অধ্যাপক ডা· এ কে এম ফজলুল হক
বৃহদান্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ
চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
মলদ্বারের ব্যথায় অনেক লোক ভুগে থাকে। ফিশার মানে মলদ্বারে ঘা অথবা ফেটে যাওয়া। এটি দুই ধরনের হয়। তীব্র মাত্রায় ফিশার হলে রোগীর মলদ্বারে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। দীর্ঘস্থায়ী ফিশারে অবশ্য ব্যথার তারতম্য হয়। এটি যেকোনো বয়সে হতে পারে। তবে তরুণ বয়সেই বেশি হয়। নারী-পুরুষ উভয়ই এতে সমানভাবে আক্রান্ত হতে পারে।
কারণঃ ফিশার হওয়ার জন্য সাধারণত দায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা মলত্যাগের সময় চাপ দেওয়া। এ ছাড়া শক্ত মল বের হওয়ার সময় মলদ্বার ফেটে যায় বলে ধারণা করা হয়। যারা আঁশযুক্ত খাবার খায়, তাদের এ সমস্যাটি কম হয় আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে শাকসবজি, কাঁচা ফলমূল, আলুর খোসা, ইসবগুলের ভুসি ইত্যাদি। চা-কফি বা মদ্যপানের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ঘন ঘন মলত্যাগ বা ডায়রিয়া হলে ফিশার হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
বিজ্ঞানীরা মলদ্বারের ভেতরের চাপ মেপে দেখেছেন। ফিশারে চাপ তেমন একটা বাড়ে না, যদিও আঙ্গুল দিয়ে পরীক্ষা করলে মলদ্বার অতিরিক্ত সংকুচিত বলে মনে হয়।
উপসর্গঃ ফিশারের প্রধান লক্ষণ হলো-ব্যথা ও রক্তক্ষরণ। ব্যথা সাধারণত মলত্যাগের পরে হয় এবং কয়েক মিনিট থেকে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে ব্যথা থাকতে পারে। প্রকটালজিয়া ফুগাক্স নামে একধরনের রোগেও মলদ্বারে ব্যথা হয়। তবে এ ব্যথা মলত্যাগের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। রক্ত জমাট বাঁধা পাইলসেও ব্যথা হয়, তখন মলদ্বারে চাকা থাকে বলে মনে করা হয়।
এ রোগে রক্তক্ষরণের পরিমাণ সাধারণত কম, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতেই পারে। দীর্ঘস্থায়ী এনাল ফিশারের রোগীদের একটু ভিন্ন ধরনের উপসর্গ হয়ে থাকে। কখনো কখনো মলদ্বারে অতিরিক্ত মাংসপিণ্ড, পুঁজ পড়া, চুলকানি-এগুলো একসঙ্গেও হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ থাকতে পারে বা না-ও থাকতে পারে। ব্যথা সাধারণত তীব্র হয় না; অবশ্য অনেক সময় ব্যথাই থাকে না।
ফিশারের রোগীরা অনেক সময় প্রস্রাবের সমস্যায় ভোগেন। মেয়েরা কখনো কখনো মিলনে ব্যথা অনুভব করে। যদিও রোগী বুঝতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণেই এমন হয়েছে; তবু যখন ব্যথা শুরু হয় তখন অনেকেই ভয়ে টয়লেটে যেতে চায় না এবং মলত্যাগের বেগ হলে তাতে ব্যথার ভয়ে সাড়া দিতে চায় না।
তীব্র ব্যথাযুক্ত ঘা বা একিউট ফিশারঃ এ সময় মলদ্বার পরীক্ষা করলে দেখা যায়, সেটা খুবই সংকুচিত অবস্থায় আছে। তীব্র ব্যথার কারণে মলদ্বারের ভেতরের ঘা পর্যবেক্ষণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। অবশ্য সরু যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করা যায়।
