সিলেটের ঐতিহ্যবাহী খাবার পাবেন উনদালে। ‘উনদাল’! নাম শুনেই খানিকটা খটকা লাগে। এ ভাব আগন্তুকের মনে বেশি। চেনা-জানাদের মধ্যে থাকে অন্য ভাব। যখন মন চায় ঘরের বাইরে আয়েশ করে খেতে, তখন যেন হাতছানি দেয় উনদাল। সিলেটের পূর্ব জিন্দাবাজার দিয়ে পথ চললে নজর কাড়ে উনদাল। ছিমছাম পরিবেশে দিন ও রাতের দৃশ্যপট সেখানে ভিন্ন। দিনে তরুণ-তরুণী আর রাতে সপরিবারে খাবার-দাবারে উনদালের জুড়ি মেলা ভার।
নাড়ির টানে শুরু
‘উনদাল’ আঞ্চলিক শব্দ। সিলেট অঞ্চলে গ্রাম এলাকায় রান্নাঘরকে ‘উনদাল’ বলে ডাকা হয়। উনদাল মানে চুলা। সম্ভবত উনুন থেকে উনদাল। রেস্তোরাঁটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাউদ্দিন বাবলু বলেন, উনদাল নামেই রয়েছে নাড়ির টান। চুলা থেকে খাবার সরাসরি পাতে দিয়ে ভোজনবিলাসীদের তুষ্ট করাই আমাদের লক্ষ্য।’
সালাউদ্দিন বাবলুসহ এর প্রতিষ্ঠাতা ছয়জন। একটি সুন্দর নামকরণে রেস্তোরাঁ করার চেষ্টা তাঁরা বছর কয়েক ধরে করছিলেন। নাম নির্ধারণ হওয়ায় শুরু হয় নামের সঙ্গে সংগতি রেখে খাবার-দাবার আয়োজন এবং রেস্তোরাঁর অবকাঠামো তৈরি। ২০০৮ সালের পুরো জানুয়ারি মাসে চলে প্রস্তুতি। ৯ ফেব্রুয়ারি চালু করা হয় রেস্তোরাঁ।
বাঁশ-বেতের কারুকার্য
পূর্ব জিন্দাবাজারের বারুতখানামুখী রাস্তালাগোয়া রেস্তোরাঁর প্রধান দরজা। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেত আর কাঠের নির্মাণশৈলীর কারুকার্য সবখানে। টেবিল-চেয়ারেও রয়েছে তারই ছাপ। দেয়ালজুড়ে সিলেটের ঐতিহ্যের নানা আলোকচিত্র। দোতলা এ রেস্তোরাঁর পরিবেশ বেশ ছিমছাম, শান্ত। মৃদু আওয়াজে বাজে গান। এতেও রয়েছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী লোকজ সংগীতের পরিবেশনা। ভেতরের পুরো কক্ষটির অর্ধেক দোতলা।
এমন নির্মাণশৈলীর জন্য স্থপতি রাজন দাস ২০০৯ সালে জাতীয় পর্যায়ে ‘আইসটুডে-একোয়া পেইন্টস বেস্ট ইন্টেরিয়র ডিজাইন’ পুরস্কার লাভ করেন।
উনদালের পুরোটাই থাকে রেস্তোরাঁকর্মীদের নজরদারির মধ্যে। দিন ও রাতে পালা করে ২৪ জন রেস্তোরাঁকর্মী থাকেন পরিবেশনার কাজে।
দুপুরের খাবার খেতে উনদালে যাওয়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনি জামান জানান, নিরিবিলিতে খাওয়া-দাওয়া আর একটু মৌনতা—এ দুটো যেন উনদালের অনন্য এক বৈশিষ্ট্য।
খাবার-দাবার
