শামীম আলম খান, ফার্মাসিস্ট
অনেকের ধারণা, ড্রাগ মানে যা খেলে নেশা বা আসক্তির সৃষ্টি হয়। আসলে এটা ঠিক নয়। যে রাসায়নিক বা উদ্ভিজ্জ উপাদান বা রস, যার ফার্মাকোলজিক্যাল অ্যাকশন বা ব্যবহারের কারণে শরীরে প্রতিক্রিয়া হয়, তাকেই ড্রাগ বলা যেতে পারে।
ড্রাগ যখন কোনো নির্দিষ্ট রোগের জন্য নির্দেশিত মাত্রার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন আকারে তৈরি করে বাজারজাত করা হয়, তখন তাকে ওষুধ বলা হয়। এর মধ্যে ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, সিরাপ, সাসপেনশন, ইনজেকশন প্রভৃতি অন্যতম।
ক্রিম ও অয়েন্টমেন্ট, যা শুধু বাহ্যিক ব্যবহারের জন্য। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায়, চোখের রোগের জন্য রয়েছে আই-অয়েন্টমেন্ট। রয়েছে চোখের ড্রপ। নেজাল ড্রপস ও ইয়ার ড্রপস, যা যথাক্রমে নাক ও কানের জন্য তৈরি।
সিরাপ ও ড্রপ সাধারণত বাচ্চাদের জন্য। তবে অনেক সময় অনেক বয়স্ক রোগী ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল খেতে সমস্যা বোধ করেন; সে ক্ষেত্রে সমান মাত্রার সিরাপ খাওয়া যেতে পারে। রয়েছে সাসটেইন্ড রিলিজ ট্যাবলেট, যা ট্যাবলেটের বিশেষ ফর্মুলেশন। এর মাধ্যমে সাধারণ ট্যাবলেট দিনে তিন-চারবার সেবনের বদলে এক-দুবার গ্রহণ করে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
অ্যাকিউট অ্যাজমা বা তীব্র শ্বাসকষ্টে ইনহেলার ব্যবহৃত হয় এবং দ্রুত কার্যকারিতা পাওয়া যায়। ইনজেকশন সাধারণত শিরা ও পেশিতে দেওয়া হয়ে থাকে। আবার ইনসুলিন ইনজেকশন ত্বকের সাবকিউটেনিয়াস স্তরে দিতে হয়।
জ্বর বা শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা কমানোর জন্য সাপোজিটরি, যেমন-প্যারাসিটামল সাপোজিটরি মলদ্বারে প্রবেশ করানো হয় এবং এটা খুব দ্রুত কার্যকর হয়। আবার ডাইক্লোফেনাক সাপোজিটরির মাধ্যমে দ্রুত ব্যথা কমানো যায়। মেয়েদের যোনিপথে বিভিন্ন প্রদাহের জন্য ভ্যাজাইনাল ট্যাবলেট ব্যবহারের মাধ্যমে তাড়াতাড়ি ফল পাওয়া যায়।
রয়েছে ট্রান্সডারমাল প্যাঁচ, যা শরীরের সমান ও রোমবিহীন অংশে লাগাতে হয় এবং সেই প্যাঁচ থেকে ত্বকের মাধ্যমে ওষুধ শোষিত হয় এবং কাজ করে। যেমন ক্যান্সারের ব্যথা নিরাময়ে এ প্যাঁচ ব্যবহৃত হচ্ছে।
ওষুধের এত সব গঠনের মধ্যে কখন কোনটা ব্যবহৃত হবে, তা নির্ভর করে রোগের ধরনের ওপর। যেমন অভ্যন্তরীণ কোনো ব্যাপার হলে ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল, ত্বকের সমস্যায় ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট; রোগের তীব্রতার ক্ষেত্রে প্রথমে ইনজেকশন বা ইনফিউশন, পরে খাওয়ার ওষুধ।
বয়স ও লিঙ্গভেদে ওষুধ সব সময় এক রকম নয়। একই ওষুধ সব আকারে থাকে না।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ০৯, ২০০৮
Leave a Reply