ওষুধ নিয়ে কথা
সুভাষ সিংহ রায়
ফার্মাসিস্ট
আমাদের সমাজে এমন অনেক লোক আছে, যারা ওষুধের কাজের চেয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে বেশি চিন্তিত। সম্ভবত এমন ধারণার বশবর্তী হয়ে অনেকে হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদ, হেকিমি, কবিরাজি ওষুধের প্রতি আস্থাশীল হয়ে ওঠে। অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার মতো এসব চিকিৎসা পদ্ধতিও চিকিৎসাবিজ্ঞানেরই একেকটি শাখা।
যেখানে বলা হয়ে থাকে ‘এসব ওষুধের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই’। সেখানে ধরে নিতে হবে সেসব ওষুধের কোনো ক্রিয়া নেই। ওষুধের ক্রিয়া থাকলে অবশ্যই তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মূলত নির্ভর করে ওষুধের ব্যবহারের ওপর। যেমন প্যারাসিটামল; জ্বর, মাথাব্যথা ইত্যাদি উপসর্গে এর চেয়ে বহুল ব্যবহৃত ওষুধ সারা বিশ্বে নেই।
জ্বর, মাথা ব্যথা এই জাতীয় উপসর্গে যত ওষুধ ব্যবহৃত হয়, এর মধ্যে প্যারাসিটামল সবচেয়ে নিরাপদ। কেননা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। তার পরও কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। লিভারের ক্রনিক রোগ কিংবা কিডনি ফেইলিওর রোগীদের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল ব্যবহার খুবই নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। ব্যথা কমানোর আরও ওষুধ আছে।
যেমন, আইবুপ্রফেন, ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম ইত্যাদি। এ ওষুধগুলো দিনের পর দিন খেলে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া লিভারের রোগ ও কিডনি ফেইলিওর রোগীদের জন্য এই ওষুধ খুবই স্পর্শকাতর। তাই যথেষ্ট সাবধানে এই ওষুধগুলো ব্যবহার করা উচিত। তা ছাড়া ব্যথা কমানোর ওষুধ খেলে অনেকের পেটে ব্যথা কিংবা কালো পায়খানা হতে পারে। এই লক্ষণগুলো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা সাইড এফেক্ট। আরেকটি বহুল ব্যবহৃত ওষুধ হচ্ছে অ্যান্টাসিড। একটু বদ হজম কিংবা গলাজ্বলা, পেটজ্বলা হলেই অনেকে অ্যান্টাসিড খাওয়া শুরু করে। উপশমও হয়তো হয়, কিন্তু এভাবে বেশি দিন খাওয়া কি ঠিক?
ওষুধবিজ্ঞান বলে, দিনের পর দিন অ্যান্টাসিড খেলে পাকস্থলীর পিএইচ পরিবর্তন হয়ে যায়, যা শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অহরহ রেনিটিডিন, ওমিপ্রাজল, এসওমিপ্রাজাল, লান্সোপ্রাজোল, পেন্টোপ্রাজোল ইত্যাদির ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে। বিগত তিন-চার বছরের ওষুধ বিক্রির পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায়, এ জাতীয় ওষুধ বিক্রির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশে এখনো সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় রেনিটিডিন।
রেনিটিডিন সর্তকভাবে ব্যবহৃত না হলে পাকস্থলীর অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। পাকস্থলীর পিএইচ পরিবর্তন হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাংলাদেশে বহু লোকই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ১৬, ২০০৮
Leave a Reply