দীর্ঘস্থায়ী ব্যথাযুক্ত ঘা বা ক্রনিক ফিশারঃ ক্রনিক ফিশার বলা হয় যখন একটি সঠিকভাবে চিহ্নিত সীমানার মধ্যে ঘা দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে একটি মাংসপিণ্ড বা গেজ দেখা যায়। মলদ্বারের ভেতরেও একটি মাংসপিণ্ড দেখা যেতে পারে, যাকে অনেক সময় টিউমার বলে ভুল হয়। এ ক্ষেত্রে পায়ুপথের ভেতর যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করাতে হবে, যাতে টিউমার বা প্রদাহজনিত কারণ চিহ্নিত করা যায়। এ ফিশার সংক্রমিত হয়ে কখনো কখনো ফোঁড়া দেখা দিতে পারে এবং তা থেকে ফিস্টুলা (ভগন্দর) হয়ে পুঁজ পড়তে পারে।
প্রতিরোধঃ কোষ্ঠকাঠিন্য যাতে না হয় সে ব্যবস্থা নিতে হবে; বেশি শক্তি প্রয়োগ করে মলত্যাগ করা যাবে না। বারবার মলত্যাগের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। ডায়রিয়া হলে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে।
চিকিৎসা
রক্ষণশীল চিকিৎসাঃ একিউট ফিশারের শুরুতেই চিকিৎসা নিলে বিনা অপারেশনে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ সময় মল নরম করার, মলের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আঁশযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া উচিত। ব্যথানাশক ওষুধও ব্যবহার করা যেতে পারে। সিজ বাথ নিলে উপকার হয়। সিজ বাথ হচ্ছে আধ গামলা লবণ মিশ্রিত হালকা গরম পানির মধ্যে নিতম্ব ১০ মিনিট ডুবিয়ে রাখা। স্থানিক অবশকারী মলমও ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে যদি পুরোপুরি না সারে এবং রোগটি যদি বেশি দিন চলতে থাকে, তাহলে অপারেশন ছাড়া ভালো হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে।
সার্জিক্যাল চিকিৎসাঃ এনাল ডাইলেটেশন বা মলদ্বারের মাংসপেশির সম্প্রসারণ পদ্ধতির মাধ্যমে এ রোগের উপশম সম্ভব। তবে পদ্ধতিটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য বেশির ভাগ সার্জনই এটির বিপক্ষে। কারণ এতে কোনো কোনো রোগীর মল আটকে রাখার ক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা থাকে। মলদ্বারের স্কিংটারে অপারেশনঃ এ অপারেশনে মলদ্বারের অভ্যন্তরীণ স্কিংটার মাংসপেশিতে একটি সূক্ষ্ম অপারেশন করতে হয়। এতে অজ্ঞান করার প্রয়োজন নেই। দুই দিনের মধ্যেই রোগী বাড়ি ফিরে যেতে পারে। অপারেশনের তিন দিন পর স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের রোগীরা অনেক দেরি করে অপারেশন করায়। যে কারণে অনেক বেশি কাটাছেঁড়া করতে হয়। ফলে রোগী দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে না।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ১৬, ২০০৮
k
আমার বয়স ২৫ বছর.আমার বেশ অনেক দিন ধরে টয়লেট করার সময় মল পরিস্কার হয় না.অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করতে হয় .গাস্ত্রিক এর সমসসা আছে .পায়ু পথ মনে হয় বড় হওয়া গাছে বা কোনো পরিবর্তন হয়েছে .
মাঝে মধ্যে পেট ও বুক জালাপরা করে.তল পেট এ কামড় দিয়া পায়খানা আসে.
দয়া করে
আমার জন্য কোনো পরামর্স থাকলে দেবেন .
Bangla Health
শাকসবজি বেশি খান। এতে পায়খানা ঠিক হয়ে যাবে। আর নিয়মিত একটু শারীরিক পরিশ্রম, যেমন দৌড়ালে বুকজ্বলা কমে যাবে।