সারা যাকের এমন অনেক সমস্যা আছে, যা কাউকে বলা যায় না। এ রকম প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন সারা যাকের। ১৫ দিন অন্তর সুবন্ধু সমীপেষু কলামে চিঠি লিখুন সাদা কাগজের এক পিঠে সংক্ষেপে, ঠিকানাসহ। চিঠি পাঠানোর ঠিকানা :
সুবন্ধু সমীপেষু, নকশা, প্রথম আলো
সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় আমার খালাতো বোনের এক বন্ধুর সঙ্গে ফোনে পরিচয় হয়। বয়সে সে আমার থেকে তিন বছরের বড়। আমি একাদশ শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হলে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য ঢাকায় আসি। দুজনেরই একে অপরকে খুব ভালো লাগে। এভাবে তার সঙ্গে আমার নিয়মিত ফোনে কথা চলতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ সে একদিন জানায়, সাত বছর ধরে একটি মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক এবং সে মেয়েটিকে খুব ভালোবাসে। সে আরও বলে, সে আমাকে শুধু ভালো বন্ধু হিসেবে দেখে। অথচ তাকে বারবার বলেছি, আমি তাকে অনেক ভালোবাসি; সে কখনোই বলেনি যে সেও আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু সব সময় এমনভাব করত, সে আমাকে খুবই পছন্দ করে। এরপর আমি কয়েক মাস তার সঙ্গে যোগাযোগ করি না এবং এ সময়টা খুবই কষ্টের মধ্যে দিয়ে পার করি। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে সে আমাকে ফোন করে। আবার আমরা যোগাযোগ শুরু করি। এবার সে আমাকে জানায়, তার প্রেমিকা তাকে ধোঁকা দিয়ে অন্য জায়গায় বিয়ে করে ফেলেছে। বলে সে কান্নাকাটি শুরু করে। আমি তাকে অনেক সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করি। এভাবেই আমাদের মধ্যে কথাবার্তা চলতে থাকে। আমি তাকে ভালোবাসি—এ কথাটা আর একবারও ওর সামনে উচ্চারণ করিনি। ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পাওয়ার পর আমি ঢাকায় চলে আসি। এখন প্রায়ই আমি ওর সঙ্গে দেখা করি। কিন্তু সে আমাকে শুধু বন্ধু হিসেবে দেখে। আমি দিন দিন ওর ব্যাপারে আরও সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছি। উঠতে-বসতে সারাক্ষণ ওর কথা ভাবি। মাঝে মধ্যে বসে বসে কাঁদি। ওর প্রতি আমার দুর্বলতা প্রকাশ করতে পারি না, কারণ সে তার সাবেক প্রেমিকাকে এখনো ভালোবাসে। এভাবে দিন দিন আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। ওর কারণে আমার রাতে ঘুম হয় না। ব্যস্ততার মাঝে সে আমার ফোন রিসিভ না করলে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে বসে থাকি। আমি ওকে ভালোবাসি, তা কখনোই বলতে পারব না ওকে। আমার পরিবর্তন সবাই লক্ষ করছে। এভাবে মানসিক অশান্তিতে থাকলে আমি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
ছেলেটি কি আসলেই তোমাকে ভালোবাসে না? যদি তা-ই হয়, তাহলে কেন সে তোমার কাছে ফিরে ফিরে আসছে। তুমি ভেঙে পড়ো না। তোমার পড়াশোনায় ক্ষতি হবে। বুঝে দেখো, ছেলেটি কেন তোমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখছে। তার তোমার ব্যাপারে সফট কর্নার আছে বলেই।
বয়স ৩২ বছর। নয় বছর আগে ২৩ বছর বয়সে আমি আমার চেয়ে দ্বিগুণ বয়স্ক একজনকে ভালোবেসে বিয়ে করি। সে ছিল ডিভোর্সি এবং দুই সন্তানের জনক। আকর্ষণীয় চেহারার অধিকারী এবং স্পষ্টবাদী লোকটির প্রতি আমি এতটাই ভালো লাগা অনুভব করি যে আমি সবার অমতে তাকে বিয়ে করি। বিয়ের পরপরই বুঝতে পারি যে ও একটা পাষণ্ড পাথর, ওর মন বলতে কিছু নেই। বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে ওর সম্পর্ক। কেবল ওর ছেলেদের দেখাশোনার জন্য আমাকে বিয়ে করেছে। এখন আমি দুই মেয়ের মা। তার ছেলে দুটি আমাকে মায়ের মতো ভালোবাসলেও বাবার ব্যাপারে ওরা নিশ্চুপ। আমি বেশি জোর না রাখলে আমাদের শারীরিক সম্পর্কও হয় না। এতে সে খুব খুশি। কিন্তু আমার এ রকম জীবন ভালো লাগে না। বাড়ি-গাড়ি সবই আমার কাছে অর্থহীন মনে হয়। তাই আমি আর ওর কাছে থাকতে চাই না। আমি কি ভুল করছি? আমি একটি চাকরি করি। একটি প্রশ্ন, আমি যদি স্বেচ্ছায় চলে যাই, তবে কি আমি বা আমার মেয়েরা ওর কাছ থেকে কিছুই পাব না। মেয়েদের কথা চিন্তা করে আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। যে মেয়েরা জন্মের পর থেকে কোটিপতি বাবার মেয়ে হয়ে থাকল, তাদের আমি কোন অবস্থায় ফেলব?
