংখ্যা বিশ্বের যেসব দেশে বেশি, দীর্ঘদিন ধরেই সেসব দেশের তালিকায় বাংলাদেশ থাকে প্রথম দিকে।
গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশকে হয়ত এখন অপুষ্টি ও স্থূলতার ‘দ্বৈত বোঝা’ একসঙ্গে বহন করতে হবে।
নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোয় স্থূলতা বাড়ছে, বিশেষত সাম্প্রতিক সময়ে এশিয়ায় তা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে বলে দেখতে পেয়েছেন গবেষকরা।
অন্যদিকে উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে স্থূলতা বাড়ার প্রবণতা কিছুটা থিতিয়ে এসেছে।
পাঁচ থেকে ১৯ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের তথ্য নিয়ে পরিচালিত এ গবেষণায় ১৯৭৫ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত শিশু, বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোর এবং প্রাপ্তবয়স্কদের বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) তুলনা করে মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতার চিত্র তুলে আনা হয়েছে।
কোনো ব্যক্তির উচ্চতার সঙ্গে ওজনের তুলনা করে হিসাব করা হয় তার বিএমআই, যা দিয়ে বোঝা যায় তার ওজন স্বাস্থ্যকর মাত্রায় রয়েছে কিনা।
গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ২০১৬ সালে ছেলেদের মধ্যে স্থূলতার হার ছিল ৩ শতাংশ; যা ১৯৭৫ সালে ছিল মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। আর মেয়েদের মধ্যে স্থূলতার হার চার দশক আগের শূন্য থেকে বেড়ে হয়েছে শতকরা ২ দশমিক ৩ ভাগ।
স্থূলতা বাড়ার পেছনে খাদ্যাভ্যাস, খাবারের বিপণন এবং সরকারের খাদ্য নীতিকে দায়ী করেছেন গবেষকরা।
স্থূলতা নিয়ে বড় হতে থাকা শিশু ও কিশোরদের হার বাড়তে থাকায় ভবিষ্যতে তাদের ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ছে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন নিবন্ধের প্রধান লেখক ইমপেরিয়াল স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক মাজিদ ইজ্জাতি।
তিনি বলেন, “বাসাবাড়ি ও স্কুলে স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার তৈরির পথ বের করতে হবে আমাদের; বিশেষ করে গরীর পরিবারগুলোর জন্য। অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে শিশুদের রক্ষা করতে নীতিমালা প্রণয়ন ও কর আরোপও জরুরি।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্ব এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলসহ মধ্য আয়ের দেশগুলোয় স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের শিশু-কিশোরের সংখ্যা থেকে স্থূল শিশু-কিশোরের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
অন্যদিকে বিশ্বের দরিদ্র অঞ্চলগুলোতে কম ওজনের শিশুর তুলনায় স্থূল শিশুর সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যে আরও বাড়ার আশঙ্কা থাকলেও অপুষ্টির কারণে কম ওজনের শীর্ণকায় শিশুর সমস্যাও থেকে যাবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) শৈশবের মুটিয়ে যাওয়া ঠেকাতে একটি পরিকল্পনার কথা বলছে, যেখানে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেশগুলোর প্রতি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
ডব্লিউএইচওর অসংক্রাম রোগ পর্যবেক্ষণ ও প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মসূচি সমন্বয়ক ডা. ফিওনা বুল বলেন, কম পুষ্টিকর ও বেশি ক্যালরি সমৃদ্ধ, সস্তা ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যবহার কমিয়ে আনতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।
চিনির বিরুদ্ধে যুদ্ধ
স্থূলতাসহ অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে দুই বছর আগে চিনিযুক্ত বেভারেজ পণ্যের ওপর বাড়তি ১০ শতাংশ কর আরোপ করেছে মেক্সিকো।
দেশটির জাতীয় রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের মহাপরিচালক ডা. হেসুস ফিলিপো গনজালেস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে জনস্বাস্থ্য, স্বাস্থ্যসেবা এবং নিয়ন্ত্রণমূলক আর্থিক নীতি- এ তিন স্তরের পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা।
জনস্বাস্থ্য নীতির উদ্দেশ্য হল- প্রচার চালিয়ে জনগণকে স্বাস্থ্যসম্মত জীবন ধারণের বিষয়ে উৎসাহিত এবং সচেতন করা। স্বাস্থ্যসেবা নীতির লক্ষ্য, সবার জন্য গুণগত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। আর নিয়ন্ত্রণমূলক আর্থিক নীতিকাঠামোতে অস্বাস্থ্যকর খাবারের ব্যবহার কমাতে পণ্যের মোড়ক ও বিজ্ঞাপণ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি করারোপের মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
শৈশবকালীন স্থূলতা নিয়ে মেক্সিকো সিটিতে একটি ক্লিনিকও খোলা হয়েছে। সেখানে লেতিসিয়া মার্তিনেজ গাইতান নামে এক কিশোরীর সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
মুটিয়ে যাওয়ার কারণে প্রচণ্ড হতাশা তৈরি হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন আমি হাসপাতাল থেকে পরামর্শ নিচ্ছি। আমার খাবার নিয়ন্ত্রণে এনেছি; নিয়মিত ব্যায়াম করছি। স্বাস্থ্য ঠিক করাই আমার লক্ষ্য।”
সোর্স – বিডিনিউজ২৪ ডট কম।
ছবি: রয়টার্স
Leave a Reply