ফুচকা-চটপটি কে না খায়! স্কুল শেষ করে পথের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ফুচকা মামার চটপটি আর ফুচকা না খেয়ে বাসায় রওনা হওয়া যায় নাকি! এই ফুচকা-চটপটিই যদি আরেকটু সুন্দর করে সাজিয়ে-গুছিয়ে, সুস্বাদু করে উপস্থাপন করা হয়, কে না খেতে চাইবে। আর তাই ধাবায় সারা দিনই লেগে আছে মানুষের ভিড়। দই-ফুচকা, পাপড়ি চাট, কাবাব আর বিভিন্ন গ্রেভি কাবাবের লোভে ভোজনরসিক পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী, দেশি-বিদেশি মানুষের কাছে জনপ্রিয় এক নাম ধাবা।
২০০১ চালে চট্টগ্রামের পুলিশ লাইনে যাত্রা শুরু করা এই রেস্টুরেন্ট বর্তমানে তিনটি শাখায় পরিচালিত হচ্ছে। বাকি দুটি হলো ঢাকার বনানী ও ধানমন্ডির রাইফেলস স্কয়ারে। এর মধ্যে বর্তমানে বনানীর ১২ নম্বর রোডে প্রেসক্রিপশন পয়েন্টের কাছের শাখাটিই সবচেয়ে বড়। দ্য রোড সাইড এক্সপেরিয়েন্স—এই নীতি নিয়ে পরিচালিত ধাবা রেস্টুরেন্ট সত্যিই রাস্তার পাশে এক অনন্য রেস্টুরেন্ট।
ফুচকা দিয়েই ধাবার যাত্রা। ফুচকা বলতে দই-ফুচকা। এখনো ধাবায় যারা আসে, তাদের অধিকাংশই প্রথমে দই-ফুচকার স্বাদ নেয়। দই-ফুচকার টানে রাইফেলস স্কয়ারের শাখায় শিক্ষার্থীদের সারা দিন ভিড় লেগে থাকে। ভারতীয় ঘরানার এই পদটির মতোই জনপ্রিয় পানি পুরি, গরম ফুচকা, দই পাপড়ি, পাপড়ি চাট, চুড়মুড়, ভেল পুরি, আলু চাট, আলু টিক্কা, দই বড়া ইত্যাদি। এই পদগুলোর দামও বেশি নয়, ১০০ টাকার মধ্যেই অনায়াসে দুজন এসব চেখে দেখতে পারবে।
কাবাবজাতীয় পদের মধ্যে আছে ধাবা স্পেশাল কাবাব, চিকেন টিক্কা কাবাব, চিকেন অমেরশ্বরি কাবাব, চিকেন বটি কাবাব, রেশমি কাবাব, আফগান কাবাব, বিফ বটি কাবাব, খিরি কাবাব, মাটন বটি কাবাব, পনির টিক্কা কাবাব ও চিকেন সাসলিক। পাঞ্জাবি ধাঁচের এই পদগুলোর সঙ্গে আপনি নিতে পারেন যেকোনো নান, রুটি বা পরোটা। সাধারণ এই কাবাবের পাশাপাশি আছে তাওয়ায় রান্না করা চিকেন, মাটন ও বিফ তাওয়া কাবাব। প্লেন নানের পাশাপাশি রয়েছে কিছু বিশেষ স্বাদের নান ও রুটি। যেমন—ধাবা স্পেশাল নান, প্লেন নান, বাটার নান, গারলিক নান, শাহি নান, কিমা নান, পনির নান, মাসালা কুলচা, তন্দুরি পরোটা ইত্যাদি। নাম শুনেই বোঝা যায়, কোন নানে কী কী মেশানো হয়েছে। যারা চর্বিজাতীয় খাবার কম পছন্দ করে, তাদের জন্য চিকেন কাবাব ও গারলিক নান হতে পারে উৎকৃষ্ট সমন্বয়। হালকা তেলে কম মসলার কাবাব ও ধনেপাতা, আদা কুচি মেশানো গারলিক নান আপনাকে আবারও ডেকে আনবে রেস্টুরেন্টটিতে। দু-তিনজন কাবাব ও নান খেতে খরচ হবে মাত্র ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
