আর কিছুদিন বাকি। তবে বাতাসে ফুলের গন্ধ আর কোকিলের ডাক এখনই জানিয়ে দিচ্ছে বসন্ত আগমনের কথা। ছোট থেকে বড়—সবার সাজেই সেদিন প্রকাশ পাবে উৎসবের আমেজ। কখনো বা রঙিন চুড়িতে, নয়তো পরনের লাল-কমলা শাড়িতে, চুলের ফুলে।
ফুল। বসন্তের সাজে আবেদন আনতে যার জুড়ি মেলা ভার। একসময় গাঁদা, রজনীগন্ধা, গোলাপ—এই ফুলগুলোই ছিল চুলের শোভা হয়ে। তবে ফুলের সাজে এখন কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। বাজারে আসা অন্যান্য ফুলের চাহিদাও এখন অনেক। বসন্তের প্রথম দিনটিতে প্রকৃতির বিভিন্ন ফুলের রঙে রঙিন হতে আপনি চাইলে ভিন্ন ফুলের সাজে নিজেকে সাজিয়ে নিতে পারেন।
‘পয়লা ফাল্গুনের আনন্দটাই অন্য রকম। সবাই বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে, মাথায় ফুল দিয়ে উৎসবে যোগ দেন।’ জানান শিলা’জ মেকওভারের স্বত্বাধিকারী ও রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন শিলা।
বসন্ত উৎসবের সাজ এখন আর একই নকশায় সীমাবদ্ধ নেই। শুধু খোঁপা নয়, চুলের নানা রকম স্টাইলের সঙ্গে ভিন্ন ভিন্ন ফুলও ব্যবহার করা হচ্ছে। একটু অন্য রকম ফুলের সাজে মেয়েরা তৈরি করতে চাইছেন নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট। শারমিন শিলা সে রকমই কিছু ফুলের ব্যবহারের কথা বললেন।
খোলা চুলের দোলা
উৎসবে চুল খোলা রাখতে পছন্দ করেন অনেকেই। এ ক্ষেত্রে এক পাশে ক্লিপ আটকে তার ওপর ফুল গুঁজে দিতে পারেন। অথবা কানের পাশ দিয়ে হালকাভাবে গুঁজে দিতে পারেন কয়েকটি ফুল। ফুল বড় হলে একটি, ছোট হলে তিন-চারটি।
চাইলে সামনের দিকের কিছুটা চুল ব্যাককোম্ব করে নিতে পারেন। পেছনে চুল আটকানোর জায়গাটিতে আটকে দিতে পারেন পছন্দের ফুলটি। দুই পাশ থেকে চুল পেঁচিয়ে এনেও (টুইস্ট) পুরো চুল খোলা রাখতে পারেন। এ ক্ষেত্রে দুল ও মেকআপের সঙ্গে মিলিয়ে সঠিক জায়গায় ফুলটিকে আটকে নিন।
খোঁপা অথবা বেণিতে
হালকা অথবা আঁটসাঁট করে খোঁপাও করে নিতে পারেন। খোঁপার চারপাশ দিয়ে মালা না পেঁচিয়ে একটু অন্যভাবেও পরতে পারেন। খোঁপার চারপাশ দিয়ে পরপর ছোট ফুল গেঁথে নিন অথবা একটি বড় ফুল খোঁপা ও কানের মধ্যে আটকে নিন।
বেণিতেও অন্যভাবে ফুল আটকে তৈরি করতে পারেন ভিন্ন লুক। সামনে দুই পাশ থেকে চুল টুইস্ট করে টেনে পেছনে নিয়ে আটকে নিন ক্লিপ দিয়ে। এবার সাধারণভাবে বেণি করে মাঝেমধ্যে ফুল আটকে নিতে পারেন। সামনের টুইস্ট করা অংশেও ছোট ফুল আটকে নিতে পারেন।
রঙিন ফুলের ভিড়ে
হলুদ গাঁদা মন কাড়বেই। কিন্তু অন্য ফুলগুলোও নজর কাড়তে কম যায় না। মেরুন, হলুদ, সাদা, নীল রঙের চন্দ্রমল্লিকা, ক্যালানডুলা ফুলগুলোর চাহিদা এবার অনেক বেশি বলে জানালেন ঢাকার শাহবাগের ফুল বিক্রেতারা। এ ছাড়া হলুদ-লাল রঙের চায়নিজ চেরিও তাল মেলাচ্ছে অন্যদের সঙ্গে। বসন্ত উৎসবে আরও পাবেন গ্ল্যাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবারা। এ ছাড়া গাঁদা, গোলাপ আর অর্কিড তো থাকছেই।
অফিস থেকে উৎসবে
এ দিনটিতেও কর্মব্যস্ত মানুষকে অফিসে ছুটতে হয়। এ কারণে ফুলের সাজ নিয়ে তাঁদের একটু ভাবতে হয়। শারমিন শিলা বলেন, ‘যাঁরা অফিসে যাবেন, তাঁরা একটু ছোট ফুল আটকে নিতে পারেন পছন্দমতো চুলের স্টাইলে। বড় ফুল এড়িয়ে যান। উৎসবের দিন একটু না হয় সাজলেনই। এ ছাড়া যাঁরা বয়সে একটু ছোট বা টিনএজ, তাঁরাও ছোট ফুল বেছে নিন। অবশ্যই হালকা সাজে নিজেকে সাজাতে হবে।’
পোশাকে উৎসব
বসন্তের পোশাকে রং থাকবেই। প্রকৃতির রংগুলোকেই এবার পোশাকে তুলে আনা হয়েছে বলে জানালেন ফ্যাশন হাউস রঙের ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা। শুধু বাসন্তী নয়, এখন পোশাকে লাল, কমলা, টিয়া, সবুজ রংও ব্যবহার করা হয়েছে। হলুদ রঙেরই অনেক টোন ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বেশির ভাগ মেয়ের পরনেই থাকবে শাড়ি। তবে নানা রকম ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজও নিয়ে এসেছে ফ্যাশন হাউসগুলো। বিপ্লব সাহা বলেন, ‘অফিসে খুব উজ্জ্বল রং পরতে না চাইলে ওড়নাটা শুধু উজ্জ্বল রঙের পরতে পারেন। সালোয়ার-কামিজ না হয় হালকাই থাকল এ ক্ষেত্রে। শাড়ির বেলায়ও একইভাবে বেছে নিতে পারেন চাপা সাদা রং। তবে পাড় ও আঁচলে হলুদ কিংবা উজ্জ্বল রং থাকতে পারে।
সালোয়ার-কামিজ পরতে না চাইলে ফতুয়া পরতে পারেন। চাইলে উজ্জ্বল রঙের ছোট ওড়না নিতে পারেন সঙ্গে।
রয়া মুনতাসীর
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ০৮, ২০১০
Leave a Reply