সারা যাকের এমন অনেক সমস্যা আছে, যা কাউকে বলা যায় না। এ রকম প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন সারা যাকের। ১৫ দিন অন্তর সুবন্ধু সমীপেষু কলামে চিঠি লিখুন সাদা কাগজের এক পিঠে সংক্ষেপে, ঠিকানাসহ। চিঠি পাঠানোর ঠিকানা :
সুবন্ধু সমীপেষু, নকশা, প্রথম আলো
সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
এসএসসি পরীক্ষার আগে একটি ছেলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়। মূলত বন্ধুদের প্ররোচনা ও চাপে সম্পর্কটা গড়ে তুলি। মন থেকে কখনোই তাকে ভালোবাসতে পারিনি। এর মধ্যে কয়েকবার সম্পর্ক ভাঙার চেষ্টা করি কিন্তু ছেলেটা নানাভাবে ভয় দেখাত, রাস্তাঘাটে উত্ত্যক্ত করত, এমনকি আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবে—এ রকম হুমকিও দিত। ব্যাপারটা বাসায় জানাইনি, কারণ তাঁরা আমাকেই দোষী ভাববেন। এসব কারণে আমি এইচএসসি পরীক্ষার ফল খারাপ করি। যদিও আমি সে রকম ছাত্রী ছিলাম না। ছেলেটা বলেছে, যেকোনো মূল্যেই হোক সে আমাকে বিয়ে করবে। কিন্তু তাকে বিয়ে করতে আমি রাজি নই। আমি নিশ্চিত তার কথা না শুনলে সে আমার ক্ষতি করবে। আমি এটাও জানি, ওর হাত থেকে মুক্তি পেলে আমি ভালো কিছু করতে পারব। আবার বাসায় এসব জানতে পারলে আমার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে। এসব নিয়ে খুব মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
রংপুর
ছেলেটার কাছ থেকে তো তোমার মুক্তি পেতেই হবে। আর সেই জন্য তোমার পরিবার বা অভিভাবকদের এখনই বিষয়টা জানাতে হবে।
তুমি ভালো ছাত্রী, হয়তো বা তাঁরা তোমাকে অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেবেন। কথাটা তাঁদের কাছে গোপন রাখলে তোমার ক্ষতি হবে।
আমি স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। ২০০৮ সালে আমার মার একটা অস্ত্রোপচার করা হয়। তাঁর দেখাশেনার জন্য আমি একটি মেয়েকে কাজ দেই। মেয়েটি নার্সিং কোর্স শেষ করে ক্লিনিকে চাকরি করছে। মেয়েটিকে যখন আমি প্রথম দেখি, তাকে পছন্দ করতে পারিনি। কিন্তু পরে কথা বলতে বলতে তার ব্যবহার খুব ভালো লাগে। আমার পরিবারের সদস্যরাও তাঁকে পছন্দ করে। কিন্তু এখন সমস্যা হলো, আমার ও তার পরিবারের আর্থিক অবস্থানের পার্থক্য। আমার পরিবার তার পরিবারকে মেনে নিতে পারছে না। আর আমিও আমার পরিবারের সবাইকে ছাড়তে পারছি না। মেয়েটি আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। কিন্তু তার মা-বাবা আমাকে কোনো সহযোগিতার আশ্বাস দেন না। এ অবস্থায় আমি তার মনকে প্রাধান্য দেব, না তার অবস্থানকে প্রাধান্য দেব, না আমার পরিবারের সবাইকে প্রাধান্য দেব, বুঝতে পারছি না। আমার এই মুহূর্তে কী করা উচিত বুঝতে পারছি না।
মো. আপন
রংপুর।
চিঠি পড়ে মনে হচ্ছে আপনি নিজেই মেয়েটির ব্যাপারে খুব নিশ্চিত না।
হয়তো বা সামাজিক বা অর্থনৈতিক অসমতা আপনাকে দৃঢ় হতে সহায়তা করছে না।
আপনি মেয়েটিকে একটু দূরে থেকে দেখেন। আপনি কি দায়িত্ব বা করুণাবোধ থেকে তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন? একটু দূরে সরে এলে আপনার জন্য বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবে।