তখন নগরজুড়ে চলছিল ভেজালবিরোধী অভিযান। নামীদামি আর বাহারি অনেক রেস্তোরাঁ মালিককেও জরিমানা গুনতে হচ্ছিল। একদিন উনদালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাউদ্দিন রেস্তোরাঁর সামনে ডজনখানেক পুলিশ দেখে ইতিউতি শুরু করেন। কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়েই ভেতরে ঢোকেন। রেস্তোরাঁয় ঢুকেই অবাক। কানাডিয়ান দূতাবাসের এক কর্মকর্তা সপরিবারে খেতে এসেছেন উনদালে। আর বাইরে পুলিশ পাহারা সে জন্যই। এ ঘটনার কথা উল্লেখ করে সালাউদ্দিন বাবলু বলেন, ‘আমরা সব সময় সচেতন থাকি একটি বিষয়ে, আর সেটি হচ্ছে, খাবার-দাবারের মান। আর যে বিষয় অন্য সব রেস্তোরাঁ থেকে উনদালকে আলাদা করে রেখেছে, সেটা হচ্ছে পরিবেশ এবং খাবারের দাম। রেস্তোরাঁর পরিবেশে রয়েছে ঘরোয়া আমেজ আর খাবারের দাম তুলনামূলক কম।’
খাবারের তালিকায় পাবেন সিলেটের পরিচয়। এখানে প্রধান পরিবেশনা ‘বিফ সাতকরা’। এই সাতকরার সাত রকমের আইটেম রয়েছে। খেতে জনপ্রতি খরচ হবে ১১০ টাকা। এ ছাড়া কাবাবের মধ্যে তন্দুরি চিকেন, চিকেন টিক্কা, রেশমি, হারিয়ালি কাবাব, উনদাল স্পেশাল বিরিয়ানি, নয়রতন কোরমা, ডাল মাখানি, ইয়েলো ডাল, পালক পনির সিজনাল প্রভৃতি স্বাদের খাবার তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায়। জনপ্রতি সর্বোচ্চ ৪৯০ থেকে সর্বনিম্ন ২৫ টাকায়ও খাবার মেলে।
সব সময় যোগাযোগ
রেস্তোরাঁর খাবার-দাবার, পরিবেশনায় হতে পারে নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি। এ জন্য রেস্তোরাঁর একটি সরাসরি মুঠোফোন নম্বর (০১৭১৭০২০৫০৫) ও ওয়েবসাইটে (www.woondaalbd.com) রয়েছে একটি আলাদা অভিযোগ বা পরামর্শ দেওয়ার ঠিকানা। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘শুরু থেকে এ পর্যন্ত আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। এ বিষয়টি আমাদের রেস্তোরাঁর মান রক্ষায় আরও মনোযোগী করেছে। এর পরও আমরা অভিযোগ জানানোর ঠিকানা আর মুঠোফোন নম্বরের প্রতি বিশেষ নজর রাখি। অভিযোগ না আসুক, অনুযোগের জন্যও রয়েছে আমাদের বিশেষ সতর্কতা।’
রসুইঘর থেকে
গরুর মাংস সাতকরা
উপকরণ: ৫০০ গ্রাম গরুর মাংস, দুই চা-চামচ আদা ও রসুনবাটা, তেল পরিমাণমতো, মরিচগুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, লবণ, গরম মসলা, কাটা পেঁয়াজ, ধনিয়া গুঁড়া ও পাঁচফোড়ন পরিমাণমতো, পাঁচ-ছয় টুকরা সাতকরা।
প্রণালি: হাঁড়িতে তেল পরিমাণমতো দিয়ে সব রকমের মসলা একসঙ্গে দিতে হবে। মসলা কষানোর পর গরুর মাংস দিয়ে দিন। মাংস অর্ধেক সেদ্ধ হলে সাতকরার টুকরোগুলো দিন। তারপর মাংস সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। মাংস সেদ্ধ হলেই সাতকরা সমেত মাংসের ঘ্রাণ নাকে লাগবে। তখন নামিয়ে পরিবেশন করুন।
উজ্জ্বল মেহেদী
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০১, ২০১১
dipu
baw shaj photo
Shahima
Thanks