খালি হাতে নয়, টুইজার দিয়ে ডাকটিকিট ধরতে হবে শেষ চিঠি কত দিন আগে লিখেছেন, মনে পড়ে কি! অনেক সংগ্রাহকও হয়তো মনে করতে পারছেন না, শেষবার কবে চিঠির খাম থেকে ডাকটিকিট তুলেছেন। তবু প্রতিটি শহর, নগর, বন্দরে ডাকটিকিট সংগ্রাহকদের আজও ব্যস্ত দিন কাটে।
১৮৪০ সালে প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশিত হয় ইংল্যান্ডে। ডাক মাসুল আদায়ের লক্ষ্যে টিকিটের জন্ম হলেও দিন কয়েকের মধ্যেই এই কাগুজে বস্তুটি সংগ্রহ অসংখ্য মানুষের শখে পরিণত হয়। অনেক রাজা-বাদশারও শখ হয়ে ওঠে ডাকটিকিট সংগ্রহ। তাই তো বলা হয়ে থাকে, ‘শখের রাজা, রাজার শখ’।
সংগ্রহের বিষয়
বিশ্বে এত এত ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়েছে যে যতই পয়সা থাকুক, কারও পক্ষেই সব সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। তাই সংগ্রাহককে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কোন ডাকটিকিটগুলো তার চাই। সাধারণত ডাকটিকিট সংগ্রহ করা হয় দেশভিত্তিক ও বিষয়ভিত্তিক। দেশভিত্তিক সংগ্রহের ক্ষেত্রে নিজ দেশের ডাকটিকিটকে অনেকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। একটি দেশের কোনো বিশেষ সময়ের ডাকটিকিটের মাধ্যমেও এ ধরনের সংগ্রহ গড়ে তোলা যায়।
বিষয়ভিত্তিক সংগ্রহের ক্ষেত্রে সংগ্রাহকের আগ্রহ ও ভালো লাগা নির্ভর করে। ফুল, পাখি, খেলাধুলা, ব্যক্তিত্ব—এ রকম অসংখ্য বিষয়ের মধ্য থেকে পছন্দের বিষয়টি বেছে নেওয়া যেতে পারে।
সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
একজন সংগ্রাহকের অ্যালবাম, টুইজার (চিমটা), মাউন্ট, ম্যাগনিফাইং গ্লাস—এ রকম অনেক কিছুরই প্রয়োজন হয়। সংগ্রহ করতে হয় সঠিক নিয়মে। সংরক্ষণ জ্ঞানের অভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে ডাকটিকিট।
খাম থেকে টিকিট তোলা
চিঠির খামের ওপর রঙিন টিকিট দেখে লোভ সামলানো কঠিন। টেনে তুলতে গিয়ে হয়তো কিছু অংশ খামের সঙ্গে লেগে গেল! এই ছেঁড়া ডাকটিকিটটির কোনো মূল্য নেই। খাম থেকে এভাবে টেনে না তুলে টিকিটসহ খামের সেই অংশটুকু কেটে নেওয়া উচিত। তারপর পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে কাগজ থেকে টিকিটটি আলাদা হয়ে যাবে। এবার পেছনের আঠা ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর কোনো চোষ কাগজ অথবা নিউজপ্রিন্ট কাগজের ওপর রেখে শুকাতে হবে। তারপর কোনো বইয়ের ভাঁজে রেখে টিকিটটি রেখে সোজা করতে হবে।
ডাকটিকিটের অ্যালবাম
ডাকটিকিট রাখার জন্য দুই ধরনের অ্যালবাম পাওয়া যায়। বইয়ের মতো বাঁধানো এবং লুজলিফ অর্থাৎ যার পাতাগুলো আলগা। বাঁধানো অ্যালবামে হিঞ্জ অথবা মাউন্টের সাহায্যে ডাকটিকিট লাগাতে হয়। ভুলেও অন্য কোনো আঠা দিয়ে ডাকটিকিট পেস্ট করা উচিত হবে না। সম্ভব হলে হিঞ্জ বাদ দিয়ে মাউন্ট ব্যবহার করাই ভালো।
বাঁধানো অ্যালবামের পাশাপাশি লুজলিফ অ্যালবামও পাওয়া যায়। এই অ্যালবামের পৃষ্ঠাগুলো আলাদা করা যায় এবং চাইলে নতুন পৃষ্ঠা যোগ করা যেতে পারে। এ ধরনের পৃষ্ঠা ডাকটিকিট প্রদর্শনীতে দেখানো হয়।
