নবদম্পতির জন্য উপহার সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই অনুষ্ঠান যেমনই হোক, বিয়েবাড়িতে যাওয়ার আগে প্রথমেই পরিকল্পনা করে নিতে হয়। নববিবাহিতদের এমন কিছু উপহার দেওয়া দরকার, যা তাঁদের নতুন সংসারে কাজে লাগবে। প্রথমে লক্ষ রাখতে হবে, উপহারটি যেন নান্দনিক হয়। বাজেটের সঙ্গে সংগতি রেখে শিল্পরুচির পরিচয় বহন করে। এ প্রসঙ্গে গার্হস্থ্য অর্থনীতি মহাবিদ্যালয়ের গৃহ ব্যবস্থাপনা ও গৃহায়ণ বিভাগের সাবেক অধ্যক্ষ ফিরোজা বেগম বলেন, ‘নতুন দম্পতিকে কী উপহার দেব, তা নির্ভর করে অনেকটাই সম্পর্কের ওপর। খুব কাছের আত্মীয়র জন্য আগে আমরা প্রথমেই সোনার গয়নার কথা ভাবতাম। এখন তার পরিবর্তন হয়েছে। তাই অন্য প্রয়োজনীয় উপহারের কথা ভাবতে হয়। কাছের মানুষ হলে সবাই মিলে টিভি, ফ্রিজ, খাট, আলমারি দেওয়া যেতে পারে। দূরের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব পাড়া-প্রতিবেশী হলে তৈজসপত্র, ঘর সাজানোর সামগ্রী দেওয়া হয়। বন্ধুদের জন্য বইয়ের সেটও দেওয়া যেতে পারে। লক্ষ রাখতে হবে, নবদম্পতির পড়ার অভ্যাস আছে কি না। সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য একটা আলাদা বাজেট রাখতে হয় বলে পরিকল্পনা আগে থেকেই থাকা চাই।’ ফিরোজা বেগমের মতে, আজকাল উপহার হিসেবে টাকা দেওয়ার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। ব্যস্ত জীবনে সময় করে রুচি অনুযায়ী পছন্দের উপহার খুঁজে পেতে অনেক সময় লাগে। তাই টাকা বা গিফট ভাউচার দেওয়া অনেক সুবিধাজনক। অনেকেই আবার নতুন দম্পতিকে ভ্রমণ টিকিট দেন। এটা অনেক সময়োপযোগী একটা চিন্তা।
আড়ংয়ের বিপণন কর্মকর্তা রাহাত হোসাইন বলেন, প্রায়ই অনেককে একই ধরনের উপহার দিতে দেখা যায়। তাই ভেবেচিন্তে উপহার দেওয়া ভালো, যাতে কারও সঙ্গে মিলে না যায়। যাঁদের ব্যস্ততা বেশি, তাঁরা গিফট ভাউচারটা নিতে পারেন। উপহার দেওয়ার জন্য বেছে নিতে পারেন গয়নার বক্স, নকশিকাঁথা, আয়না, কুশনকভার, বেডকভার, বর্ণিল পর্দা, কাঠের কারুকাজ করা আয়না, বিভিন্ন ধরনের ও মাপের কার্পেট, রুচিটা কেমন হবে, তার ওপরই উপহার। তবে সবকিছুর সঙ্গেই থাকে শুভ কামনার প্রকাশ ও ছোঁয়া।
যাত্রার ডিজাইনার সমন্বয়কারী কামাল আহমেদ মারুফ বলেন, ‘প্রথমেই আসে যাঁদের উপহারটি দেব, তাঁদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেমন সে ব্যাপারটি। তারপর ভাবতে হয় বাজেট নিয়ে এবং নতুন সংসারটা কি একক, না যৌথ পরিবারের অংশ হবে। একক সংসারে আমরা সাধ্যের মধ্যে ল্যাম্পস্ট্যান্ড, ল্যাম্পশেড, পর্দার সেট, টেবিল, ডেকোরেটেড সেট, বেডকভার সেট, শতরঞ্জি, মগ সেট, ট্রে সেট, নকশিকাঁথা, ডেকোরেশন পিস, দেয়াল ঘড়ি বা টেবিল ঘড়ি, কিচেন ন্যাপকিন হোল্ডার, সিডি স্ট্যান্ড, রুম ডিভাইডার প্রভৃতি দেওয়া যেতে পারে। আমার মনে হয়, এগুলো প্রয়োজনীয়ও হবে আবার শৈল্পিকতার ছোঁয়াও পাওয়া যাবে। অন্যদিকে বিয়ের পর যে দম্পতি যৌথ পরিবারে থাকবেন, তাঁদের টাকা বা গিফট ভাউচার দেওয়া বেশি ভালো হবে।
যে উপহারগুলোর কথা বললাম, সেগুলো আপনি ৩০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন।’ জাকিয়া শওকত চাকরি করছেন একটা বেসরকারি ব্যাংকে। তিনি বলেন, ‘আমাকে মাঝেমধ্যেই বিয়ের দাওয়াতে যেতে হয়। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী সব মিলিয়ে মাসে একটা দাওয়াত থাকেই। উপহার হিসেবে আমার পছন্দ ওয়াল ডেকোরেশন পিস, শোপিস, গিফট ভাউচার বা টাকা। আজ যাঁদের জন্য উপহার কিনব, তাঁরা দুজনই আমার বন্ধু। বিয়ের পরই তাঁরা আবার চলে যাচ্ছেন বিদেশে পড়তে। তাই প্রথমেই মাথায় রাখতে হচ্ছে, উপহারটি যেন সহজেই বহনযোগ্য হয়। এ কারণেই আজ নিচ্ছি ২০০০ টাকার একটি গিফট ভাউচার। তাঁরা তাঁদের প্রয়োজনমতো কিছু নিয়ে নিতে পারবেন।
প্রয়োজনীয় কিছু উপহার
টি সেট, টোস্টার, জুসার, ওভেন, ননস্টিক ফ্রাই প্যান, রাইস কুকার, ব্লেন্ডার, বিটার মেশিন, কিমা মেশিন, টেবিল ম্যাট, টেবিল কভার, ডিনার সেট, ওয়াশিং মেশিন, থার্মোফ্লাস্ক, ইলেকট্রিক কেটলি, স্পুন সেট, ইস্ত্রি, বেডকভার, বেড সাইট কার্পেট, অ্যালবাম, শোপিস, ওয়াল পেইন্টিংস, ডেকোরেটেড ওয়াল আয়না, জুয়েলারি বক্স, ঘড়ি প্রভৃতি।
সৈয়দা আখতার জাহান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১০
Leave a Reply