ছিমছাম, গাছগাছালিতে ভরা প্রবেশপথ। নাম শুনলে মনে হবে, এ আবার কেমন জায়গা? অদ্ভুত নাম। তবে ভোজনরসিকেরা এমন জায়গার সন্ধান পেলে খুশি হবেনই। ধানমন্ডির ঢাকা আর্ট সেন্টারে অবস্থিত ফাস্ট ক্যাজুয়াল ও রিলাক্স ডাইনিং রেস্টুরেন্ট ‘অজ’-এর কথা বলছিলাম। সড়ক ৭/এ, বাড়ি ৬০—এই হলো ঠিকানা। ‘এটি তথাকথিত ক্যাফে কিংবা রেস্তোরাঁ নয়। এখানে খাওয়ার সঙ্গে শৈল্পিকতা, স্থাপত্য ও মানুষের চিন্তা-ভাবনার প্রকাশ ঘটবে। সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণী অনায়াসে এখানে অল্প ব্যয়ে নান্দনিক পরিবেশে খাবার খেতে পারবে।’ বলছিলেন অজের ডিজাইনার খালেদ মাহমুদ।
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে এ ধরনের খাবারের জায়গার কথা ভাবছিলাম অনেক দিন ধরেই। নতুনত্বের ছোঁয়া থাকবে। এ বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন স্থপতি নাহাজ খলিল। মূলত তিনি ও তাঁর দলের ডিজাইনেই এই আজকের অজ হয়েছে। ঢাকা আর্ট সেন্টারে এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি এটি চালু হয়। বহুল ব্যবহূত এমন জিনিস যা কেউ ফেলে দিয়েছে, সেসব দিয়েই এর অন্দরসজ্জা করা হয়েছে। প্রতিটি উপাদান প্রাকৃতিক ও দেশীয়। কৃত্রিমতাকে পরিহার করে এ শহরের মানুষকে প্রকৃতির সংস্পর্শে এনে খাওয়ানোর একটি প্রচেষ্টামাত্র।’ অজে ঢোকার মুখেই এর প্রমাণ পাবেন। মনে হবে শহরকে ছাড়িয়ে কোথাও এসে পড়েছেন। নিচের তলায় পরিবার বা একদল বন্ধু নিয়ে আড্ডায় মেতে উঠতে পারেন। নিরিবিলিতে সময় কাটানোর ব্যবস্থাও আছে। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে যান। ঘরের মধ্যেও বসতে পারেন। চাইলে খোলা আকাশের নিচে বসেও প্রিয় মানুষ কিংবা একান্তে নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। জাহাজের পাটাতন দিয়ে এমনভাবে বসার জায়গা তৈরি করা হয়েছে, মনে হবে কোনো নদীর তীরের টং দোকান। পাশে বেড়ে ওঠা গাছের শিরশির হাওয়া সে কথাই মনে করিয়ে দেবে। পুরোনো বই রাখা আছে পাশের বুক কর্নারে। অলস দুপুরে বই পড়া আর সঙ্গে প্রিয় কোনো খাবার খাওয়া। আর কী চাই।
এমন বর্ণনা শুনে ভাবতেই পারেন নিশ্চয়ই খাবারের দাম অনেক। মোটেই তা নয়। এখানকার খাবারের সর্বোচ্চ মূল্য ৩৭০ টাকা। খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা সব ধরনের খাবারের ব্যবস্থা করেছি। অনেকে ভারতীয় খাবার খেতে পছন্দ করেন, কেউবা ইতালিয়ান, কেউবা এ দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার ভালোবাসেন। এক জায়গায় সব ধরনের খাবার পাওয়া যায় না। আমরা তাদের কথা বিবেচনা করে এসব খাবারের সমন্বয় করেছি। তবে অজর গ্রিল আর কাবাব খেলে এর স্বাদ মুখে লেগে থাকবে। গ্রিল চিকেন, চিকেন ঝাল ফ্রাই, গ্রিল চিকেন সালাদ, অজর স্পেশাল কাবাব, রেশমি কাবাব, বটি কাবাব ও কয়েক রকমের রোল পাবেন এখানে ২৫০ টাকার মধ্যে। এর সঙ্গে নিতে পারেন ডাল তরকা, ডাল মাখানি ও স্পেশাল নান। খেতে পারেন বিভিন্ন ধরনের স্টেক। এরই মধ্যে অজর স্টেক বেশ সুনাম পেয়েছে। আরও আছে নানা স্বাদের স্যুপ। খুব ভারী খাবার খেতে না চাইলে এটি খেতে পারেন। আছে স্প্যাগেটি ও পাস্তা। পিছিয়ে নেই পানীয় সম্ভার। চা-কফির পাশাপাশি ফলের জুস, লেমোনেড, জিরা পানিসহ আরও কত কী। হিম হিম আইসক্রিমও পাবেন। এ ছাড়া সুস্বাদু আরও ডেজার্ট খেতে পারবেন অজতে। এটি উদ্বোধন হওয়ার পর প্রথম সাত দিন খাবারের সঙ্গে বিনা মূল্যে চা দেওয়া হয়েছিল। এ রকম ছোট-বড় চমকপ্রদ বিশেষ ছাড় বা উপহার পাবেন বিশেষ দিনগুলোতে। তো আর দেরি না করে একবার ঘুরে আসুন অজ থেকে। অচেনা, অনাবিল আনন্দ পাবেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
তৌহিদা শিরোপা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১১
Leave a Reply