অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস
বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
সারা বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। বাংলাদেশে এ রোগের চিকিৎসার বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান বারডেমে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার রোগীর সমাগম হয়। তাদের সবার ডায়াবেটিস না হলেও অনেকেরই ডায়াবেটিস। এর পরও কথা থাকে, ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা খুব জোরালো তা বলা যাবে না। বিপুলসংখ্যক মানুষ জানে না যে তাদের রয়েছে ডায়াবেটিস।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত চিকিৎসা ও প্রযুক্তির দেশেও ৬২ লাখ মানুষ জানে না যে তাদের রয়েছে ডায়াবেটিস। এ নিয়ে গবেষণা করেছেন বাল্টিমোরের জন হপকিন্স স্কুল অব মেডিসিনের ডা· ক্রিস্টোফার সাউডেক, যাঁর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ৩০ শতাংশ লোকেরই জানা নেই যে তাদের আছে ডায়াবেটিস। বলা হচ্ছে, ডায়াবেটিস রোগের আরও উন্নত স্ক্রিনিং ও রোগ নির্ণয় প্রয়োজন। ডায়াবেটিস চিহ্নিত করার বর্তমান নীতিসূত্রে গলদ রয়েছে এবং এতে রোগ বাড়ছে, অথচ একে এড়ানো যেত। রুগ্ণতা ও মৃত্যু অনেকটাই পরিহার করা যেত।
তাই একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল এ রোগের স্ক্রিনিং ও রোগ নির্ণয়ের বর্তমান সূত্র পরীক্ষা করে দেখেছে এবং এ ব্যাপারে যে পরামর্শ দিয়েছে, তা প্রকাশিত হয়েছে দ্য জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল এনডোব্রিনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম-এর ২০০৮-এর জুন সংখ্যায়।
বেশির ভাগ রোগী চিহ্নিত হয় না; এর একটি বড় কারণ হলো, বেশির ভাগ পরীক্ষা করতে হয় উপোস অবস্থায়। ডা· সাউডেক বলেন, যেদিন চিকিৎসককে দেখাল, সেদিন হয়তো রোগী খালি পেটে নেই, পরীক্ষাও হলো না, পরে আর পরীক্ষা করায় না। যখন ডায়াবেটিস বেশ অগ্রসর হয়ে যায়, তখন হয়তো পরীক্ষায় ধরা পড়ল ডায়াবেটিস।
তাই বিশেষজ্ঞ প্যানেল রোগনির্ণয় সূত্রে ভিন্ন একটি পরিমাপ অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলল। এইচবিএ১সি এবং হিমোগ্লোবিন এ১সি পরীক্ষা।
হিমোগ্লোবিন হলো অক্সিজেনবাহী প্রোটিন, যা রয়েছে লোহিত কণিকার ভেতর। হিমোগ্লোবিন এ১সি হলো হিমোগ্লোবিনের এমন একটি ধরন, যা মাপলে বিগত কয়েক মাসের রক্তে সুগারের গড় মান সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের রক্তে সুগারের মান সম্পর্কে ধারণা করার জন্য এবং রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে আছে কি না তা বোঝার জন্য এ পরীক্ষা করা হচ্ছে অনেক আগে থেকেই। তবে একে স্ক্রিনিং বা রোগনির্ণয় পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা হয়নি।
আমেরিকান ডায়াবেটিস সমিতি এ পরীক্ষাকে এক দশক ধরে এভাবে ব্যবহারের জন্য বিবেচনা করেনি। তবে বর্তমানে এটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য তাগিদ অনুভূত হচ্ছে। এর পক্ষে বেশ যুক্তিও রয়েছে। এইচবিএ১সি পরিমাপের জন্য রোগীকে উপোস থাকতে হয় না এবং খালি পেটে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
অথচ বর্তমানে প্রচলিত পরীক্ষায় রোগীকে অন্তত আট ঘণ্টা উপোস থেকে রক্ত দিতে হয়। এইচবিএ১সি পরীক্ষা দ্বারা রক্তে দীর্ঘ মেয়াদে গ্লুকোজের মানের প্রতিফলন পাওয়া যায়, তবে স্বল্পমেয়াদি জীবনযাপন পরিবর্তন, যেমন-কয়েক দিনের ডায়েটিং বা ব্যায়াম অন্যান্য পরীক্ষার ওপর প্রভাব ফেলে। এ ছাড়া এইচবিএ১সি পরীক্ষা এখন যথেষ্ট প্রমিত ও নির্ভরযোগ্য।
বিশেষজ্ঞ প্যানেলের পরামর্শ হলো, এইচবিএ১সি-এর মান ৬ শতাংশের বেশি পাওয়া গেলে রোগীর ফলোআপ প্রয়োজন হবে। এইচবিএ১সি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মতো হলে বা এর বেশি হলে এবং সেই সঙ্গে গ্লুকোজ খাইয়ে রক্তের গ্লুকোজের মান দেখলে ডায়াবেটিস দৃঢ় প্রতিপন্ন করা হবে।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ০২, ২০০৮
Leave a Reply