জীবনে চলতে-ফিরতে যেসব আইনি জটিলতায় পড়তে হয়, পাঠকের উকিল বিভাগে ১৫ দিন পরপর তারই সমাধান পাওয়া যাবে।পাঠকের উকিল বিভাগে আইনি সমস্যার সমাধান দেবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট নাহিদ মাহতাব। স্পষ্ট করে নিজের সমস্যাটি লিখে পাঠান। প্রয়োজনীয় কাগজের অনুলিপি দিন।
খামের ওপর লিখুন: পাঠকের উকিল, নকশা,
দৈনিক প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুলইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
আমার একমাত্র সন্তানের এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র থেকে শুরু করে সনদপত্র—সব কাগজপত্রে তার মায়ের নাম অর্থাৎ আমার নাম আংশিক ভুল হয়েছে। বাকি সবার নাম ঠিক আছে। সময়ের অভাবে এইচএসসিতেও এই ভুল সংশোধন করা হয়নি। আমি জানতে পারি, এই নাম সংশোধন করতে হলে সংশোধিত বা নকল কপি তুলতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিদেশে উচ্চশিক্ষা, চাকরি বা দেশে সরকারি চাকরিতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। যে কারণে এটা সংশোধন করতে আমার সন্তান নারাজ। সে এ বছরই ভোটার হবে। ও যখন ভোটার হবে, তখন সেই জায়গায় আমার কোন নামটি হবে? ওর কাগজপত্র ঠিক রেখে আমার নামটি কী পরিবর্তন করা যায়? আমার বয়স ৫০, আমার কোনো সনদপত্র নাই, শুধু বিয়ের কাবিননামা, একটি জমির দলিল, ভোটার আইডি কার্ডে আমার সঠিক নাম আছে।
নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
আপনার সমস্যাটি কোনো কঠিন সমস্যা নয়। ছেলের মায়ের নাম যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট বোর্ডে গিয়ে নিয়ম অনুযায়ী দরখাস্ত দিলে তা সংশোধন করা সম্ভব। সংশোধিত নাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
আমার বয়স যখন দশ মাস, তখন আমার বাবা মারা যান। আমি নবম শ্রেণীতে ওঠার পর থেকে আমার বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি দেখাশোনা করছি। আমার বাবার নামে কতটুকু জমি, তার হিসাব আমি জানি না। আমার আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা বলে, আমি যতটুকু জমি ভোগ করছি, আমার বাবার জমির পরিমাণ নাকি তার চেয়ে বেশি। প্রসঙ্গত, আমার বাবাকে তাঁর নানা জমি লিখে দিয়েছিলেন। জমি লিখে দেওয়ার কয়েক বছর পর আমাদের বাড়িতে আগুন লেগে সব দলিলপত্র পুড়ে যায়।
এখন আমার প্রশ্ন হলো, আমি কীভাবে আমার বাবার জমির পরিমাণ জানব?
আমার আরেকটি প্রশ্ন হলো, আমার বাবার সম্পত্তিতে আমার দাদির কোনো অংশ আছে কি?
আমি আমার বাবার একমাত্র সন্তান।
মো. ফিরোজ মিয়া
পাঁচগাছী, পীরগঞ্জ, রংপুর।
সাধারণত জমির পরিমাণ নির্ধারিত হয় দলিলের মাধ্যমে অথবা দখলের মাধ্যমে। যে পরিমাণ সম্পত্তি আপনার দখলে আছে, তা দিয়ে আপনি বাবার সম্পত্তির পরিমাপ করতে পারেন। আপনার বাবা যদি রেজিস্ট্রি দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি পেয়ে থাকেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট সাবরেজিস্ট্রার অফিস থেকে দলিল সংগ্রহ করে জমির সঠিক পরিমাণ জানতে পারবেন। আপনার দাদি যেহেতু আপনার বাবার মৃত্যুর সময় জীবিত ছিলেন, সেহেতু মা হিসেবে তিনি আপনার বাবার সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ অংশীদার।
২০০৮ সালের জুন মাসে আমাদের বাসার ভাড়াটিয়ার মেয়ে আমার ঘরে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেয়। এরপর সে বলতে থাকে, তাকে আমি নির্যাতন করেছি। এ অবস্থায় পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এতে আমাকে ৩৪ দিন কারাবাস করতে হয়। পরবর্তী সময়ে পুলিশি তদন্ত রিপোর্টে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং ১৭ ধারায় বাদিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। আমি স্নাতক শেষ করেছি। এখন আমার চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে কি? মামলা কত দিন চলতে পারে এবং পরে বাদিনীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিতে পারব? আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