আমি এসএসসি পরীক্ষার্থী। দুই বছর ধরে একজনকে খুব ভালোবাসি। তিনি হলেন আমার শিক্ষক। তিনি আমাদের বাসায় এসে আমাকে এবং আমার ছোট বোনকে পড়াতেন। আমার ছোট্ট বোন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। একদিন তিনি আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিলেন এবং আমি রাজি হয়ে যাই। এরপর সবার অজান্তে সম্পর্কটা গভীর হতে থাকে।
কিন্তু হঠাৎ তাঁকে বিভিন্ন কারণে আমি সন্দেহ করতে লাগলাম। অবশেষে আমি যা সন্দেহ করেছিলাম, তা-ই সত্যি হয়েছে। সপ্তাহ খানেক আগে আমি জানতে পারলাম, তাঁর সঙ্গে আমার বোনেরও প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে এবং এরই মধ্যে আমি তাদের খুব ঘনিষ্ঠভাবে দেখতে পেলাম। এরপর তিনি বারবার আমার কাছে ক্ষমা চাইছেন এবং বলছেন, তিনি আমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবেন না। তিনি আমার উপস্থিতিতে আমার বোনকেও আমাদের ভালোবাসার কথা খুলে বললেন। এ কথা শোনার পর বোন এ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছে কিন্তু এ অবস্থায় আমি কি স্যারকে আবার গ্রহণ করব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
নওগাঁ।
তোমার শিক্ষককে ভালো মানুষ বলা যায়না। তুমি এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসো।
আর পড়ালেখা ছাড়বে কেন। এসএসসি পরীক্ষা দাও। দরকার হলে অন্য কারও কাছে কোচিং নাও। আর আমি তো বলব, তোমার শিক্ষকের ব্যাপারে মা-বাবাকে জানাও। তোমার স্যার যা করেছেন তাকে ইংরেজিতে বলে, ‘মোলেসটেশন’—এ ধরনের আচরণের জন্য তাঁর শাস্তি হওয়া উচিত।
আমি স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অবশ্য আমার চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা দেওয়ার কথা। কিন্তু পরীক্ষা সময়মতো না হওয়ায় দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি। এসব নিয়ে আমি খুব হতাশ ও বিরক্ত। এর মধ্যে একজন এসএসসি পরীক্ষার্থীকে পড়ানোর কাজ শুরু করি। কিছুদিন যাওয়ার পর মেয়েটি আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। আমি প্রথমে রাজি না হলেও পরে তার সঙ্গে সম্পর্কে করি। আমাদের দৈহিক সম্পর্কও হয়। এর মধ্যে সে একদিন তার বড় বোনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। তার বড় বোনও আমাকে জানায়, সে আমাকে পছন্দ করে। আমি এতে পুরোপুরি অসম্মতি জানাই। কিন্তু তিনি আমাকে বারবার ফোন করতেন, মাঝেমধ্যে ফোনে কান্নাকাটিও করতেন। আমি টিউশনিটা ছেড়ে দিতে চাই। কিছুদিন বন্ধও রাখি। একদিন আমার প্রেমিকার বড় বোন ফোন করে বলেন, তিনি আমাকে আর বিরক্ত করবেন না, আমি যাতে আবার টিউশনি শুরু করি। আমি তাদের বাসায় যাই, তখন প্রেমিকার বড় বোন একা ছিলেন। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করেন এবং একসময় তাঁর সঙ্গেও আমার দৈহিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এখন আমার খুব খারাপ লাগছে। পড়াশোনা করতে পারছি না। সামনে পরীক্ষা। আমার প্রেমিকা জানতে চাচ্ছে, কেন আমি এমন করলাম। আমি এখন কী করব?
