ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিষয়টি পড়াচ্ছেন। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন। আপনার সঠিক পরিচয় না দিতে চাইলে অন্য কোনো নাম ব্যবহার করুন। —বি.স.
সমস্যা: আমি দীর্ঘদিন ধরে একটি মেয়েকে ভালোবাসি, মেয়েটিও আমাকে ভালোবাসে। আমাদের ভালোবাসার কথা মেয়ের মা-বাবা জানার পর তার মা আমার সঙ্গে খুব খারাপ আচরণ করেন। মেয়ের সঙ্গে কথা বললে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। এখন মেয়ের সঙ্গে আমার আর যোগাযোগ নেই। মেয়ে ঢাকার একটি কলেজে পড়ালেখা করে। এই ঈদে তার খোঁজ নিয়ে দেখলাম, সে বাড়িতে এসেছে। তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু তার মায়ের জন্য পারিনি। কিন্তু সে যে আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা।
মো. সাগর, চাঁদপুর।
পরামর্শ: তোমার বয়স কত এবং তুমি কী করছ, তা উল্লেখ করোনি। মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় তুমি খুব কষ্ট পাচ্ছ, তা বুঝতে পারছি। তবে প্রত্যেক অভিভাবকই আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেন তাঁদের কন্যাসন্তানটিকে একটি যোগ্য ছেলের কাছে বিয়ে দিতে। সে ক্ষেত্রে তোমার বর্তমান সামাজিক অবস্থান এবং অর্জনগুলোও তাঁরা বিবেচনায় রাখবেন—এটাই স্বাভাবিক। তাঁদের সন্তানটি যাকে পছন্দ করছে, তাকে অভিভাবকেরা পছন্দ না করারও অধিকার রাখেন, তাই নয় কি? তা ছাড়া মেয়েটি যদি প্রাপ্তবয়স্ক না হয় এবং অভিভাবকেরা তাকে তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না দেন, তাহলে তো কিছু করার নেই। তুমি এখন এই বাস্তবতাটুকু মেনে নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে নেওয়ার প্রতি মনোযোগী হলে ভালো হয়। একটি প্রেমের সম্পর্কে দুজনের দিক থেকেই যদি যথেষ্ট ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস ও আন্তরিকতা থাকে, তাহলে সেটিকে বাস্তবায়ন করা সহজতর হয়। মেয়েটি এখন ঢাকার একটি কলেজে পড়ালেখা করছে। তার অভিভাবকেরা নিশ্চয়ই চাইবেন সে ভালোভাবে লেখাপড়া করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক। তোমাদের সম্পর্কে যদি ওপরের উপাদানগুলো উপস্থিত থাকে, তাহলে তুমিও নিজেকে সুযোগ্য করে তোলার পর মেয়েটির অভিভাবকের কাছে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারবে। কাজেই আর সময় নষ্ট না করে তুমি নিজেকে সুযোগ্য করে তোলার উদ্যোগ নাও।
সমস্যা: আমার বয়স ১৯। আমি ছোটবেলা থেকেই কয়েকটি সমস্যায় ভুগছি। যেমন পাঁচ-দশ কিংবা দুই-তিন মিনিট পর কোনো কথা মনে রাখতে পারি না। এখনই শুনি আর দুই-তিন মিনিট পরই ভুলে যাই। আমি সাজিয়ে কথা বলতে পারি না। কারও কাছে কোনো ঘটনা বলতে গিয়ে উলটপালট করে ফেলি। আমার বয়স তখন প্রায় তিন-চার বছর। আমাদের ঘরের বেশ খানিকটা দূরে ছিল একটি পুকুর। একদিন আমি হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ ডোবায় পড়ে যাই। আশপাশের লোকজন আমাকে ডোবা থেকে তুলে আনল। ডোবার পানি খেয়ে অনেকক্ষণ বেহুঁশ ছিলাম। এখন মনে হচ্ছে ওপরের ঘটনার জন্য আমার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
আমার আরেকটি সমস্যা হলো, আমি ভীষণ লজ্জা পাই। যেমন, বাসায় মেহমান কিংবা অপরিচিত কেউ বেড়াতে এলে আমি নিজের রুমের ভেতরে থাকি। এটি বেশি হয় যখন বাসায় কোনো মেয়ে আসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ: তুমি তোমার সমস্যাটি নিয়ে বেশ বিব্রত বোধ করছ, বোঝা যাচ্ছে। তবে বিষয়টি নিয়ে তুমি অতিরিক্ত চিন্তা না করলে উপকৃত হবে। মনে হচ্ছে, ছোটবেলায় তুমি তোমার অর্জনগুলোর জন্য খুব বেশি প্রশংসা পাওনি। এ ছাড়া তোমাকে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করার জন্য বাড়ির লোকেরা উৎসাহিত করেছে কি না, সেটা ভেবে দেখো। তিন-চার বছর বয়সে ডোবায় পড়ে যাওয়ার ফলে তোমার মস্তিষ্কের কোনো অংশ আদৌ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য কোনো নিউরোলজিস্টকে দেখাতে পারো। যদি কোনো অসুবিধা পাওয়া না যায়, তাহলে বুঝতে হবে, বিষয়টি সম্পূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক। সে ক্ষেত্রে তুমি নিজেকে যেভাবে সাহায্য করতে পারো তা হচ্ছে, নিজেকে বলা, ‘এটা হতেই পারে, সবাই একইভাবে সবকিছু মনে রাখতে পারে না এবং গুছিয়ে কথা বলাটাই জীবনের সবকিছু নয়।’ কথাগুলো নিজেকে বলার সময় তুমি প্রথমে শরীর শিথিল করে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে যদি ধীরে ধীরে ছাড়তে পারো, তাহলে মানসিক চাপ কিছুটা কমবে বলে আশা করা যায়। এ ছাড়া উদ্যোগ নিয়ে অপরিচিত লোকের সঙ্গে পরিচিত হবে। শুধু তা-ই নয়, সেই সঙ্গে তাদের কুশলও জানতে চাইবে। দোকানে, বাজারে গিয়ে বাড়ির জন্য কেনাকাটা করবে। এগুলো করতে পারলে নিজেকে অনেক প্রশংসা করবে এবং আরও উৎসাহ দেবে। মেয়েদের যদি তোমার মতোই একটি মানুষ মনে করে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখতে পারো, তাহলে খুব ভালো হয়।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ২৫, ২০১০
Leave a Reply