সিলেট।
আপনার চিঠির তথ্য অনুযায়ী নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১৭ ধারা অনুযায়ী বাদিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করা হলে, সেই আবেদনের ওপর ট্রাইব্যুনাল কী আদশে দিয়েছেন তার উল্লেখ নেই। যদি ট্রাইব্যুনাল সেই আবেদন গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে আপনার আর আসামি থাকার কথা নয় এবং আপনার অব্যাহতি পাওয়ার কথা। যদি আপনি অব্যাহতি না পেয়ে থাকেন, তাহলে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
আমার বয়স ২৪ বছর। আমি একটি ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করি। বিয়ের দুই বছর পর স্বামী ও শাশুড়ি আমাকে শারীরিক নির্যাতন এবং প্রচণ্ড মারধর করেন। তারপর আমি আমার বাপের বাড়ি চলে আসি। এখন আমি অন্তঃসত্ত্বা, পাঁচ মাস ধরে স্বামী আমার কোনো খরচ বহন করেন না। তিনি তাঁর মাকে দিয়ে আমাকে চাপ দিচ্ছেন, যেন আমি নিজেই তাঁকে তালাক দিই। আমার বিয়েতে কাবিন হয়েছিল ১০ লাখ টাকা। আইনের সাহায্য নিতে হলে আমার করণীয় কী?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম।
স্ত্রী তালাক দিলে দেনমোহর পরিশোধ করার ক্ষেত্রে স্বামী কোনো রকম সুবিধা লাভ করেন না। স্বামী বা স্ত্রী যে-ই তালাক প্রদান করুন না কেন, দেনমোহর পরিশোধযোগ্য। সুতরাং আপনি দেনমোহর দাবি করে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারেন। আপনার স্বামীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় এনে আদালত কিস্তির মাধ্যমে দেনমোহর পরিশোধের সুযোগ দিতে পারেন।
আমি হিন্দু ধর্মাবলম্বী, একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। আমি তিন বছর ধরে একটি বিবাহিত মেয়েকে ভালোবাসি, সেও আমাকে খুব ভালোবাসে। তার স্বামী মাদকাসক্ত। প্রায়ই তাকে নির্যাতন করে, কিছুদিন আগে আমাদের সম্পর্কের কথা দুই পরিবারে জেনে যায়। তার পর থেকে তার স্বামীর নির্যাতন আরও বেড়ে গেছে। এখন মেয়েটি আমাকে চাপ দিচ্ছে তাকে বিয়ে করার জন্য, কিন্তু কোনোমতেই রাজি করাতে পারছি না আমার মা-বাবাকে।
এখন সে আমাকে বলছে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার জন্য। নতুবা স্বামীর ঘর ছেড়ে সরাসরি আমার ঘরে চলে আসবে। আমিও
তাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চাই। এমন অবস্থায় আমার
করণীয় কী?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
কিশোরগঞ্জ।
আমাদের দেশে হিন্দু আইনে বিবাহবিচ্ছেদের কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং বিবাহিত মেয়েটি হিন্দু ধর্মাবলম্বী হলে তাকে আইনসম্মতভাবে বিবাহ করা সম্ভব নয়। তবে যেসব দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিবাহবিচ্ছেদের সুযোগ আছে, সেসব দেশে গিয়ে বিবাহবিচ্ছেদের পর পুনরায় ‘সিভিল ম্যারেজ’ করা সম্ভব। বিবাহিত মেয়েটি মুসলমান ধর্মাবলম্বী হলে তালাকের মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে। পরবর্তী সময়ে আপনি মুসলমান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে মেয়েটিকে বিয়ে করতে পারেন।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ১৫, ২০১০
আখতারুজ্জামান গ্রীন
আমার বয়স যখন আট বছর, তখন আমার মা মারা যান। ছোট বেলা থেকে শুনে এসেছি পিতার আগে তার কন্যা মারা গেলে উক্ত পিতার সম্পদের কোন হক তার পরিবার / ছেলে / মেয়েরা পায়না। আমার নানা আমার মা মারা যাবার নয় বৎসর পর ১৯৮৪ সালে মারা যান। বর্তমান আইনে আমি কি উক্ত সম্পদের হকদার আছি ? হলে তা কি রুপ এবং আমার কি করা উচিৎ ?