শরীফ
সাভার।
বিষয়টি জটিল। বড় বোনটা আপনাকে একধরনের বাধ্য করেছে। আবার যদি টিউশনি শুরু করেন, জটিলতা বাড়বে। আমি বলব, আপাতত আপনি ওই বাড়ির থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন। নিজের ভবিষ্যৎটা দেখুন।
আমি স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়ছি। বয়স ২৬ বছর। পাশের বাড়ির একটি মেয়ের সঙ্গে ভাই-বোন হিসেবে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমরা একসঙ্গে দুজনে আড্ডা দিতাম, গল্প করতাম। একপর্যায়ে সে আমাকে ভালোবাসতে শুরু করে এবং আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু তাতে আমি রাজি হইনি; কেননা বয়স ছিল প্রায় ৪০ বছর। তার একটি চোখের সমস্যার কারণে অবিবাহিত রয়েছে। আমি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় সে আমাকে বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে। সামান্য চোখের সমস্যার কারণে আমাকে কেউ বিয়ে করতে চায় না ইত্যাদি বলে কান্নাকাটি করে। তার এ ধরনের কথাবার্তায় আমার মানসিকতা পাল্টিয়ে গিয়ে মানবতাবোধ জাগ্রত হয়। আমি তার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি এবং তার কথায় তাকে বিয়ে করার আশ্বাস দিই। একপর্যায়ে আমাদের এ বিষয়টি উভয় পরিবারে জানাজানি হয়। মেয়েটির পরিবার এ ব্যাপারে নীরব থাকে, কিন্তু আমার পরিবার আমার প্রতি ভীষণ রাগারাগি করে এবং তার কাছ থেকে আমাকে সরে আসতে বলে। কিন্তু আমি যখনই তাকে ভুলতে চাই, তখনই আমার বিবেক বাধা দেয়। এ বিষয়টি লোকজন জানাজানি হওয়ার পর সে আমার জন্য আরও ব্যাকুল হয়ে পড়ে এবং বলে, আমি যদি তাকে বিয়ে না করি তাহলে সে আত্মহত্যা করবে। এ অবস্থায় আমি স্থির করতে পারছি না যে আমার পরিবারের কথা রাখব, নাকি তাকে বিয়ে করব?
মো. হাফিজুর রহমান
মিঠাপুকুর, রংপুর।
বান্ধবীর ব্যাপারে এখন আপনার কর্তব্যপরায়ণ বা দয়া কাজ করছে। দয়ার ওপর ভরসা করে এ ধরনের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। বিষয়টি আপনি ভেবে দেখবেন। আপনি মহিলাকে ভালোবাসেন কি না।
শুধু কর্তব্য, দায়িত্ববোধ থেকে এবং করুণা করে এ রকম সম্পর্কে না জড়ানোই ভালো।
আমি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে প্রায় এক বছর হয়। ছেলেটি লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করে। হঠাৎ একদিন জানতে পারি যে (প্রায় ছয় মাস পর) ছেলেটি বিবাহিত, এমনকি একটি মেয়েও আছে তার। মেয়েটির বয়স পাঁচ)। ছেলেটি সত্য স্বীকার করতে বাধ্য হয়। আমি তাকে প্রশ্ন করি, এত বড় প্রতারণা
কেন করল? তখন সে বলে, তার অল্প বয়সে মেয়ের পরিবারের লোকজন চাপ দিয়ে তাকে বিয়ে করিয়েছে। এ বিয়েতে তার মত ছিলনা। সে স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতেও চায়না। আমাকেই সে ভালবাসে, পেতে চায়। এখন আমার কী করণীয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
ছেলেটি তোমার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছে বিষয়টার মধ্যে অস্বচ্ছতা রেখে। আমি মনে করি, ছেলেটির সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। যদি সে তার বৃত্তান্ত যা বলেছে, সেভাবে পদক্ষেপ নেয়, তবে বোঝা যাবে, সে কতটা সত্য বলছে। আবার এটাও বোঝা যাবে যে সে সত্যিই সব সামাজিক চাপ উপেক্ষা করে কিছু করতে পারবে কি না। বিষয়টা ভেবে দেখো। এটাও বোঝার আছে, আরেকটা মেয়ের জীবন ব্যাপারটার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ০১, ২০১০
Jahan
বাংলাদেশে বিবাহবিচ্ছেদ পর কত বছর একটি ছেলে সন্তান তার পিতা আসবে