ডাকটিকিট রাখতে পাবেন স্টকবুকে। স্টকবুকে স্বচ্ছ প্লাস্টিক বা সেলোফেনের ফিতা লাগানো থাকে। এই ফিতার ভাঁজে ভাঁজে ডাকটিকিট সাজিয়ে রাখা যায় এবং সুবিধামতো নাড়াচাড়া করা যায়। স্টকবুকে রাখলে ডাকটিকিট নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
ডাকটিকিট ধরার জন্য বিশেষ চিমটা পাওয়া যায়। এগুলোকে স্ট্যাম্প টুইজার বলে। আঙুল দিয়ে ডাকটিকিট ধরলে আঙুলের ময়লা, ঘাম টিকিট নষ্ট করে ফেলতে পারে। এ ছাড়া টিকিটের চারপাশে পারফোরেশনের যে দাঁত থাকে, তা ভেঙে যেতে পারে। স্ট্যাম্প টুইজার ছাড়া অন্য কোনো চিমটা কখনোই ব্যবহার করা উচিত হবে না।
আর যদি খালি হাতে ধরতেই হয়, তাহলে হাত পরিষ্কার ও শুকনো থাকতে হবে।
হিঞ্জ বা মাউন্ট ব্যবহার
হিঞ্জ হলো এক ধরনের পাতলা কাগজ, যার একপাশে আঠা লাগানো থাকে। প্রতিটি প্রায় এক ইঞ্চি মাপে কাটা থাকে। হিঞ্জটি প্রথমে দুই ভাঁজ করে নিতে হয়, অর্ধেকটা হালকাভাবে ঠোঁটের সাহায্যে ভিজিয়ে ডাকটিকিটের পেছনে এবং বাকি অর্ধেকটা অ্যালবামের পৃষ্ঠায় লাগাতে হয়। ব্যবহূত ডাকটিকিটের ক্ষেত্রে সাধারণত হিঞ্জ ব্যবহার করা হয়।
মাউন্ট হলো রাসায়নিক দ্রব্যের তৈরি বিশেষ এক ধরনের খাপ, যা দুটি ভাঁজ করা থাকে। নিচের অংশটি ভারী ও শক্ত এবং ওপরের অংশ স্বচ্ছ সেলোফেন দিয়ে তৈরি। মাউন্টের নিচে আঠা লাগানো থাকে। এর ভাঁজে ডাকটিকিট রেখে অ্যালবামের যেকোনো জায়গায় খুব সহজেই লাগানো যায়।
কোথায় পাবেন ডাকটিকিট
বাংলাদেশের নতুন ইস্যু হওয়া ডাকটিকিট পাওয়া যায় ঢাকা জিপিওর ফিলাটেলিক ব্যুরোতে। গত দু-তিন বছরের ডাকটিকিট ছাড়াও অনেক সময় আরও আগের ডাকটিকিটও এখানে বিক্রি করতে দেখা যায়। যাঁরা ঢাকার বাইরে আছেন, তাঁরাও ডাকযোগে ঘরে বসেই পেতে পারেন বাংলাদেশের নতুন ডাকটিকিট।
এ জন্য আপনাকে জিপিওতে এসে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। ঢুঁ মারতে পারেন বিভিন্ন ডাকঘরে। তাদের কাছে অনেক সময় পুরোনো ইস্যুকৃত ডাকটিকিটের মজুদ থাকে।
বিদেশি ডাকটিকিটের ক্ষেত্রে বিদেশে অবস্থানরত বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের সাহায্য নিতে পারেন। এ ছাড়া আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি ডাকটিকিটের দোকান রয়েছে।
কয়েকটি দোকানের ঠিকানা
সালাম স্ট্যাম্প সেন্টার
৬৮ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ
ফার্মগেট, ঢাকা।
সুপ্রিম স্ট্যাম্প ইন্টারন্যাশনাল
(এ হাউস অব ফিলাটেলি)
রোজ ভিউ প্লাজা, পঞ্চম তলা
(কক্ষ নং-৫০৭)
১৮৫ এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুল বাজার, ঢাকা।
স্ট্যাম্প প্লাস
১/এ শান্তিবাগ, মালিবাগ মোড়,
ঢাকা।
ডাকটিকিট ও ডাকটিকিট সংগ্রহের যাবতীয় সরঞ্জাম পাওয়া যায় এসব দোকানে। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন স্টেশনারি কিংবা বইয়ের দোকানেও ডাকটিকিট বিক্রি করতে দেখা যায়।
ডাকটিকিট সংগ্রহের জন্য বয়সের কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই, যেকোনো বয়সেই শুরু করা যায়। তো আজ থেকেই শুরু হোক ছোটাছুটি ডাকটিকিটের পিছু।
নিজাম বিশ্বাস
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১০
Leave a Reply