অনেকে আবার কাবাবের চেয়ে ঝোলটাই একটু বেশি পছন্দ করে। আর সেটা যদি হয় ঘন ঝোল, তাহলে তো কথাই নেই। ধাবায় রয়েছে গ্রেভি পদের বিশাল সমাহার। চিকেন টিক্কা মাসালা, রেশমি মাসালা, দোপেঁয়াজা, বটি মাসালা, বিফ পাঞ্জাবি, মাটন কোরমা, গ্রিল মাসালা, ব্রেইন মাসালা, শাক পনির, পনির বাটার মাসালা, মাটন পনির ইত্যাদি পদে আছে বিভিন্ন মসলার মিশ্রণ। কাবাবের মতো এই পদগুলোও নান ও তন্দুরি রুটি দিয়ে খুব মজা করে খেতে পারবেন। গ্রেভি পদগুলোর খরচ কাবাবের মতোই হাতের নাগালে।
অনেকে আবার নিরামিষজাতীয় খাবার খেতে পছন্দ করেন। নিরামিষেও ধাবা এনেছে বৈচিত্র্য। ধাবার জনপ্রিয় একটি নিরামিষ পদ হলো ডাল মাখানি। নান দিয়ে খাওয়ার জন্য এটি একটি চমৎকার পদ। এ ছাড়া আছে ভেজিটেবল দোপেঁয়াজা, মিক্সড ভেজিটেবল পনির, ভেজিটেবল ঝাল ফ্রাজি ও ভেজিটেবল মালাই কোপ্তা।
নান-কাবাব-গ্রেভি ছাড়া ধাবার আরেকটি উল্লেখযোগ্য পদ বিরিয়ানি। মাটন, চিকেন ও দম—এই তিন ধরনের বিরিয়ানি পাওয়া যায়। মাটন বিরিয়ানির মূল্য ১৩৫ ও চিকেন বিরিয়ানি ১২৫ টাকা। সিল করা পাত্রে রান্না করা দম বিরিয়ানির মূল্য ২০০ টাকা। বিরিয়ানির মতো সুস্বাদু আরেকটি পদ হলো রোল। হরেক রকম রোল আছে ধাবায়। চিকেন রোল, বিফ রোল, এগ রোল, ডাবল চিকেন ডাবল এগ রোল, ডাবল বিফ, ডাবল এগ রোল ইত্যাদি।
ফুচকা, কাবাব, গ্রেভি আর বিরিয়ানির পর হালকা আইসক্রিম শরবত হলে মন্দ হয় না। ধাবায় ডেজার্ট হিসেবে আছে নানা ধরনের শরবত, মিল্কশেক, লাচ্ছি, কুলফি, আইসক্রিম, জিরা পানি, চা, কফি ইত্যাদি। নতুন ধরনের ডেজার্ট খেতে চাইলে এখানকার কুলফি টেস্ট করতে পারেন। এ ছাড়া মিল্কশেক ও লাচ্ছিও বেশ সুস্বাদু।
ধাবার হিসাব পরিচালক কমল বিশ্বাস বলেন, বনানীর শাখায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় শিগগিরই বুফে চালু হচ্ছে। ভারতীয় পদের সঙ্গে আরও থাকবে থাই ও চাইনিজ পদ। দামটাও হবে তুলনামূলক কম।
দই-ফুচকা
উপকরণ: ডাবলি (চটপটির ডাল), ফুচকা, দই, চাটনি, জিরা, বিট লবণ, ধনে গুঁড়া, কালো মরিচ, সাদা লবণ, তেঁতুল, সালাদ (শসা ও টমেটো)।
পদ্ধতি: প্রথমে চটপটির মতো করে ডাবলি বানাতে হবে। তারপর বানাতে হবে দই মিক্স। এ জন্য দইয়ে জিরা, গোলমরিচ ও চিনি মিশিয়ে নিতে হবে। নেড়ে নেড়ে তরল দই মিক্স তৈরি করতে হবে। দই মিক্স ও ডাবলি যত সুস্বাদু হবে, ততই মজার হবে আপনার দই-ফুচকা।
সবশেষে গরম ফুচকায় ডাবলি ভরে দিতে হবে। তারপর ডাবলির ওপর মসলা মিশিয়ে চাটনি, দই মিক্স, চানাচুর ও সালাদ দিতে হবে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১০
Leave a Reply