আমার স্বামী আমাকে শারীরিক নির্যাতন করে না, যা করে কেবল মানসিক যেমন—সব সময় আমাকে এড়িয়ে চলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
আপনি যদি ছেড়ে আসতে চান, তবে আপনার মেয়েদের ব্যাপারটা মীমাংসা করেই ছেড়ে আসবেন।
বাবা হিসেবে মেয়েদের দায়িত্ব তাঁর ওপরও বর্তায়। আর তিনি মেয়েদের কীভাবে রাখবেন, ওই বিষয়টি আপনার বুঝে নিতে হবে। আগে যে অবস্থানে রেখেছিলেন, সেই রকমটাই আপনি চাইবেন। এ ছাড়া আইনগতভাবে তাদের যা পাওনা (সম্পত্তি ইত্যাদি) সেগুলো তো তারা পাবেই। আপনি অবশ্যই একজন আইনজীবীর সহায়তা নেবেন।
আমার একজন খুব ভাল বন্ধু আছে। আমাদের দুজনের বাড়ি একই গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব খুব গাঢ়। গ্রামের সবাই আমাদের বন্ধুত্ব দেখে প্রশংসা করে। মাস কয়েক আগে সে তার মামাতো বোনের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চায় এবং আমাকে অনুরোধ করে মেয়েটিকে সে কথা জানাতে। আমি মেয়েটিকে বললে সে আমার সঙ্গেই সম্পর্ক করতে চায়। তখন বন্ধুটি বলে, ‘আমার অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছে। মেয়েটি যদি তোর সঙ্গে সম্পর্ক করতে চায়, তাহলে তুই করতে পারিস।’ আমি তাকে বললাম, ‘দেখ, পরে কিন্তু আমার দোষ দিতে পারবি না।’ মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্ক করি। মাস খানেক পর আমার বন্ধুটি কেন জানি অন্য রকম হয়ে যায়। সে আমার সঙ্গে আর আগের মতো বেড়ায় না, খেলে না, কথা বলতে চায় না। অর্থাৎ তার ব্যবহারে একটা ছাড়া ছাড়া ভাব লক্ষ করি। গ্রামের কিছু কিছু লোক তখন আমাকে বলে, আমাদের মধ্যে কিছু হয়েছে কি না। এমনকি পরিবারেও এ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। তখন আমি বুঝতে পারি, মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্ক করায় বন্ধুটি আমাকে সহ্য করতে পারছে না। মেয়েটির সঙ্গে আমার কোনো দৈহিক সম্পর্ক হয়নি বিধায় তাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলে সরে আসি এবং আমার বন্ধুটিকে সব বলি। কিন্তু তার পরও আমি আগের সেই বন্ধুটিকে পাচ্ছি না। যে বন্ধু আমাকে ছাড়া কিছুই ভাবত না। এখন আমি কীভাবে, কী করলে আমার সেই বন্ধুটি ফিরে পাব পরামর্শ দিলে উপকৃত হব।
মিলন, রংপুর।
সময়ে বিষয়টা ঠিক হয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১১
Leave a Reply