কর্মজীবী নারীদের কাজের অংশ হিসেবে প্রায়ই অফিসের ভ্রমণে যেতে হয়। কিন্তু সন্তানকে বাড়িতে রেখে যাওয়াটা মায়ের জন্য একটা বড় চিন্তা হয়ে দাঁড়ায়। সব সময় সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়াও সম্ভব হয় না। যদি পরিবারে নির্ভরযোগ্য কোনো ব্যক্তি থাকেন, তবে তো তাঁর ওপর ভরসা করে পুরো পরিবারকে রেখে যাওয়া যায়। কিন্তু তা না থাকলে কী করবেন?
বাইরে যাওয়ার আগে ঘরের কাজ গুছিয়ে রেখে যেতে হবে; বিশেষ করে খাবারদাবার প্রস্তুত করে রেখে যেতে হবে বেশি করে। প্রয়োজনে বেশি করে বাজার করিয়ে রাখতে হবে। ডিম, দুধ—এগুলো বেশি করে এনে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করতে হবে, বলছিলেন একটি বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সানজিদা খান। তিনি যখন ঢাকার বাইরে যান, বিশেষ করে ১০-১২ দিনের কাজে গেলে খাবার বেশি করে রান্না করে রেফ্রিজারেটরে রেখে যান। আর কাপড়চোপড় আলমারিতে একটা তাকে গুছিয়ে রেখে যান।
কাজের প্রয়োজনে বাইরে তো যেতেই হবে কর্মজীবী নারীদের। সে ক্ষেত্রে পূর্বপ্রস্তুতি সম্পর্কে বলছিলেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের গৃহ-ব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ণ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রীনাত ফওজিয়া। তিনি বলেন, ‘নারীদের মধ্যে এখন কর্মব্যস্ততা বেড়েছে। কাজের তাগিদে তাঁকে ছুটতে হয়েছে সুদূরে। কর্মজীবী নারীদের জন্য সংসার রেখে ঢাকার বাইরে যাওয়াটা অসুবিধার হলেও নিজের ক্যারিয়ারের জন্য তো তাঁকে যেতে হয়। তবে কর্মজীবী নারী যেখানেই ট্যুরে যান, সে জন্য নিতে পারেন কিছু পূর্ব-ব্যবস্থাপনা।’
পরিবারের সদস্যসংখ্যা অনুযায়ী তালিকা করে রেখে যেতে পারেন। পরিবারের কে কোন কাজ করবেন, কখন করবেন—এ বিষয়টি সবাইকে ভাগ করে তালিকা করে দেওয়া যেতে পারে।
বেশি করে খাবার রান্না করে রেখে যেতে পারেন রেফ্রিজারেটরে। তবে রেফ্রিজারেটরে খাবার ছোট ছোট বক্সে ভাগ করে রাখতে হবে।
প্রতিটি বক্সে ততটুকু খাবার রাখতে হবে, তা দিয়ে যেন এক বেলার খাবার হয়ে যায়। তাই বড় বক্সে রান্না করা খাবার না রেখে ছোট ছোট বক্সে পর্যাপ্ত খাবার রাখা যেতে পারে।
প্রতিদিনকার কাজ—যেমন গাছে পানি দেওয়া, ঘর গোছানোর দায়িত্ব নির্দিষ্ট কাউকে দিতে হবে।
যদি পরিবারের ছেলেমেয়ে থাকে, তাহলে তাদের প্রতিদিনকার কাপড়চোপড় তুলে ভাঁজ করে রাখতে হবে নির্দিষ্ট স্থানে।
প্রয়োজনীয় বিল, কাগজপত্র—এসব হাতের নাগালে রাখতে হবে, যেন প্রয়োজনে খুঁজে পেতে সহজ হয়।
রান্নাঘরে হাতের কাছে লবণ, চিনি—এসব প্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৌটা রেখে যেতে হবে।
লন্ড্রিতে কাপড় দেওয়ার প্রয়োজন হলে সেগুলো সুন্দর করে নির্ধারিত স্থানে রেখে যেতে হবে।
সন্তানকে বাড়ির কিছু কাজ বুঝিয়ে দিয়ে যান। ছোটবেলা থেকেই তাকে নিজের কাজ করতে শেখান। তাকে প্রয়োজনীয় ফোন নম্বরগুলো শিখিয়ে দিন।
প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনদের জানিয়ে যান। যাতে আপনার অনুপস্থিতিতে তাঁরা বাড়ির খোঁজ রাখতে পারেন।
দিনের নির্দিষ্ট সময়ে বাড়িতে ফোন করে খোঁজ নিন।
পরিবারের সবার সহায়তা পেলেই কর্মজীবী নারীর পক্ষে সফল ও সুন্দরভাবে কাজ করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে কর্মজীবী নারীরা ঢাকার বাইরে যাওয়ার আগে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী সংসারের কাজ গুছিয়ে রেখে গেলে সমস্যা বা ঝামেলার সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
নাঈমা আমিন
মডেল হয়েছেন শাহনা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০৯, ২০১১
Leave a Reply